১ রানের রুদ্ধশ্বাস জয়ে চট্টগ্রামের চারে চার

রান খরার টুর্নামেন্টে অবশেষে দেখা গেল স্ট্রোকের ঝলক আর ব্যাটিংয়ের দাপট। ম্যাড়ম্যাড়ে কিছু ম্যাচের পর ছড়াল উত্তেজনা। রোমাঞ্চের ভেলায় ভেসে ম্যাচ পৌঁছে গেল শেষ বলের সমীকরণে। তাতে পেরে উঠল না রাজশাহী। চট্টগ্রাম পেল টানা চতুর্থ জয়। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 02:40 PM
Updated : 2 Dec 2020, 05:05 PM

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের নাটকীয় ম্যাচে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীকে ১ রানে হারাল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার লিটন দাসের ক্যারিয়ার সেরা ৭৮ রানের ইনিংসে চট্টগ্রাম ২০ ওভারে তোলে ১৭৬ রান। জয়ের জন্য শেষ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন পড়ে ৪ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে রনি তালুকদার নিতে পারেন ২।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনিতে এরকম স্কোর ও এমন ম্যাচ হয় হরহামেশাই। তবে এই টুর্নামেন্টে ছিল একঘেঁয়ে ও বিরক্তিকর ম্যাচের ছড়াছড়ি। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই দলের এই ১৭৬ ও ১৭৫ রানই এখনও পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ দুই দলীয় স্কোর।

রাজশাহীর রান তাড়ায় পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ শেষ ওভারেও রঙ বদলায় বারবার। রাজশাহীর প্রয়োজন পড়ে ৬ বলে ১৩ রান। ওভারের প্রথম বলেই নুরুল হাসান সোহানকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। পরের দুই বলে আসেনি রান।

চতুর্থ বলে বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচ জমিয়ে দেন আট নম্বরে নামা রনি তালুকদার। পরের বলে মুস্তাফিজ করেন দারুণ ইয়র্কার, কিন্তু রনির ব্যাটের কানায় লেগে হয়ে যায় বাউন্ডারি। শেষ বলে দরকার ৪ রান। লো-ফুল টস লং অনে পাঠিয়ে রনি নিতে পারেন ২ রান।

ম্যাচের প্রথম ভাগ রাঙান লিটন দাস। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে স্টাইলিশ এই ওপেনার নান্দনিক সব শটের মহড়ায় করেন ৫৩ বলে অপরাজিত ৭৮ রান। তার আগের সেরা ছিল ৭৫।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামকে গতিময় শুরু এনে দেন সৌম্য সরকার। প্রথম দুই ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে চারটি বাউন্ডারি। তৃতীয় ওভারে জোড়া চার লিটনের ব্যাটে।

পরের ওভারে দুজন মিলেই চড়াও হন ফরহাদ রেজার ওপর। প্রথম বলে মিড উইকেট সীমানায় ক্যাচ নিয়েও সীমানা স্পর্শ করেন রনি তালুকদার, ছক্কা পান সৌম্য। পরে টানা তিনটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। ৪.২ ওভারে দলের রান স্পর্শ করে ৫০।

তরুণ পেসার মুকিদুল ইসলাম রাজশাহীকে ব্রেক থ্রু এনে দেন নিজের প্রথম ওভারে। ৪টি চার ও ২ ছক্কায় ২৫ বলে ৩৪ করে সীমানায় ক্যাচ দেন সৌম্য।

উদ্বোধনী জুটিতে ততক্ষণে ৭.২ ওভারে ৬২ রান তুলে ফেলেছেন দুজন। আগের তিন ম্যাচে সৌম্য-লিটনের উদ্বোধনী জুটি ছিল ৭৯, ৭৩ ও ২২ রানের।

শুরুর সেই গতি ধরে রাখতে পারেননি তিনে নামা মোহাম্মদ মিঠুন। স্লো মিডিয়াম পেসার আনিসুল ইসলাম ইমনের ফুল লেংথ স্লোয়ারে স্কুপের মতো করতে গিয়ে চট্টগ্রাম অধিনায়ক বিদায় নেন ১২ বলে ১১ করে। পরের ওভারে ফরহাদ রেজার বলে প্রায় একই ধরনের শটের চেষ্টায় বোল্ড হন শামসুর রহমান।

