মহামারীকালের ক্রিকেট উৎসব

অনুশীলনে ব্যস্ত তিনটি দল। তাদের পালা শেষ না হতেই মাঠে এসে অনুশীলনের প্রস্তুতি শুরু অন্য দুই দলের। গত কয়েক দিনে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের নিয়মিত চিত্র এটি। ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফের অনেকের সঙ্গেই অনেকের দেখা অনেক দিন পর। অনুশীলনে ঘাম ঝরানোর ফাঁকে চলতে থাকে কুশলাদি জিজ্ঞাসা, গল্প-আড্ডা। ক্রিকেটারদের এই মেলা জানান দিচ্ছে নতুন এক ক্রিকেট উৎসবের।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 03:33 PM
Updated : 23 Nov 2020, 04:26 PM

ব্যাট-বলের কসরত আর এই প্রাণের জোয়ার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপকে ঘিরে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে দীর্ঘ বিরতির পর ব্যক্তিগত অনুশীলন দিয়ে ক্রিকেট ফেরানোর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এরপর ধীরে ধীরে দলীয় অনুশীলন, স্কিল ক্যাম্প আর প্রেসিডেন্ট’স কাপ হয়ে এবার নতুন ধাপ শুরু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে।

পাঁচ দলের এই টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর দেড়টায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে মুশফিকুর রহিমের বেক্সিমকো ঢাকা ও নাজমুল হোসেন শান্তর মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় লড়বে মাহমুদউল্লাহর জেমকন খুলনা ও তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশাল। টুর্নামেন্টের অপর দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম।

কোভিড বিরতির পর দেশের ক্রিকেট কার্যক্রম স্বাভাবিক করে তুলতে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলার অংশ হিসেবেই এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে বিসিবি। এখনকার বাস্তবতায় বিপিএল আয়োজন ভীষণ দুরূহ বলেই শুধু দেশের ক্রিকেটারেদের নিয়ে এরকম একটি টুর্নামেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট’স কাপ দিয়ে দেশে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট শুরু হয়েছে বটে। তবে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে আয়োজিত সেই টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা খানিকটা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি দিয়ে বলা যায় সত্যিকার অর্থে দেশে ফিরছে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট।

প্রেসিডেন্ট’স কাপে তিন দলে জায়গা হয়েছিল ৪৫ জন ক্রিকেটারের। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ দলের স্কোয়াডে আছেন মোট ৮০ জন ক্রিকেটার। কোচ ও অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফদের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই বেশি। পর্যায়ক্রমে সামনে ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত টুর্নামেন্টগুলোও চালু করার পথে এগোচ্ছে বিসিবি।

প্রেসিডেন্ট’স কাপের মতোই টিম হোটেল ও মাঠসহ সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোয় জৈব-সুরক্ষা বলয় তৈরি করে আয়োজন করা হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট। দেশের প্রথম ক্রীড়াভিত্তিক চ্যানেল টি-স্পোর্টস সরাসরি সম্প্রচার করবে সবকটি ম্যাচ।

প্রেসিডেন্ট’স কাপের মতো এই টুর্নামেন্টেও অবশ্য গ্যালারিতে দর্শক রাখার ঝুঁকি নেয়নি বিসিবি। তবে দলগুলির স্পন্সরদের পক্ষ থেকে শখানেক আমন্ত্রিত অতিথি থাকতে পারবেন গ্যালারিতে। স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাধারণত মাঠের পাশে বসার ব্যবস্থা থাকলেও এবার তাদের জন্য আলাদা মঞ্চ করা হয়েছে মাঠ থেকে নিরাপদ দূরত্বে, গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে।

জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সম্ভাব্য সফরের আগে এই টুর্নামেন্ট বিসিবির জন্য একরকম ট্রায়াল। সবকিছু ভালোভাবে শেষ করতে পারলে ক্যারিবিয়ানদের আসতে কোনো বাধা থাকবে না। তাদের সফর দিয়েই দেশে ফিরবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি শুরুর দিনটি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কারণেও। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এ দিনই মাঠের লড়াইয়ে ফিরছেন দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। জেমকন খুলনা দলে ঠাঁই হয়েছে এই অলরাউন্ডারের।

করোনাকালেও দেশে এরকম একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে, মাঠের ক্রিকেট ছাপিয়ে বড় উপলক্ষ্য সেটিই। তবে ক্রিকেটীয় দিক থেকেও টুর্নামেন্টের গুরুত্ব কম নয়। দেশের ক্রিকেটারদের জন্য, বিশেষ করে জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা ও উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য বড় সুযোগ এই টুর্নামেন্ট।

বিপিএলে প্রতি দলে চার জন করে বিদেশি ক্রিকেটার থাকেন একাদশে, সঙ্গে দেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। অন্যদের জন্য তাই খেলার সুযোগই থাকে কম। খেললেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে না বললেই চলে। এই আসর তাদের জন্য বয়ে আনতে পারে অবারিত সুযোগ। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে সম্ভাব্য পাইপলাইনের একটি ধারণাও পাবেন জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন দেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও বেক্সিমকো ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বললেন সেই বাস্তবতাই।

“আমাদের সবার আশা, খুব ভালো একটা টুর্নামেন্ট হবে। এই বছরই প্রথম এরকম একটা লোকাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হচ্ছে। খুবই রোমাঞ্চিত সবাই।”

বিদেশি ক্রিকেটার না থাকায় বিপিএলের মতো জমজমাট আবহ অবশ্যই নেই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম একটি টুর্নামেন্টও দারুণ ব্যাপার, বললেন আরেক সিনিয়র ক্রিকেটার ও জেমকন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

“বিপিএলের আবহ অন্যরকম থাকে, এই টুর্নামেন্টের আবহ আরেক রকম। ওখানে অনেক সময় বড় বড় বিদেশি ক্রিকেটার থাকেন। একই সঙ্গে আমার মনে হয়, এটাও খুবই ভালো টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টে আমরা সবাই ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে আছি।”

তরুণদের জন্য এই টুর্নামেন্ট কত বড় সুযোগ, প্লেয়ার্স ড্রাফটের পর সেটি ব্যাখ্যা করেছিলেন বিসিবি পরিচালক ও এই আসরে ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ।

“আমি মনে করি, এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ, সব তরুণ ক্রিকেটারের জন্য। বিপিএলে হয়ত আমাদের অনেক ক্রিকেটার নিজের পজিশনে ব্যাট করতে পারে না বা ডেথ ওভারে কিংবা ভালো জায়গায় বোলিং করতে পারে না, যেহেতু বিদেশি ক্রিকেটার অনেক থাকে।”

“টপ অর্ডারে যারা ব্যাট করবে…চার-পাঁচে যারা খেলবে বা ম্যাচ শেষ করবে, তারা কেমন করে, এখানে এসব দেখা যাবে। বোলাররাও এখান থেকে শিখবে নতুন বলে বা ডেথ ওভারে কিভাবে বল করতে হয়। তাদেরকেও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে যে বিদেশি ক্রিকেটার নেই। তাদের জন্য এটা বড় সুযোগ।”

সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্ট ঠিকঠাকভাবে শেষ হলে প্রাপ্তির পাল্লা সমৃদ্ধ হওয়ার কথা যথেষ্টই। অপেক্ষা এখন কেবল এই ক্রিকেট উৎসব শুরুর।

৫ দলের স্কোয়াড:

বেক্সিমকো ঢাকা: 

মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, তানজিদ হাসান তামিম, নাসুম আহমেদ, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নাঈম হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপু, আকবর আলি, ইয়াসির আলি রাব্বি, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান রানা, মুক্তার আলি, শফিকুল ইসলাম, আবু হায়দার, পিনাক ঘোষ, রবিউল ইসলাম রবি।

জেমকন খুলনা: 

মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস, হাসান মাহমুদ, আল আমিন হোসেন, এনামুল হক, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, আরিফুল হক, শফিউল ইসলাম, শুভাগত হোম চৌধুরি, শহিদুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, জাকির হাসান, নাজমুল ইসলাম অপু, সালমান হোসেন, জহুরুল ইসলাম। 

মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী: 

নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মেহেদি হাসান, নুরুল হাসান সোহান, ফরহাদ রেজা, মোহাম্মদ আশরাফুল, আরাফাত সানি, ইবাদত হোসেন, ফজলে মাহমুদ রাব্বি, রনি তালুকদার, আনিসুল ইসলাম ইমন, রেজাউর রহমান রাজা, জাকের আলি, রকিবুল হাসান, মুকিদুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম।

গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম: 

মোহাম্মদ মিঠুন (অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, শরিফুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, তাইজুল ইসলাম, শামসুর রহমান, নাহিদুল ইসলাম, সৈকত আলি, মুমিনুল হক, রকিবুল হাসান (জুনিয়র), সঞ্জিত সাহা, মাহমুদুল হাসান জয়, মেহেদি হাসান।

ফরচুন বরিশাল: 

তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, ইরফান শুক্কুর, মেহেদী হাসান মিরাজ, আবু জায়েদ চৌধুরি, তৌহিদ হৃদয়, তানভির ইসলাম, সুমন খান, সাইফ হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, পারভেজ হোসেন ইমন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, আবু সায়েম, সোহরাওয়ার্দী শুভ।