১০ কেজি ওজন কমিয়ে বোলিংয়ে ফিরলেন মাশরাফি

প্রিয় আঙিনায় কত দিন পর! সেই মার্চে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর অবশেষে আবার পা রাখলেন মঙ্গলবার। প্রায় ১৪ বছর ধরে যেখানে তার নিয়মিত বিচরণ, সাড়ে ৮ মাসের বিরতির পর চেনা সেই প্রান্তরে এসে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক হাসতে হাসতে বললেন, “সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও দেখছি…সব কেমন যেন নতুন লাগছে।”

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2020, 11:53 AM
Updated : 1 Dec 2020, 11:53 AM

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ, নিজে ও পরিবারের অন্যদের আক্রান্ত হওয়া, এরপর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট, সব মিলিয়ে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সঙ্গে মাশরাফির এই দূরত্ব। চলতি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টির প্লেয়ার্স ড্রাফটে ছিলেন না চোটের কারণেই। ফেরার লড়াইয়ে বড় এক ধাপ এগোলেন এ দিন। বোলিং করলেন মিরপুর একাডেমি মাঠের সেন্টার উইকেটে।

গত কিছুদিন ধরে রানিং ও জিম সেশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের মতো করে। চোটের পর বোলিং করলেন মঙ্গলবারই প্রথম। শুরুতে দুই-তিন পদক্ষেপে কিছু ডেলিভারি করলেন, পরে মাঝারি রান আপে কয়েকটি। এরপর পুরো রান আপে বোলিং করলেন চার ওভার। লম্বা বিরতির পরও তার লাইন-লেংথ ছিল দারুণ।

শতভাগ দিয়ে বোলিং অবশ্য করতে দেখা যায়নি। মূলত স্পট বোলিং করেছেন। বোলিংয়ের আগে ও পরে রানিং সেশন করেছেন বিসিবির ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদারের তত্ত্বাবধানে।

বাইরে থেকে দেখে মনে হয়নি, বোলিংয়ের সময় তিনি খুব একটা অস্বস্তিতে ভুগছেন। পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেটি নিশ্চিতও করলেন মাশরাফি, “জিম আর রানিংয়ে কোনো ব্যথা ছিল না। দেখতে চেয়েছিলাম, বোলিং করলে কেমন লাগে। আজকে বোলিং করে ব্যথা অনুভব করিনি। ভালোই ছিল সবকিছু।”

লকডাউনের শুরুর দিকে ফিটনেস নিয়ে ঘাম ঝরিয়ে ওজন ৭৯ কেজিতে নামিয়ে এনেছিলেন তিনি। নিজে আক্রান্ত হওয়ার পর বন্ধ হয় ফিটনেস ট্রেনিং। ওজন বাড়তে তাকে আবার। এক পর্যায়ে তা ৯৪ কেজিতে পৌঁছে গিয়েছিল। গত কিছুদিনে আবার ট্রেনিং করে ওজন নামিয়ে এনেছেন ৮৪ কেজিতে। তার আশা, বোলিং শুরুর পর আগামী কয়েকদিনে ওজন কমবে আরও কিছুটা।

বোলিংয়ে ফেরায় বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে মাশরাফিকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে যথেষ্টই। দু-একটি দল তাকে পেতে আগ্রহী বলেও জানা গেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বিসিবি থেকে জানানো হয়েছিল, মাশরাফি ফিট হওয়ার পর কোনো দল চাইলে তাকে নিতে পারবে। একাধিক দল আগ্রহী হলে তাদের মধ্যে লটারি হবে। ম্যাচে বোলিং করার অবস্থায় যেতে অবশ্য আরও কয়েক দিন সময় লাগবে তার।

মাশরাফির বোলিংয়ে ফেরার দিনে আরেকটি প্রশ্নও উঠেছে। তিনি যখন একাডেমি মাঠে গেলেন, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও ফরচুন বরিশাল দল তখন অনুশীলন করছিল। ওই দুই দলের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফরা আছেন জৈব-সুরক্ষা বলয়ে। মাশরাফি কি সুরক্ষা বলয় ভেঙেছেন বা নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে?

একাডেমি মাঠে পা রাখার পর বেশ কিছুটা সময় মাঠের বাইরে অপেক্ষা করেছেন মাশরাফি। অপেক্ষা করেছেন ওই দুই দলের অনুশীলন শেষ হওয়া পর্যন্ত। তাদের অনুশীলন শেষ হওয়ার পর মাঠে নামেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক। একটি উইকেটে বোলিং করছিলেন সঞ্জিত সাহা। এই অফ স্পিনার বোলিং শেষ করে চলে যাওয়ার পর সেখানে বোলিং করতে যান মাশরাফি।

সুরক্ষা বলয়ে থাকা ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের কয়েকজনের সঙ্গে অবশ্য কথা বলতে দেখা গেছে মাশরাফিকে। তবে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে দেখা গেছে তাকে। সৌম্য সরকার এক পর্যায়ে একটু কাছাকাছি চলে এলেও তাকে দূরে সরতে বলেন মাশরাফি।

তবে ধোঁয়াশা তৈরি হয় বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরীর একটি মন্তব্যের পর। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেবাশিস জানান, মিরপুর স্টেডিয়ামের ইনডোরে বোলিং করার কথা থাকলেও ভুল করে মাশরাফি একাডেমি মাঠে চলে যান এবং পরে ‘সরি’ বলেন।

কিন্তু মাশরাফি নিজে বলছেন, ভুল করে নয়, বরং বোর্ডের অনুমতি নিয়েই তিনি একাডেমি মাঠে অনুশীলন করেন।

“কোভিড পরীক্ষা করিয়েছি আমি। নেগেটিভ সার্টিফিকেট বোর্ডকে দেখাতেও চেয়েছি। তারা বলেছেন, প্রয়োজন হলে তারা চেয়ে নেবেন। ক্রিকেট অপারেশন্স থেকেই বলা হয়েছে, আমার জন্য উইকেট তৈরি আছে। আমি সেখানেই বোলিং করেছি। সতর্কতার জন্য নিজে বল নিয়ে গিয়েছি, বোর্ড থেকেও আলাদা বল দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেই করেছি।”

“প্র্যাকটিসের পর বোর্ডের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গেও কথা হয়েছে আমার। উনিও বলেছেন, কোনো সমস্যা নেই। অন্য দলগুলির প্র্যাকটিস করার সময় আমি প্র্যাকটিস না করলেই হলো। যেভাবে বলা হয়েছে, আমি সেভাবেই করেছি।”

গত মার্চে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলের নেতৃত্বকে বিদায় জানান মাশরাফি। তিনি নেতৃত্ব ছাড়ার পর আর ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ। দলে তার সুযোগ হয় কিনা, সেটিও তাই দেখা হয়ে ওঠেনি। সূচি অনুযায়ী, বাংলাদেশের পরের ওয়ানডে আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। মাশরাফি অবশ্য এই সময়টায় অনেকবারই বলেছেন, জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও মনের খোরাক জোগাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলে যাবেন তিনি।