লিটন আরেক পাশে দারুণ সব শট খেলেই যাচ্ছিলেন। মোসাদ্দেক শুরুতে গিয়ে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন তাকে। এরপর নিজেই দায়িত্ব নেন ঝড় তোলার। চোখধাঁধানো শটে ইমনকে ছক্কায় ওড়ান এক্সট্রা কাভার দিয়ে, ইবাদত হোসেনকে লং অফ দিয়ে।

শেষ ৫ ওভারে স্ট্রাইক খুব বেশি পাননি লিটন। রান বাড়ানোর কাজটি তখন করেন মোসাদ্দেকই।

দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৮ বলে ৪২ করে মোসাদ্দেক ফেরেন শেষ ওভারে। লিটন শেষ ওভারেও মারেন একটি ছক্কা। দলের রান তাতে পেরোয় ১৭৫।

বড় লক্ষ্য পেয়েও ভড়কে যায়নি রাজশাহী। লিটন-সৌম্য জুটির জবাব হয়ে আসে যেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও আনিসুল ইসলাম ইমন জুটি। ইনিংসের প্রথম বলে চার দিয়ে শুরু করেন ইমন। পরে শরিফুল ইসলামের এক ওভারে মারেন তিন বাউন্ডারি। নাহিদুল ইসলামকে টানা দুটি ছক্কায় ওড়ান শান্ত। ৪.৪ ওভারে হয়ে যায় দলের ফিফটি।

মুস্তাফিজ বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই ভাঙেন ৫৬ রানের জুটি। দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ করে (১৪ বলে) বিদায় নেন শান্ত।

ইমন এরপরও চালিয়ে গেছেন। তবে মোহাম্মদ আশরাফুল তিনে নেমে ধরে রাখতে পারেননি রানের গতি। একবার জীবন পেয়েছেন, ওভারথ্রো থেকে বাড়তি চার রান উপহার পেয়েছেন। তারপরও আউট হয়ে গেছেন ১৯ বলে ২০ রান করে।

ইমন ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৪ বলে। এরপর তাকেও একটু ক্লান্ত মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৪৪ বলে ৫৮ রানে।

রাজশাহী হাল ছাড়েনি এরপরও। মেহেদি হাসানের ১৭ বলে ২৫ রানের ইনিংস পথে রাখে দলকে। ১০ বলে যখন ২৫ রান, শরিফুলকে টানা দুই বলে ছক্কা-চারে ফরহাদ রেজা আবারও বদলে দেন ম্যাচের মোড়। তবে আউট হয়ে যান তিনি পরের বলেই।

এরপর শেষ ওভারের সেই নাটকীয়তা। তাতে স্নায়ু আর স্কিলের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী চট্টগ্রাম।

চার ম্যাচের সবকটি জিতে তারা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। দুই জয় দিয়ে শুরুর পর রাজশাহীর এটি টানা দ্বিতীয় হার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৭৬/৫ (লিটন ৭৮*, সৌম্য ৩৪, মিঠুন ১১, শামসুর ১, মোসাদ্দেক ৪২, সৈকত ০; মেহেদি ২-০-১৯-০, ইবাদত ৪-০-৪৩-০, ফরহাদ ৪-০-৪৪-১, সানি ৩-০-১৮-১, মুকিদুল ৪-০-৩০-৩, ইমন ৩-০-২২-১)।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: ২০ ওভারে ১৭৫/৭ (ইমন ৫৮, শান্ত ২৫, আশরাফুল ২০, ফজলে মাহমুদ ১১, মেহেদি ২৫, সোহান ৮, ফরহাদ ১২, রনি ১২*, মুকিদুল ০*; নাহিদুল ২-০-২৫-০, শরিফুল ৪-০-৪১-২, মোসাদ্দেক ৪-০-৩১-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৭-৩, তাইজুল ২-০-১৭-০, সৌম্য ৩-০-১৯-০, জিয়াউর ১-০-৩-১)।

ফল: গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: লিটন দাস