শেষ বলের ছক্কায় চট্টগ্রামের নায়ক শামসুর
ক্রীড়া প্রতিবেদক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 08 Dec 2020 08:33 PM BdST Updated: 08 Dec 2020 11:46 PM BdST
বল যখন উড়ে চলছে সীমানার দিকে, শামসুর রহমান তখন ছুটছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। অগ্রহায়ণের রাতে ঘন কুয়াশায় ঘোলাটে হয়ে যাওয়া প্রকৃতিতে জ্বলজ্বল করছে তার নীল জার্সি। তার দিকে ছুটে আসছে তখন নীল জার্সির আরও কিছু অবয়ব। শেষ বলে ছক্কায় জয়, বিজয়ের আনন্দে যেন আত্মহারা শামসুর ও তার সতীর্থরা।
জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২ রান। আল আমিনের লেগ স্টাম্পে থাকা ফুল লেংথ বল স্লগ করে লং লেগ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন শামসুর। রোমাঞ্চে ঠাসা ম্যাচে জেমকন খুলনাকে ৩ উইকেটে হারাল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।
বিরুদ্ধ স্রোতে ছুটে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে শামসুর অপরাজিত থাকেন ৩০ বলে ৪৫ রান করে। শেষ দিকে নাহিদুল ইসলামের ১০ বলে ১৮ রানের ইনিংসটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
শেষ দিকে ম্যাচের ভাগ্য বদলেছে পেণ্ডুলামের মতো। ১৫৮ রান তাড়ায় যখন ১৪ বলে চট্টগ্রামের প্রয়োজন ৩৩ রান, হাসান মাহমুদকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে দলের আশার পালে হাওয়া লাগান শামসুর।
১৯তম ওভারটি ছিল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে আরও গুরুত্বপূর্ণ। শিশির ভেজা মাঠে খুলনা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বোলিংয়ে আনেন অফ স্পিনার শুভাগত হোমকে। তার প্রথম বলেই নাহিদুলের সহজ ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ, উল্টো রান হয় দুটি। সেটির চড়া মূল্য দিতে হয় দলকে।
শুভাগতর ওই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন নাহিদুল। শেষ বলে যদিও তিনি আউট হয়ে যান, কিন্তু দলকে নিয়ে যান শেষ ওভারে ৯ রানের তুলনামূলক সহজ সমীকরণে।
আল আমিন হোসেনের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে স্লগ করতে গিয়ে রান পাননি মুস্তাফিজুর রহমান। পরের বলে আদায় করে নেন বাউন্ডারি। পরের তিন বলে আসে সিঙ্গেল। এরপর শেষ বলে শামসুরের সেই শট।

আরেক পাশে সৌম্য সরকার ডানা মেলতে পারেননি। তবে তিনে নেমে দারুণ খেলছিলেন তরুণ মাহমুদুল হাসান জয়। চতুর্থ ওভারে সাকিবকে টানা দুই বলে বাউন্ডারির পর দুর্দান্ত এক ছক্কা মারেন লং অন দিয়ে।
মাহমুদুলের রোমাঞ্চকর অভিযান শেষ হয় ১৪ বলে ২৪ রান করে, শুভাগতর বলে। সাকিব দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে থামান সৌম্যর ভোগান্তি (২২ বলে ১৯)।
আল আমিনের এক ওভারে নান্দনিক তিনটি চারে মোহাম্মদ মিঠুনের শুরুটা ছিল চমৎকার। তিনিও পরে ধরে রাখতে পারেননি সেই গতি। হাসান মাহমুদের বলে দৃষ্টিকটু শটে শেষ হয় তার ইনিংস (২১ বলে ২৩)।
এরপর মোসাদ্দেক হোসেন, জিয়াউর রহমানের ব্যাট পূরণ করেনি দলের দাবি। চট্টগ্রাম তাকিয়ে ছিল শামসুরের ব্যাটে। অভিজ্ঞ এই মাঝিই তাদের পার করে দেন শেষের বৈতিরণী।
