ক্যারিয়ার গোধূলীতেও তেজোদীপ্ত মাশরাফি

ক্যারিয়ারে চলছে পড়ন্ত বেলা। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার মনের সূর্য এখনও মধ্যগগনে। প্রতিজ্ঞার সেই তেজই যেন ঠিকরে বেরিয়ে এলো ২২ গজে। তাতে পুড়ে অঙ্গার ৫ ব্যাটসম্যান, সঙ্গে অদৃশ্য অনেক প্রতিপক্ষও। ৩৭ বছর ২ মাস বয়স পেরিয়ে, ১৪ বছরে ১৬৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট। মাশরাফি আরেকবার দেখালেন, বেলা শেষেও তার আলো ফুরোবার নয়!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2020, 05:40 AM
Updated : 15 Dec 2020, 07:43 AM

এই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে তার খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার শেষ ছিল না। গত জুন-জুলাইয়ে কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন তিন সপ্তাহের বেশি সময়। পরে সেটির ধকল ও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কাটাতে চলে গেছে আরও মাস তিনেক। সামলে নিয়ে যখন ফিটনেস ফিরে পাওয়ার লড়াই শুরু করলেন, আততায়ী হয়ে ফিরে এলো পুরোনো শত্রু। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট তাকে বাধ্য করল মাঠের বাইরে থাকতে। এই টুর্নামেন্টের প্লেয়ার্স ড্রাফটেও তাই ছিল না তার নাম।

চোটকে আরেক দফা হারিয়ে, ওজন ১০ কেজি কমিয়ে বোলিংয়ে ফিরলেন গত ১ ডিসেম্বর। দলগুলির কাড়াকাড়ি পড়ে গেল তাকে নিয়ে। পাঁচ দলের চারটিই আগ্রহ জানাল তাকে দলে নিতে। বিসিবির ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে, লটারিতে তার ঠাঁই হলো জেমকন খুলনায়। গত মঙ্গলবার যখন প্রথম ম্যাচ খেলতে নামলেন, টুর্নামেন্ট তখন শেষ ভাগে।

দীর্ঘ বিরতির পর ফেরা, খুলনার তারার মেলায় নিজের ঔজ্জ্বল্য আলাদা করে ফুটিয়ে তোলা, সংশয়ের অসংখ্য কাঁটা মাড়ানো, সবই ছিল তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। এক দিন ৪ ওভার, আরেক দিন ৬ ওভার, অনুশীলনে মাত্র ওই দুটি বোলিং সেশনের ভরসায় নেমেছিলেন ম্যাচ খেলতে। তবে বড় পুঁজি ছিল দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা। প্রথম ম্যাচ থেকেই পারফরম্যান্সে দেখা গেল সেসবের উদ্ভাসিত প্রকাশ।

প্রায় ৯ মাস পর ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচে ৪ ওভারে ২৮ রানে ১ উইকেট, পরের ম্যাচে ৪ ওভারে ২৬ রানে ১ উইকেট। বোলিংয়ে মরচে পড়েনি, বুঝিয়ে দিলেন। মানিয়ে নিতে সময় খুব লাগে না, দেখিয়ে দিলেন।

তবে দেখানোর কিছু বাকি ছিল। বিস্ময় আরও জমা ছিল।

টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেওয়া সহজ নয় কখনোই। ৪ ওভারই তো মাত্র বোলিং! স্কিল লাগে, পরিস্থিতি লাগে, ভাগ্য লাগে, পক্ষে আসতে হয় অনেক কিছু। বাংলাদেশের উইকেটে একজন পেসারের জন্য কাজটি আরও কঠিন। এই সময়ের মাশরাফি ওই সবকিছুকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে বহু কাঙ্ক্ষিত পঞ্চ সুধা পান করতে পারবেন, কজন ভেবেছিলেন!

মাশরাফি এখানেই অনন্য। তাকে নিয়ে ভাবনা যখন শেষ হওয়ার উপক্রম, তিনি নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করেন। তার সবকিছু দেখা হয়ে গেছে যখন মনে করা হয়, তিনি নবরূপে নিজেকে মেলে ধরেন।

এবারের এই ৫ উইকেট তার জন্য ভীষণ জরুরি ছিল আরেকটি দিক থেকেও। ক্যারিয়ারের যে পর্যায়ে তিনি আছেন, এই টুর্নামেন্টে তার প্রয়োজন ছিল বিশেষ কিছু করা। গত মার্চে বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে তিনি বিদায় জানিয়েছেন ওয়ানডের নেতৃত্বকে। আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সম্ভাব্য সিরিজে তার চ্যালেঞ্জ দলে জায়গা ধরে রাখার। এজন্যই এই আসরে তার প্রয়োজন ছিল এমন কিছু করার, যেন কোচ-নির্বাচকদের ভাবনার দুয়ার জোর কড়া নাড়তে পারেন, যেন তাকে তারা উপেক্ষা করতে না পারেন।

কিছু তো বটেই, মাশরাফি করে দেখালেন দারুণ কিছু!