ইয়াসির-আকবরের ব্যাটে জিতল ঢাকা

শুরুর বাজে ব্যাটিংয়ে চাপে পড়ে যাওয়া বেক্সিমকো ঢাকাকে ফিফটিতে পথ দেখালেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। কঠিন সময়ে নেমে ঝড় তুললেন আকবার আলি। বড় রান তাড়ায় রনি তালুকদার ও ফজলে মাহমুদের ব্যাটে লড়াই করছিল মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। তাদের থামিয়ে বেক্সিমকো ঢাকাকে টানা দ্বিতীয় জয় এনে দিলেন মুক্তার আলি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2020, 12:48 PM
Updated : 4 Dec 2020, 03:28 PM

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবারের দ্বিতীয় ম্যাচে ২৫ রানে জিতেছে মুশফিকুর রহিমের ঢাকা।

৩৯ বলে ৯ চার ও এক ছক্কায় ৬৭ রান করেন ইয়াসির। তার সঙ্গে ১০০ রানের জুটি গড়া আকবর ২৩ বলে দুই ছক্কা ও তিন চারে অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে। তাদের ব্যাটে ৫ উইকেটে ১৭৫ রান করে ঢাকা।

৩ ছক্কা ও এক চারে ২৪ বলে রনি করেন ৪০। শুরুতে সাবধানী ব্যাটিং করা মাহমুদ শেষে তোলেন ঝড়। ৪০ বলে পাঁচ চার ও তিন ছক্কায় করেন ৫৮ রান । ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে রাজশাহীকে ১৫০ রানে থামিয়ে দেন মুক্তার।

টস হেরে ব্যাট করতে ঢাকা চমকে দেয় শুরু। মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে ওপেনিংয়ে পাঠায় তারা নাঈম হাসানকে, যিনি মূলত অফ স্পিনার। তবে কাজে লাগেনি সেই ফাটকা। মেহেদি হাসানের বল সুইপ করতে গিয়ে নাঈম হন এলবিডব্লিউ।

আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম ভুগছিলেন টাইমিং পেতে। তবে তিনে নেমে শুরু থেকেই রানের গতি সচল রাখেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় ওভারে মেহেদিকে মারেন চার ও ছক্কা।

আরাফাত সানির বলে কট বিহাইন্ড হয়ে শেষ হয় মোহাম্মদ নাঈমের ভোগান্তি (১৯ বলে ৯)। চারে নেমে ব্যর্থ নিয়মিত ওপেনার তানজিদ হাসান (২)।

তানজিদকে ফেরানোর পর দারুণ খেলতে থাকা মুশফিককেও থামান মুকিদুল ইসলাম। শরীরের খুব কাছের বল কাট করার চেষ্টায় নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে ধরা পড়েন ঢাকা অধিনায়ক। ২৯ বলে করেন তিনি ৩৭। একাদশ ওভারে ৬০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ঢাকা।

মুকিদুলের ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিতে শুরু ইয়াসিরের। পরে ফরহাদ রেজার বলে দারুণ কাভার ড্রাইভে মারেন চার। দারুণ কিছু শট খেলেছেন ইয়াসির, সঙ্গে ব্যাটের কানায় লেগেও পেয়েছেন কিছু বাউন্ডারি।

ভাগ্যও যেন এ দিন ছিল তার সঙ্গে। ফরহাদ রেজার বলে লং অনে আনিসুল হককে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। ইনিংস শেষ হতে পারত ২৫ বলে ৩১ রানে। আনিসুলের ব্যর্থতায় পাওয়া জীবন দারুণভাবে কাজে লাগান ইয়াসির।

ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন আকবর। দ্রুতই ইয়াসিরের সঙ্গে জমে উঠে তার জুটি। ৩০ বলে আসে তার জুটির পঞ্চাশ। পরের পঞ্চাশ আসে আরও দ্রুত, কেবল ২৪ বলে। এবারের আসরের প্রথম শতরানের জুটি এটি।

ফরহাদের বলে বোল্ড হয়ে থামেন ইয়াসির। ততক্ষণে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে গেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। জীবন পাওয়ার পর ১৪ বলে করেন ৩৬ রান।

শেষ দিকে স্ট্রাইক কম পাওয়া আকবরের শেষ ওভারের ছক্কায় ১৭৫ পর্যন্ত যায় ঢাকার রান। 

বড় রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি রাজশাহীর। রবিউল ইসলাম রবিকে ফ্লিক করে দ্বিতীয় ওভারে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। আরেক ওপেনার আনিসুল ইসলামকে দ্রুত ফেরান রুবেল হোসেন।

চারে নামা আশরাফুলকে (৮ বলে ১) দারুণ এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ করে বিদায় করেন শফিকুল ইসলাম। ১৫ রানে রাজশাহী হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট।

আগের ম্যাচে ৮ নম্বরে নামা রনি এবার তিনে নেমে তোলেন ঝড়। শুরু থেকেই শট খেলছিলেন ক্রস ব্যাটে। তাতে সফলও হচ্ছিলেন। তাকে থামান মুক্তার। মুক্তারের স্লোয়ার বল এগিয়ে গিয়ে স্লগ করতে চেয়েছিলেন। ব্যাটের কানায় লেগে হন বোল্ড। ভাঙে মাহমুদের সঙ্গে তার ৬৭ রানের জুটি।

রনির বিদায়ের পর হাল ধরনে মাহমুদ। ৩৮ বলে ফিফটি করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকেও থামান মুক্তার। লং অনে ক্যাচ মুঠোয় নেন তানজিদ।

এরপরও টিকে ছিল রাজশাহীর আশা। কিন্তু সময়ের দাবি মেটাতে পারেননি সোহান, ফরহাদরা। এক ছক্কা মেরেই বিদায় নেন সোহান, দুই ছক্কার পর ফরহাদ। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে তারা খেলতে পারেনি পুরো ২০ ওভার।  

৩১ রানে ৩ উইকেট নেন বাঁহাতি পেসার শফিকুল। দারুণ বোলিংয়ে রুবেল ২ উইকেট নেন ১৫ রানে।

পাঁচ ম্যাচে দ্বিতীয় জয়ে তলানি থেকে চার নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা। রান রেটে এগিয়ে তিন নম্বরে রয়েছে সমান ম্যাচে তৃতীয় হারের তেতো স্বাদ পাওয়া রাজশাহী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৭৫/৫ (নাঈম হাসান ১, মোহাম্মদ নাঈম ৯, মুশফিক ৩৭, তানজিদ ২, ইয়াসির ৬৭, আকবর ৪৫*, মুক্তার ৩*; মেহেদি ৪-০-২৩-১, ইবাদত ৪-০-৩৪-০, সানি ৪-০-২৬-১, ফরহাদ ৪-০-৩৯-১, মুকিদুল ৩-০-৩৮-২, আনিসুল ১-০-১৫-০)

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী: ১৯.১ ওভারে ১৫০ (শান্ত ৫, আনিসুল ৬, রনি ৪০, আশরাফুল ১, মাহমুদ ৫৮, মেহেদি ১, সোহান ১১, ফরহাদ ১৪, সানি ৭*, মুকিদুল ৪, ইবাদত ১; রুবেল ৩.১-০-১৫-২, রবি ২-০-১৭-১, নাসুম ৪-০-৩৫-০, শফিকুল ৪-০-৩১-৩, নাঈম হাসান ২-০-১৪-০, মুক্তার ৪-০-৩৭-৪)

ফল : বেক্সিমকো ঢাকা ২৫ রানে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ : ইয়াসির আলি চৌধুরি