এই ম্যাচ দিয়েই প্রায় ৯ মাস পর মাঠে ফেরেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে নিয়েছেন তিনি মোসাদ্দেক হোসেনের উইকেট। আরেকটি উইকেট তিনি পেতে পারতেন, তার বলে মোসাদ্দেকের ক্যাচ ছাড়েন কিপার জাকির হাসান।
প্রথম প্রথম ভাগে নায়ক ছিলেন শুভাগত। তার শেষ দিকে ১৪ বলে ৩২ রানে ক্যামিওতেই দেড়শ পার হতে পেরেছিল খুলনা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনাকে গতিময় শুরু এনে দিতে পারেননি দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম ও জাকির হাসান। ১৫ রান করতে জাকির খেলেন ১৫ বল। জহুরুল দুটি করে চার ও ছক্কা মেরেছেন বটে। তার ২৬ এসেছে তবু ১৯ বলে। থিতু হওয়ার পর বড় করতে পারেননি ইনিংস।
দুই ম্যাচ ওপেনিং ও দুই ম্যাচে চারে নামার পর আবার তিন নম্বর পজিশনে ফেরেন সাকিব আল হাসান। তবে রান ফেরেনি তার ব্যাটে। ১৬ বল খেলে করতে পেরেছেন ১৫। এই নিয়ে আসরের ৭ ম্যাচে সাকিবের রান সাকুল্যে ৭৪, স্ট্রাইক রেট ১০৭.২৪।

একাদশ ওভারে ৬৬ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে এরপর কিছু দূর টেনে নেন ইমরুল কায়েস ও মাহমুদউল্লাহ। ইমরুল যদিও রান তুলতে পারেননি দ্রুত, সেই কাজটি করতে পারেন কেবল মাহমুদউল্লাহই।
দুজনই উইকেট ছুঁড়ে এসেছেন থিতু হয়ে। ২৩ বলে ২৪ করে মুস্তাফিজুর রহমানকে ফিরতি ক্যাচ দেন ইমরুল। শরিফুল ইসলামের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ইয়র্কার বানিয়ে বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ (১৭ বলে ২৬)।
এরপর আরিফুল হক, শামীম হোসেনরা ব্যর্থ সময়ের দাবি মেটাতে। শুভাগত সেখান থেকে বলতে গেলে একাই দলকে এনে দেন লড়ার মতো রান। দারুণ বুদ্ধিমত্তায় স্ট্রাইক রেখে কার্যকর সব শট খেলেন তিনি। তার ব্যাটিং নৈপুণ্যেই শেষ ৩ ওভারে ৩৮ রান তুলতে পারে খুলনা।
পরে বল হাতেও শুভাগতর শিকার ২ উইকেট। কিন্তু দিনটি ছিল শামসুর ও চট্টগ্রামের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জেমকন খুলনা: ২০ ওভারে ১৫৭/৯ (জহুরুল ২৬, জাকির ১৫, সাকিব ১৫, মাশরাফি ১, ইমরুল ২৪, মাহমুদউল্লাহ , আরিফুল ৬, শামীম ৫, শুভাগত ৩২*, হাসান ০, আল আমিন ০*; নাহিদুল ৩-০-২১-০, রকিবুল ৪-০-২৩-০, শরিফুল ৪-০-৩৪-৩, মোসাদ্দেক ৩-০-২৩-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৬-২, জিয়াউর ২-০-১৮-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ২০ ওভারে ১৬২/৭ ( লিটন ৪, সৌম্য ১৯, মাহমুদুল ২৪, মিঠুন ২৩, শামসুর ৪৫*, মোসাদ্দেক ১২, জিয়াউর ৬, নাহিদুল ১৮, মুস্তাফিজ ৫*; মাশরাফি ৪-০-২৮-১, সাকিব ৪-০-৩০-২, শুভাগত ৪-০-৩৪-২, আল আমিন ৪-০-৩৮-১, হাসান ৪-০-৩০-১)।
ফল: গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শামসুর রহমান।
সর্বাধিক পঠিত
- শেবাগ ঝড়ে উড়ে গেল বাংলাদেশের সাবেকরা
- বার্সা কোচ কুমানের চাওয়া রিয়ালের জয়!
- ফাইনালে বার্সার প্রতিপক্ষ বিলবাও
- ভারতে ‘প্রেম করায়’ বাবার হাতে মেয়ের শিরশ্ছেদ
- দলের ওপর চাপ কমাতে বললেন মাশরাফি
- কোর্তোয়া বনাম ওবলাক: লড়াইটা তাদেরও
- ‘সব সময়ের সেরাদের একজন হবে পান্ত’
- ঘরে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ, পাশে ‘সুইসাইড নোট’
- ‘স্মিথ রাজি থাকলে তাকেই অধিনায়ক করা উচিত’
- পান্তের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ভারতের লিড