ফিঞ্চ-স্মিথের সেঞ্চুরিতে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ান আন্তর্জাতিক মৌসুমের শুরুর দিন। ধারণক্ষমতার অর্ধেক হলেও মাঠে ফিরল দর্শক। সব মিলিয়ে সিডনি ক্রিকেট মাঠে উৎসবের আবহ। সেই উৎসব আরও রঙিন হয়ে উঠল অস্ট্রেলিয়ানদের দাপুটে ক্রিকেটের বর্ণিল ছটায়। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি উপহার দিলেন অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ মাতালেন ঝড়ো সেঞ্চুরিতে। রানের পাহাড় গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2020, 08:30 AM
Updated : 27 Nov 2020, 12:59 PM

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শুক্রবার ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৬৬ রানে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে তোলে ৬ উইকেটে ৩৭৪ রান। ভারতের বিপক্ষে যা তাদের সর্বোচ্চ। ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৩৫৯ ছিল আগের সর্বোচ্চ ইনিংস।

সপ্তদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে ফিঞ্চ করেন ১১৪। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন ৫ হাজার ওয়ানডে রানও। ১১ চার ও তিন ছক্কায় স্মিথের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ বলে ১০৫।

রান তাড়ায় ভারত ঝড়ের গতিতে শুরু করলেও বড় জুটি পায়নি টপ অর্ডারে। শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারে ৩০৮ রান।

চোটের কারণে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নামা হার্দিক পান্ডিয়ার ৭৬ বলে ৯০ রানের ইনিংস ভারতের প্রাপ্তি। ৫৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার অ্যাডাম জ্যাম্পা।

প্রায় ৯ মাস পর এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরল ভারত। সঙ্গে মিলে যায় ক্রিকেট মাঠে দর্শকের ফেরা। দর্শকশূন্য মাঠে একের পর এক ম্যাচে দর্শকের কৃত্রিম আওয়াজের পর এই ম্যাচে গ্যালারিতে আবার শোনা যায় সেই চেনা হুল্লোড়। গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় মেয়েদের ক্রিকেটে দর্শক ফিরেছে বটে, তবে ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দর্শকের ফেরা কোভিড মহামারীর পর সব দেশ মিলিয়েই এই প্রথম।

ম্যাচে অবশ্য খানিকটা শোকের আবহও ছিল। দুই মাস আগে প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ডিন জোন্সের সম্মানে ম্যাচের শুরুতে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আরেক প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান ফিল হিউজের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করা হয় স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে। হিউজের টেস্ট ক্যাপ নম্বর ছিল ৪০৮।

অস্ট্রেলিয়াকে দারুণ শুরু এনে দেন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নার। শুরুতে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পথে না হেঁটে দুজনই রান তোলেন ঝুঁকিহীন পথে। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে রান আসে ৫১।

এরপর ক্রমেই দুজন একটু করে বাড়ান রানের গতি। ৬৯ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন ফিঞ্চ, ৫৪ বলে ওয়ার্নার।

উদ্বোধনী জুটিতে দুজনের একাদশ শতরানের জুটি থামে ১৫৬ রানে গিয়ে। মোহাম্মদ শামির বলে ওয়ার্নার উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ৭৬ বলে ৬৯ করে।

দ্বিতীয় উইকেটে ফিঞ্চ ও স্মিথের জুটিতেও আসে শতরান। এবার অনেক গতিময়তায়, মাত্র ৭৩ বলেই ১০৮ রানের জুটি।

১১৭ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করে ফিঞ্চ। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১৬ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান।

শতরানের পর রান বাড়ানোর চেষ্টায় ফিঞ্চ বিদায় নেন ১২৪ বলে ১১৪ রানে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি মার্কাস স্টয়নিস।

তবে অস্ট্রেলিয়ার রানের গতি আরও বাড়াতে সমস্যা হয়নি। দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটের পাশাপাশি উদ্ভাবনী শটের মহড়ায় স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এলোমেলো করে দেন ভারতীয় বোলিং। ২৫ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।

স্মিথ ইনিংসের শুরুতে এগিয়েছেন বলপ্রতি রান তুলে। এরপর হুট করেই তুমুল আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। ৬ বলের মধ্যে ৫ বাউন্ডারিতে ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৬ বলে।

দুই দফায় বেঁচেও গেছেন তিনি। ৩৭ রানে ক্যাচ নিতে পারেননি শিখর ধাওয়ান, ৬৩ রানে কঠিন ক্যাচ ছাড়েন যুজবেন্দ্র চেহেল।

রক্ষা পেয়ে ভারতকে ভুগিয়ে ৬২ বলেই স্মিথ পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। অস্ট্রেলিয়ার যা তৃতীয় দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।

৫ চার ও ৩ ছক্কায় ম্যাক্সওয়েল করেন ১৯ বলে ৪৫। শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তোলে ১১০ রান।

ভারতীয় বোলারদের দুর্দশার দিনে খানিকটা ভালো করেন কেবল মোহাম্মদ শামি (৩/৫৯)। ১০ ওভারে ৮৯ রান দেন চেহেল, ওয়ানডেতে কোনো ভারতীয় স্পিনারের যা সবচেয়ে খরুচে বোলিং।

ভারতের রান তাড়ার শুরুটা ছিল চোখধাঁধানো। ওয়াইড বল-নো বলে চার মিলিয়ে মিচেল স্টার্কের প্রথম ওভার থেকে আসে ২০ রান। জশ হেইজেলউডের করা পরের ওভার থেকে ১২। দলের পঞ্চাশ হয়ে যায় কেবল ৪.১ ওভারেই।

সেখান থেকে ভারতের রাশ টেনে ধরেন হেইজেলউড। আগারওয়ালকে ফিরিয়ে দলকে এনে দেন তিনি ব্রেক থ্রু। এই পেসার পরে এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারকে।

প্যাট কামিন্সের বলে ১ রানে ফাইন লেগে অ্যাডাম জ্যাম্পার হাতে জীবন পেলেও কোহলি করতে পারেন ২১ বলে ২১ রান। জ্যাম্পা বোলিংয়ে এসে ফুল টসে ফেরান লোকেশ রাহুলকে। ভারতের রান তখন ৪ উইকেটে ১০১।

শিখর ধাওয়ান ও পান্ডিয়ার জুটি এরপর লড়াইয়ে রাখে ভারতকে। পঞ্চম উইকেটে ১২৮ রানের জুটি গড়েন দুজন।

প্রথম স্পেলে খরুচে জ্যাম্পা দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিশ্চিত করে দেন অস্ট্রেলিয়ার জয়। ৮৬ বলে ৭৪ রান করা ধাওয়ানকে ফিরিয়ে তিনি ভাঙেন জুটি। পরে এই লেগ স্পিনার ফিরিয়ে দেন পান্ডিয়াকেও।

৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৯০ রান পান্ডিয়ার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

এরপর নবদিপ সাইনি (২৯*), রবীন্দ্র জাদেজাদের (২৫) সৌজন্যে তিনশ ছাড়াতে পারে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ব্যবধান তবু বেশ বড়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৭৪/৬ (ওয়ার্নার ৬৯, ফিঞ্চ ১১৪, স্মিথ ১০৫, স্টয়নিস ০, ম্যাক্সওয়েল ৪৫, লাবুশেন ২, কেয়ারি ১৭*, কামিন্স ১*; শামি ১০-০-৫৯-৩, বুমরাহ ১০-০-৭৩-১, সাইনি ১০-০-৮৩-১, চেহেল ১০-০-৮৯-১, জাদেজা ১০-০-৬৩-০)।

ভারত: ৫০ ওভারে ৩০৮/৮ (মায়াঙ্ক ২২, ধাওয়ান ৭৪, কোহলি ২১, শ্রেয়াস ২, রাহুল ১২, পান্ডিয়া ৯০, জাদেজা ২৫, সাইনি ২৯*, শামি ১৩, বুমরাহ ০*; স্টার্ক ৯-০-৬৫-১, হেইজেলউড ১১-০-৫৫-৩, কামিন্স ৮-০-৫২-০, জ্যাম্পা ১০-০-৫৪-৪, স্টয়নিস ৬.২-০-২৫-০, ম্যাক্সওয়েল ৬.৪-০-৫৫-০)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ৬৬ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে।

ম্যান অব দা ম্যাচ: স্টিভেন স্মিথ।