৪৭ বছরের খরা কাটিয়ে উইন্ডিজ দলে জশুয়া

জশুয়া দা সিলভাকে প্রায়ই শুনতে হয়, “তুমি কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের?” সেই জশুয়াকে এবার সত্যিকারের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবেই চিনে নেবে ক্রিকেট বিশ্ব। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটন টেস্টে শুক্রবার টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন তিনি। ২২ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যানের সৌজন্যেই খুলে গেছে ৪৭ বছর বদ্ধ থাকা এক দুয়ার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2020, 05:09 AM
Updated : 11 Dec 2020, 05:09 AM

ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বলে জশুয়া নিয়ে সংশয়ের কারণ তার গায়ের রঙ। শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার যে এই দলে বিরল!

কতটা বিরল, একটি তথ্য থেকেই বোঝা যাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সবশেষ কোনো শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন ব্রেন্ডন ন্যাশ। ২১ টেস্টের ক্যারিয়ারের সবশেষটি তিনি খেলেছেন ২০১১ সালে। তবে ন্যাশের জন্ম, বেড়ে ওঠা ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এগিয়ে চলা, সবই ছিল অস্ট্রেলিয়ায়। জশুয়ার জন্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজেই।

ক্যারিবিয়ানে জন্ম নেওয়া কোনো শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট খেলছেন জশুয়ার আগে সেই ১৯৭৩ সালের পর! সাবেক ব্যাটসম্যান জেফ গ্রিনিজ তার ৫ টেস্টের ক্যারিয়ারের শেষটি খেলেছিলেন সেবছর।

ত্রিনিদাদের জশুয়ার পরিবারের শেকড় পর্তুগালে। ফুটবল তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার মইজোস হেনরিকসের শহর মাদেইরা তাদের আঁতুড় ঘর। জশুয়ার মায়র জন্ম কানাডায়, বাবার জন্ম ত্রিনিদাদে।

ছেলেবেলায় ফুটবল-ক্রিকেট, দুটিই চুটিয়ে খেলতে জশুয়া। ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নেন ১৬ বছর বয়সে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে জায়গা করে নেন ত্রিনিদাদ দলে।

জশুয়া দা সিলভা। ছবি : জশুয়ার টুইটার।

২০১৭ সালে কাইরন পোলার্ড স্কলারশিপ স্কিমের আওতায় তিনি ক্লাব ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। গোটা মৌসুমে দারুণ খেলেন, গড় ছিল ষাটের বেশি। ওই সময় তার গাঙের রঙ নিয়ে মজার অভিজ্ঞতার কথা তিনি কয়েক মাস আগে শুনিয়েছেন ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের পডকাস্টে।

“ ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর, ক্লাবের ওরা বেশ চমকে গিয়েছিল। সবাই চলছিল, ‘ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার শোনার পর তোমার মতো কাউকে প্রত্যাশা করিনি।’ বেশ মজার ছিল ব্যাপারটা, আমি স্রেফ হেসেছি। আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হতো, ‘তুমি কি সত্যিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের?”

“ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে অবশ্য এরকম কোনো অভিজ্ঞতা বা কোনো সমস্যা হয়নি। আলাদা কিছু কখনোই মনে হয়, স্রেফ শেতাঙ্গ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবেই দেখেছে সবাই।”

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার পথচলা খুব মসৃণ ছিল না। ফিটনেস একসময় ছিল তার বড় সমস্যা। পরে প্রায় ১৪ কেজি ওজন কমান। ত্রিনিদাদ দলে জায়গা পাওয়া তবু সহজ হয়নি, দিনেশ রামদিনের মতো অভিজ্ঞ একজন যে ছিলেন!

তবে গত মৌসুম থেকেই এগিয়ে গেছেন তরতরিয়ে। ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির আসরে পঞ্চাশের বেশি গড়ে ৫০৭ রান করে রামদিনের জায়গা নিজের করে নেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও শুরুটা হয়েছে দারুণ। ১০ ম্যাচে গড় ৪১.৩৭। এসব পারফরম্যান্সেই জায়গা পেয়ে যান গত জুনে ইংল্যান্ড সফরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে।

ওই সফরে মূলত রিজার্ভ হিসেবে ছিলেন তিনি। নিজেদের মধ্যে একটি ম্যাচে অপরাজিত ১৩৩ ও অপরাজিত ৫৬ করে মূল স্কোয়াডে জায়গা পেয়ে যান। তৃতীয় টেস্টে চোট পাওয়া কিপার শেন ডাওরিচের বদলি হিসেবে কিপিং করার অভিজ্ঞতাও হয়।

এরপর জায়গা পান এই নিউ জিল্যান্ড সফরের দলে। এবারও তাকে সুযোগ করে দিল ডাওরিচের অনুপস্থিতি। ব্যক্তিগত কারণে ডাওরিচ দেশে ফিরে যাওয়ায় অভিষেক হয়ে গেল তার। প্রথম দিনে দল বোলিং করছে, জশুয়া পেয়ে গেছেন টেস্ট ডিসমিসালের স্বাদও।