বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের জয় ২ রানে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার আফিফ হোসেন ও তৌহিদ হৃদয়ের বিধ্বংসী ব্যাটিং বরিশালকে এনে দেয় ১৯৩ রানের পুঁজি। শেষ ওভারে ফয়সালা হওয়া ম্যাচে ঢাকা যেতে পারে ১৯১ পর্যন্ত।
৮ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৪ বলে ১০৫ রান করেন নাঈম।
দিনের প্রথম ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী হেরে যাওয়ায় বরিশালের সামনে সমীকরণ ছিল সরল, জিতলেই নিশ্চিত শীর্ষ চার। এই সমীকরণই হয়ত তাতিয়ে দিল বরিশালের ব্যাটসম্যানদের। তিন ব্যাটসম্যান পেলেন আসরের প্রথম ফিফটির দেখা। ওপেনিংয়ে সাইফ হাসান ৪৩ বলে ৫০ রানের ইনিংসে গড়ে দিলেন ভিত। ১২ রানে জীবন পেয়ে আফিফ হোসেন ৫ ছক্কায় করেন ২৫ বলে ৫০।
চতুর্থ উইকেটে ব্যাটিং তাণ্ডবে হৃদয় ও আফিফ গড়েন ৩৮ বলে ৯১ রানের জুটি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালকে ভালো শুরু এনে দেন সাইফ ও তামিম ইকবাল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা তোলেন ৫০ রান। তামিম স্ট্রাইক পান মাত্র ১০ বল, রান বাড়ানোর কাজটি করেন সাইফ।
৫৯ রানের জুটির পর তামিম উইকেট হারান আগ্রাসী হতে গিয়ে। অনিয়মিত স্পিনার আল আমিনকে চমৎকার টাইমিংয়ে বাউন্ডারি মারার পরের বলে উড়িয়ে মেরে বরিশাল অধিনায়ক ক্যাচ দেন লং অফে (১৭ বলে ১৯)।
তিনে নেমে পারভেজ হোসেন ইমন পারেননি রানের গতিতে দম দিতে। রবিউল ইসলাম রবির এক ওভারে ছক্কা-চার মেরেছেন বটে। তবে দেশের দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান মুক্তার আলিকে উইকেট উপহার দেন ১৩ বলে ১৩ রান করে।
আফিফ উইকেটে যাওয়ার পরপর সেই মুক্তারকেই দারুণ এক ছক্কা মারেন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে। জুটি ভাঙতে রুবেল হোসেনকে বোলিংয়ে আনেন মুশফিকুর রহিম। কাজে লেগে যায় তা। ফিফটি ছোঁয়ার পর সাইফ জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন মুশফিকের হাতেই।
পরের ওভারেই বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলামের বলে আফিফের সহজ ক্যাচ ছক্কা বানিয়ে দেন রবি। আফিফ সেটির খেসারত বুঝিয়ে দেন কড়ায়-গণ্ডায়। হৃদয় জ্বলে ওঠেন দারুণ ভাবে।
দুজনের খুনে ব্যাটিংয়ে শেষ ৬ ওভারে বরিশাল তোলে ৮৯ রান! প্রতি ওভারেই ছিল ছক্কা। ১৯তম ওভারে মুক্তারের ওভারে দুজন মারেন ৩ ছক্কা। শেষ ওভারে দুজনই পূর্ণ করেন পঞ্চাশ। দল পৌঁছে যায় বড় স্কোরের ঠিকানায়।
পাওয়ার প্লের পর ঢাকার রাশ টেনে ধরেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা বাঁ হাতি স্পিনার প্রথম বলেই ফেরান সাব্বিরকে (১১ বলে ১৯)।
নিজের পরের ওভারে সোহরাওয়ার্দী বিদায় করে দেন মুশফিকুর রহিম ও আল আমিনকে। তিন ধাক্কায় ঢাকার রানের গতি যায় একটু কমে।
অসুস্থতার কারণে তামিম বাইরে চলে যাওয়ায় তার জায়গায় নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজের ওভারে নাঈম ও ইয়াসির আলির দুটি ছক্কায় আবার গতি পায় ঢাকার রান তাড়া। এরপরই জীবন পান নাঈম। কামরুল ইসলাম রাব্বির বলে তার সহজ ক্যাচ ছাড়েন পারভেজ। ওই শটেই নাঈমের ফিফটি হয় ৪৩ বলে।
জীবন পেয়ে ফিফটির পর নাঈম হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। কামরুলের এক ওভারে মারেন তিন ছক্কা, তাসকিনের ওভারে ছক্কা-চার। ফিফটি থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান কেবল ১৭ বলেই!
নাঈমের ৬০ বলের সেঞ্চুরির সঙ্গে ইয়াসিরও খেলছিলেন দুর্দান্ত। তাতে ঢাকার জয় একসময় মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৩ রান, তখনও উইকেটে নাঈম ও ইয়াসির।
শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৭ রান। কামরুলের করা ওভারের প্রথম বলটি ওয়াইড হলেও বাই রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে যান ইয়াসির (২৮ বলে ৪১)।
এক বল পর নতুন ব্যাটসম্যান মুক্তার ছক্কা মেরে আবার জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। পরের বলে মুক্তারও আউট হয়ে যান। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে আকবর ব্যাট ছোঁয়াতে না পারায় নিশ্চিত হয় বরিশালের জয়। শেষ বলে আকবর আলির ছক্কায় ব্যবধান নেমে আসে ২ রানে।
সোমবার এই দুই দলই আবার মুখোমুখি হবে এলিমিনেটর ম্যাচে। একই দিনে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ফাইনালে ওঠার ম্যাচে লড়বে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও জেমকন খুলনা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৯৩/৩ (সাইফ ৫০, তামিম ১৯, পারভেজ ১৩, আফিফ ৫০*, হৃদয় ৫১*; রুবেল ৪-০-২৮-১, রবি ৪-০-৪০-০, নাসুম ৩-০-১৪-০, শফিকুল ৪-০-৫১-০, আল আমিন ১-০-৫-১, মুক্তার ৪-০-৪৮-১)।
বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৯১/৬ (নাঈম ১০৫, সাব্বির ১৯, মুশফিক ৫, আল আমিন ০, ইয়াসির ৪১, আকবর ৯*, মুক্তার ৬, রবি ০* ; তাসকিন ৪-০-৪৮-০, মিরাজ ৪-১-৩৩-০, সুমন ৩-০-৪১-০, সোহরাওয়ার্দী ৩-০-১৩-৩, আফিফ ২-০-১২-০, কামরুল ৩-০-৪১-১)
ফল: ফরচুন বরিশাল ২ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা মাচ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ।