শেষ ওভারে ৪ ছক্কায় নায়ক আরিফুল

‘কার্লোস ব্র্যাথওয়েট…রিমেম্বার দা নেম’, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চার ছক্কায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে ব্র্যাথওয়েট নিশ্চিত করেছেন, তাকে মনে রাখতেই হবে। এবার মঞ্চ আলাদা, প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। কিন্তু প্রায় একইরকম কীর্তিতে আরিফুল হক মনে করালেন সেই ব্র্যাথওয়েটকে। শেষ ওভারে চার ছক্কায় এই অলরাউন্ডার অসাধারণ এক জয় এনে দিলেন খুলনাকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2020, 02:45 PM
Updated : 24 Nov 2020, 07:58 PM

১৫৩ রান তাড়ায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য খুলনার প্রয়োজন ছিল ২২ রান। শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা ফরচুন বরিশাল তখন দারুণ এক জয়ের কাছাকাছি। তাদের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে আনলেন আরিফুল চার ছক্কার ঝলকে। ৪ উইকেটের জয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরু করল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেভারিট দল জেমকন খুলনা।

প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১২ রান দেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে শেষ ওভারে বল তুলে দেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল। প্রথম দুই বল লং অনের ওপর দিয়ে ওড়ান আরিফুল। পরের বলে সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তিনি নেননি। নিজেই সেরেছেন কাজ। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে মিড উইকেট দিয়ে দুটি ছক্কায় জিতিয়ে দেন দলকে।

অনেকটা সময় টাইমিং পেতেই ধুঁকছিলেন যিনি, শেষ পর্যন্ত ৩৪ বলে ৪৮ রান করে সেই আরিফুলই খুলনার নায়ক।

এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে ব্যাটে-বলে খুব দারুণ কিছু করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। বল হাতে তিন ওভারে নিয়েছেন ১ উইকেট। পরে ব্যাটিংয়ে করেছেন ১৩ বলে ১৫। দলের জয় নিশ্চয়ই তাকে দেবে বাড়তি আনন্দ।

শেষের মতো বরিশালের শুরুটাও ছিল হতাশার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে তারা। তামিমের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন মিরাজ। ফিরতে সময় লাগেনি তার। ম্যাচের প্রথম বলেই ফিরতি ক্যাচ দেন তিনি শফিউল ইসলামকে।

শহিদুল ইসলামের বলে দুটি বাউন্ডারিতে তামিমের শুরুটা ছিল ভালো। তবে বরিশাল অধিনায়ক পারেননি ইনিংস বড় করতে। শহিদুলকেই বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে তিনি বিদায় নেন ১৫ বলে ১৫ রান করে।

তামিমের পর বরিশালের আরেক ভরসা আফিফ হোসেনও বিদায় নেন দ্রুত। সাকিবের নিরীহ দর্শন শর্ট বল তিনি তুলে দেন স্কয়ার লেগ ফিল্ডারের হাতে।

গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য পারভেজ দারুণ কিছ শট খেলেন। দলকে বলতে গেলে টানেন তিনিই। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বিদায় নেন ফিফটির পরপর। ৪২ বলে ৫১ রানের ইনিংসে তিনি মারেন চার ছক্কা।

মিডল অর্ডারে ইরফান শুক্কুর, তৌহিদ হৃদয়রা থিতু হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি বড় কিছু করতে।

কিপার-ব্যাটসম্যান মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৩ ছক্কায় ১০ বলে ২১ করে একটু বাড়ান রান। শেষ দিকে তাসকিনের একটি ছক্কা ও চারে বরিশাল ছুঁতে পারে দেড়শ।

১৯তম ওভারে তিন উইকেটসহ খুলনার পেসার শহিদুল ইসলাম নেন ১৭ রানে ৪ উইকেট, টি-টোয়েন্টিতে তার সেরা বোলিং।

রান তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় খুলনা। ইনিংসের প্রথম ওভারে তাসকিন দুটি চার হজম করলেও দুটি উইকেটও এনে দেন বরিশালকে। তামিমের দারুণ ক্যাচে ফেরেন এনামুল হক, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইমরুল কায়েস।

সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ শুরু করেছিলেন ভালো। কিন্তু দলকে টানতে পারেননি কেউই। মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। সুমন খানের শর্ট বলে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন সাকিব।

পাঁচে নেমে জহরুল ইসলাম চেষ্টা করেন রানের গতি বাড়াতে। কিন্তু আরেক পাশে আরিফুল হক খুঁজে পাচ্ছিলেন না ছন্দ।

জহুরুল বিদায় নেন ২৬ বলে ৩১ রান করে। খুলনার ইনিংসে দম দেন এরপর শামীম হোসেন। দারুণ টাইমিং ও উদ্ভাবনী কিছু শট মিলিয়ে ১৮ বলে ২৬ রান করেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান।

তার বিদায়ে খুলনার সম্ভাবনার শেষও হতে পারত। আরিফুল তখনও টাইমিং পাচ্ছিলেন না। কিন্তু শেষ ওভারে পাল্টে গেল সব। পেসারদের বোলিং আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় অধিনায়ক তামিমের হাতে বিকল্প ছিল মিরাজ ও লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। মিরাজ অভিজ্ঞ, ম্যাচে দারুণ বোলিংও করছিলেন। সব মিলিয়ে তার ওপরই ভরসা রাখেন তামিম।

কিন্তু মিরাজ চাইলেন শুধু জোরের ওপর বল করে যেতে। আরিফুল আরও সপাটে ব্যাট চালিয়ে বল আছড়ে ফেললেন মাঠের বাইরে। ম্যাচ জিতিয়ে ফেটে পড়লেন উল্লাসে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভরে ১৫২/ ৯ (মিরাজ ০, তামিম ১৫, পারভেজ ৫১, আফিফ ২, তৌহিদ ২৭, ইরফান ১১, অঙ্কন ২১, আমিনুল ৫, সুমন ০, তাসকিন ১২*, কামরুল রাব্বি ২*; শফিউল ৪-০-২৭-২, আল আমিন ৪-০-৩২-০, হাসান ৪-০-২৫-২, শহিদুল ৪-০-১৭-৪, সাকিব ৩-০-১৮-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৮-০)।

জেমকন খুলনা: ১৯.৫ ওভারে ১৫৫/৬ (এনামুল ৪, ইমরুল ০, সাকিব ১৫, মাহমুদউল্লাহ ১৭, জহুরুল ৩১, আরিফুল ৪৮*, শামীম ২৬, শহিদুল ৮*; তাসকিন ৪-০-৩৩-২ , সুমন ৪-০-২১-২, মিরাজ ৩.৫-০-৩৬-১, আমিনুল ৩-০-২০-০, কামরুল রাব্বি ৪-০-৩২-১, আফিফ ১-০-১২-০)।

ফল: জেমকন খুলনা ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: আরিফুল হক।