চট্টগ্রামের জয়রথ থামিয়ে ঢাকার টানা তিন

জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যেত শীর্ষ চারে থাকা। প্লে অফের দুয়ারে এসে প্রথমবার হোঁচট খেল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। অপ্রতিরোধ্য ছুটতে থাকা দলটিকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়ে বেক্সিমকো ঢাকা পেল হ্যাটট্রিক জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2020, 09:38 AM
Updated : 6 Dec 2020, 05:19 PM

মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত ইনিংসের পর বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ম্যাচে ঢাকার জয় ৭ রানে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ২০ ওভারে ঢাকা তোলে ১৪৫ রান। দলের অর্ধেকের বেশি রান আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে। শুরুর বিপর্যয়ের পর ঢাকা অধিনায়ক খেলেন ৫০ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। রান তাড়ায় চট্টগ্রাম থমকে যায় ১৩৮ রানে। 

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকা দ্বিতীয় ওভারে হারায় ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখকে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারার পর আউট হয়ে যান তিনি ওই ওভারেই।

তিনে নেমে রানের দেখা পাননি আরেক বাঁহাতি তানজিদ হাসান। একাদশে ফেরা সাব্বির রহমানকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে ঢাকা সফল হতে পারেনি বাজিতে। ব্যাটের কানায় লেগে একটি চার পাওয়ার পর সাব্বির ফেরেন ১০ বলে ৭ রান করে।

পঞ্চম ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ঢাকা।

মুশফিক ও ইয়াসির আলি চৌধুরি এখান থেকে টেনে নেন দলকে। খুব গতিময় না হলেও একটা জুটি গড়ে তুলতে পারেন তারা। ৭২ বলে ৮৬ রান যোগ করেন দুজন। ৩৮ বলে ৩৪ রান করে ইয়াসিরের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।

মুশফিক ফিফটি স্পর্শ করেন ৪১ বলে। টি-টেয়েন্টিতে যেটি তার ২৫তম ফিফটি। শেষ দিকে রান বাড়ানোর কাজটিও করেন তিনিই। ইনিংসের শেষ বলেও তার ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। অধিনায়কের ৭ চার ও ৩ ছক্কার ইনিংসে দল পায় লড়ার মতো রান।

রান তাড়ায় চট্টগ্রাম প্রথম ওভারে হারায় সৌম্য সরকারকে। যদিও রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন তিনি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, রুবেল হোসেনের বলে এলবিডব্লিউ হওয়া বলটি পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে।

সেই ধাক্কা চট্টগ্রাম অনেকটাই সামাল দেয় পরের দুই জুটিতে। মাহমুদুল হাসান জয়ের সঙ্গে লিটন দাসের জুটিতে আসে ৪৭, মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে লিটনের জুটিতে ৪৮।

করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা মাহমুদুল দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি শট খেলেন। বাঁহাতি পেসার শফিকুল ইসলামের বলে লফটেড অফ ড্রাইভে ছক্কাটি ছিল ম্যাচের সেরা শটগুলোর একটি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তরুণ ব্যাটসম্যান। অফ স্পিনার রবিউল ইসলাম রবিকে স্লগ করতে গিয়ে আউট হন ২৪ বলে ২৬ করে।

রবি এরপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি দেন চট্টগ্রামকে। ফিরিয়ে দেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাসকে। কৃতিত্ব বেশি যদিও ফিল্ডার শফিকুলের। নিরীহ এক ডেলিভারি স্কুপ করেছিলেন লিটন, শর্ট ফাইন লেগে হাওয়ায় পুরো শরীর ভাসিয়ে দারুণ ক্ষীপ্রতায় তালুবন্দি করেন শফিকুল। আগের চার ম্যাচে দুবার পঞ্চাশ পেরোনো লিটন এবার ফেরেন ৩৯ বলে ৪৭ করে।

সেখান থেকে চট্টগ্রামের পথ হারানোর শুরু। দারুণ ক্যাচের পর শফিকুল বল হাতে ফেরান উইকেটে জমে যাওয়া মিঠুনকে (২০ বলে ২১)। এরপর শামসুর রহমান, জিয়াউর রহমান, নাহিদুল ইসলামরা মেটাতে পারেননি সময়ের দাবি।

৫ বলে যখন প্রয়োজন ১৬ রান, দারুণ এক ছক্কায় ম্যাচ জমিয়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু এরপর আর জমেনি নাটকীয়তা। দারুণ জয়ের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে ঢাকা।

প্রথম তিন ম্যাচে হারার পর টানা তিন জয় পেল মুশফিকের দল। ৫ ম্যাচে চট্টগাম হারল প্রথমবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৪৫/৪ (নাঈম ১৩, সাব্বির ৭, তানজিদ ০, মুশফিক ৭৩*, ইয়াসির ৩৪, ; নাহিদুল ৪-০-১৬-১, শরিফুল ৪-০-৪৮-১, রকিবুল ৪-০-২৪-১, মুস্তাফিজ , মোসাদ্দেক ১-০-৮-০, সৌম্য ৩-০-২৮-০)।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ২০ ওভারে ১৩৮/৯ (লিটন ৪৭, সৌম্য ০, মাহমুদুল ২৬, মিঠুন ২১, মোসাদ্দেক ১৩, শামসুর ১০, জিয়াউর ১০, নাহিদুল ৯, রকিবুল ১*, মুস্তাফিজ ৭, শরিফুল ০*; রুবেল ৪-০-২৪-২, নাসুম ৪-০-২৫-০, শফিকুল ৪-০-২৫-১, রবি ৪-০-২৩-২, মুক্তার ৪-০-৩৯-৩)।

ফল: বেক্সিমকো ঢাকা ৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম