তামিমদের বিদায় করে ফাইনালের লড়াইয়ে মুশফিকরা

পাওয়ার প্লেতে ঢাকার রান ২৪, বরিশালের ৩৩। ১০ ওভার শেষে ঢাকা ৫৪, বরিশাল ৫১। ১৪ ওভার শেষে ঢাকা ৪ উইকেটে ৮৪, বরিশাল ৩ উইকেটে ৮৭। তখনও পর্যন্ত যেন ‘কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’ কিন্তু দুই দলের পথ দুদিকে বেঁকে গেল ইনিংসের শেষ ধাপে। জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে গেল ঢাকা। ছিটকে গেল বরিশাল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2020, 08:51 AM
Updated : 14 Dec 2020, 11:36 AM

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের এলিমিনেটর ম্যাচে ফরচুন বরিশালকে ৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে রইল বেক্সিমকো ঢাকা।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুরুর বিপর্যয়ের পর ঢাকাকে উদ্ধার করে ইয়াসির আলি চৌধুরির ফিফটি। ২০ ওভারে পায় তারা ১৫০ রানের পুঁজি। আফিফ হোসেনের ঝড়ো ফিফটির পরও বরিশাল থমকে যায় ১৪১ রানে।

চলতি আসরে বেশ কবারই ঢাকাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করা ইয়াসির এবার খেলেন ৪৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস। ম্যাচের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মুশফিকের ৩০ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটিও।

তবে মুশফিক ম্যাচে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ফিল্ডিংয়ের সময় তার আচরণ দিয়েও। কয়েকবার মাঠে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে তাকে। দুইবার সতীর্থ নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তুলতেও উদ্যত হন তিনি।

ম্যাচের শুরুটা বরিশালের ছিল দারুণ। টস জিতে বোলিংয়ে নেমে তারা চেপে ধরে ঢাকাকে। তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারে দেন ২ রান। পরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লফটেড শটে বাউন্ডারির পর স্লগ করতে গিয়ে উইকেট হারান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবার করেন ১১ বলে ৫।

তিনে নামা আল আমিন শূন্য রানে বিদায় নেন তাসকিনের বাইরের বল তাড়া করে। সোহরাওয়ার্দী শুভকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শেষ হয় সাব্বির রহমানের অস্বস্তিময় ইনিংস (১৪ বলে ৮)।

পাওয়ার প্লে শেষে ঢাকার রান ছিল ৩ উইকেটে ২৪।

ঢাকার বিপদ আরও ঘনীভূত হতে পারত একটু পর। মিরাজের বল ওয়াইড লং অফে তুলে দেন মুশফিক, হাত ছুঁইয়েও তালুবন্দী করতে পারেননি সুমন খান।

১৪ রানে জীবন পেয়ে মুশফিক বাড়ান রানের গতি। ইয়াসির আলি তাকে দিয়ে যান সঙ্গ।

অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই উইকেট বিলিয়ে আসেন মুশফিক। কামরুল ইসলাম রাব্বিকে স্কুপ করে বাউন্ডারি মারার পরের বলেই দৃষ্টিকটু স্লগ শটে ধরা পড়েন কামরুলের হাতেই।

মুশফিকের বিদায়েও কমেনি ঢাকার রানের ধারা। কামরুলকে দারুণ শটে ছক্কা মারেন ইয়াসির, ওই ওভারেই আকবর আলির ব্যাট থেকে আসে ছক্কা ও চার।

৯ বলে ২১ রানের দারুণ ক্যামিও খেলে আকবর বিদায় নেওয়ার পর রান বাড়ানোর দায়িত্ব নেন ইয়াসির। এক পর্যায়ে ৩০ বলে ২৮ রান ছিল তার। শেষ দিকে পরপর দুই বলে ছক্কা-চার মারেন সুমন খানকে, তাসকিনকে টানা দুটি চার।

ইয়াসিন-আকবরদের সৌজন্যে শেষ ৬ ওভারে ঢাকা তুলতে পারে ৬৬।

রান তাড়ার শুরুটা বরিশালের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। ইনিংসের প্রথম ওভারে তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে আসে দুটি বাউন্ডারি। রুবেল হোসেনকে ফ্লিক শটে বাউন্ডারির পর সাইফ হাসান টানা দুটি চার মারেন শফিকুল ইসলামকে। এরপরই তাদের পথচ্যুতি।

শফিকুলের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন সাইফ। ছন্দ না পেয়ে হাঁসফাঁস করে পারভেজ হোসেন ইমন রবিউল ইসলাম রবিকে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড ১১ বলে ২ রান করে।

দলকে উদ্ধার করার বদলে তামিম ফিরে যান বিপদ আরও বাড়িয়ে। দৃষ্টিকটু রকমের বাজে ব্যাটিংয়ে বরিশাল অধিনায়কের প্রাপ্তি ২৮ বলে ২২।

বরিশালের স্তিমিত আশা জাগিয়ে তোলেন আফিফ। শুরু করেন তিনি উইকেটে যাওয়ার এক বল পরই দারুণ টাইমিংয়ে রবিকে ছক্কা মেরে। পরে নাসুম আহমেদের এক ওভারে মারেন দুটি ছক্কা।

কিন্তু আরেক পাশে সঙ্গ দেওয়ার মতোও তো কাউকে থাকতে হবে! তৌহিদ হৃদয় (১৬ বলে ১২) ও সোহরাওয়ার্দী শুভকে পরপর দুই বলে ফেরান আল আমিন।

বাড়তে থাকা রানের চাপের বলি হয়ে এক পর্যায়ে বিদায় নেন আফিফও। টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে চার ছক্কায় তার রান ৩৫ বলে ৫৫।

মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ৮ বলে ১৫ ও মিরাজের ১০ বলে ১৫ রানের দুটি ইনিংস ব্যবধান কমায় একটু। ঢাকার তাতে আপত্তির কোনো কারণ নেই। জয়ই তো এখানে শেষ কথা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৫০/৮ (নাঈম ৫, সাব্বির ৮, আল আমিন ০, মুশফিক ৪৩, ইয়াসির ৫৪, আকবর ২১, মুক্তার ৬*, রবি ৫, নাসুম ১; তাসকিন ৪-০-২১-১, মিরাজ ৪-০-২৩-২, সুমন ৪-০-৩৩-০, সোহরাওয়ার্দী ৪-০-৩২-১, কামরুল ৪-০-৪০-২)।

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৪১/৯ (তামিম ২২, সাইফ ১২, পারভেজ ২, আফিফ ৫৫, হৃদয় ১২, সোহরাওয়ার্দী ০, অঙ্কন ১৫, মিরাজ ১৫, সুমন ৫, তাসকিন ০*; নাসুম ২-০-২৫-০, রুবেল ৪-০-২২-২, শফিকুল ৪-০-৩৯-৩, রবি ৪-০-১৫-১, আল আমিন ৪-০-২২-২, মুক্তার ২-০-১৮-৩)।

ফল: বেক্সিমকো ঢাকা ৯ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ইয়াসির আলি চৌধুরি।