তৃতীয় ওয়ানডেতে ১৩ রানে জিতেছে বিরাট কোহলির দল। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে পেয়েছে প্রথম পয়েন্ট। প্রথম দুই ম্যাচে জেতা অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে জিতেছে সিরিজ।
৩২ ওভার শেষে ৫ উইকেটে ১৫২ রান করা ভারতের সংগ্রহ প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলেন হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। তাদের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে দলটি ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে করে ৩০২ রান। পরে সফরকারীদের দারুণ বোলিংয়ে তিন বল বাকি থাকতে ২৮৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
ক্যানবেরার ম্যানুকা ওভালে বুধবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই শিখর ধাওয়ানকে হারায় ভারত। থিতু হয়ে ফিরেন প্রায় দুই বছর পর দেশের হয়ে ওয়ানডে খেলতে নামা শুবমান গিল।
এই ওপেনারের পর লোকেশ রাহুলকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অ্যাশটন অ্যাগার। আরেক স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা বিদায় করেন শ্রেয়াস আইয়ারকে।
শুরুতে বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলেন বিরাট কোহলি। প্রথম ১৬ বলে করেন ২১ রান। এরপর হুট করেই পথ হারিয়ে ফেলেন। পরের ৫০ বলে ছিল না কোনো বাউন্ডারি। টানা তৃতীয় ম্যাচে শর্ট বলে তাকে থামিয়ে ভারতের বিপদ বাড়ান জশ হেইজেলউড।
শচিন টেন্ডুলকারকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে কম ইনিংস ও কম সময়ে ১২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা কোহলি ৫ চারে ৭৮ বলে করেন ৬৩। চলতি বছরে আর কোনো ওয়ানডে নেই ভারতের। অভিষেক বছরের পর এই বছরই ওয়ানডেতে কোনো সেঞ্চুরি পেলেন না কোহলি।
অধিনায়ক ফিরে যাওয়ার সময় ভারতের আড়াইশ রান করা নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা। সেখান থেকে দলকে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেন পান্ডিয়া ও জাদেজা। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে ১০৮ বলে তারা গড়েন ১৫০ রানের জুটি।
শুরুতে একটু সাবধানী ছিলেন পান্ডিয়া। পরে বাড়ান রানের গতি। ৫৫ বলে ফিফটিতে পৌঁছানোর পর চড়াও হন বোলারদের উপর। শেষ দিকে খুব একটা স্ট্রাইক পাননি তিনি। জাদেজা শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক। শেষ চার ওভারে তোলেন ঝড়। তিন ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫০ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার।
সিরিজে দুইবার নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন পান্ডিয়া। প্রথম ওয়ানডেতে করেছিলেন ৯০। সেটি ছাড়িয়ে এবার অপরাজিত থাকলেন ৯২ রানে। তার ৭৬ বলের ইনিংসে ৭ চারের পাশে একটি ছক্কা।
চোটের জন্য ছিটকে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নারের অনুপস্থিতিতে অ্যারন ফিঞ্চের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন মার্নাস লাবুশেন। ৭ রানেই তাকে থামান অভিষিক্ত টি নটরাজন। আগের দুই ইনিংসেই ৬২ বলে সেঞ্চুরি করা স্টিভেন স্মিথ এবার যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। দলে ফেরা পেসার শার্দুল ঠাকুরের বলে কিপার রাহুলকে ক্যাচ দেন তিনি।
মোইজেস হেনরিকস ও অভিষিক্ত গ্রিন ফিরে যান বিশের ঘরে গিয়েই। ৩১তম ওভারে ১৫৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে তখন চাপে অস্ট্রেলিয়া। সিডনিতে দুটি খুনে ইনিংস খেলা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দাঁড়িয়ে যান এবারও।
অ্যালেক্স কেয়ারির সঙ্গে ৫২ ও অ্যাগারের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে এই অলরাউন্ডার দলকে ফেরান কক্ষপথে। ৩৮ বলে চার ছক্কা ও তিন চারে ৫৯ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে বোল্ড করে ম্যাচ ভারতের দিকে নিয়ে আসেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এরপর আর পেরে ওঠেনি অস্ট্রেলিয়া।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন পান্ডিয়া। প্রথম দুই ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির জন্য সিরিজ সেরা স্মিথ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩০২/৫ (ধাওয়ান ১৬, গিল ৩৩, কোহলি ৬৩, আইয়ার ১৯, রাহুল ৫, পান্ডিয়া ৯২*, জাদেজা ৬৬*; হেইজেলউড ১০-১-৬৬-১, ম্যাক্সওয়েল ৫-০-২৭-০, অ্যাবট ১০-০-৮৪-১, গ্রিন ৪-০-২৭-০, অ্যাগার ১০-০৪৪-২, জ্যাম্পা ১০-০-৪৫-১, হেনরিকস ১-০-৭-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৩ ওভারে ২৮৯ (লাবুশেন ৭, ফিঞ্চ ৭৫, স্মিথ ৭, হেনরিকস ২২, গ্রিন ২১, কেয়ারি ৩৮, ম্যাক্সওয়েল ৫৯, অ্যাগার ২৮, অ্যাবট ৪, জ্যাম্পা ৪, হেইজেলউড ৭*; বুমরাহ ৯.৩-০-৪৩-২, নটরাজন ১০-১-৭০-২, শার্দুল ১০-১-৫১-৩, কুলদীপ ১০-০-৫৭-১, জাদেজা ১০-০-৬২-১)
ফল: ভারত ১৩ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: হার্দিক পান্ডিয়া
ম্যান অব দা সিরিজ: স্টিভেন স্মিথ।