২০ ম্যাচ পর বিচার করতে বললেন তামিম

নিয়মিত দায়িত্ব পাওয়ার পর অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের পথচলাই শুরু হয়নি এখনও। এখনই যেন অনেকে শুনতে পাচ্ছেন ব্যর্থতার সুর। তার নেতৃত্বের অধ্যায় শুরুর আগেই অনেকের মনে জমা হচ্ছে সংশয় ও প্রশ্নের ভীড়। তামিম নিজের অবশ্য তাতে বিচলিত নন বলেই দাবি করলেন। দেশের সফলতম ব্যাটসম্যানের চাওয়া, নেতৃত্বের বিচার করার আগে যেন যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2020, 08:05 AM
Updated : 21 Nov 2020, 08:05 AM

মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটের কারণে গত বছর বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কায় তিনটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম। এরপর গত মার্চে মাশরাফি ওয়ানডের নেতৃত্ব ছাড়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় তামিমকে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপে ওই মাস থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের ক্রিকেট। দায়িত্ব পাওয়ার সাড়ে ৮ মাস হয়ে গেলেও তাই এখনও মাঠের ক্রিকেটে শুরু হয়নি তার নেতৃত্বের অধ্যায়।

কদিন আগে প্রেসিডেন্ট’স কাপ ওয়ানডেতে টুর্নামেন্টে অবশ্য দেখা গেছেন অধিনায়ক তামিমকে। সেই টুর্নামেন্টে ফাইনালে উঠতে পারেনি তার দল। সামনে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে তিনি নেতৃত্ব দেবেন ফরচুন বরিশালকে। যথারীতি তামিমের অধিনায়কত্বের দিকে চোখ থাকবে অনেকের। সব ঠিক থাকলে বাংলাদেশের হয়ে তাকে টস করতে দেখা যাবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে।

নেতৃত্ব নিয়ে তার বাড়তি আবেগ না থাকা, এটির প্রতি অনীহা ও তাকে নিয়ে প্রচলিত নানা ধারণায় অনেকেই সন্দিহান অধিনায়ক তামিমের কার্যকারিতা নিয়ে। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের আগে শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠল, নেতৃত্ব তার জন্য চাপ হয়ে উঠছে বা উঠবে কিনা। সেই চাপ চাপানোর দায় তামিম দিলেন সংবাদকর্মীদের।

মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের দায়িত্ব পেয়েছেন তামিম।

“ অধিনায়কত্বের চাপ… আমি তো এখনো পর্যন্ত ওই রকম কোনো চাপের ম্যাচই খেলিনি! প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট হতে হবে তো… অধিনায়কত্বের চাপ এটা আসলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) বানানো। আমি এখনও কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিনি (দায়িত্ব পাওয়ার পর)।”

তামিমের মতে, নেতৃত্ব নিয়ে কাঁটাছেড়া করার আগে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত।

“ আমি যেদিন অধিনায়কত্ব পেয়েছি, ওই দিনই বলেছি যে, আপনারা বিচার করবেন ৬ মাস বা ১ বছর পর। পৃথিবীর যত বড় অথবা ছোট নেতাই হোক, দুই ম্যাচ-তিন ম্যাচ পর আপনারা (সাংবাদিকরা) শুরু করে দেন ক্যাপ্টেন্সির চাপ... এটা শুধু আমার ব্যাপার নয়, যে কারও ক্ষেত্রেই।”

“ একটা বাচ্চা হাঁটতে কিন্তু ৯ মাস সময় নেয়… একদিনে না হাঁটলে তো আপনি বলতে পারেন না যে সে হাঁটতে পারে না। সময় লাগবেই।  অধিনায়কত্ব আমার খেলায় কতটা প্রভাব ফেলছে, সেটা অন্তত ২০ ম্যাচ পর বিচার করবেন,… কিংবা ১০-১৫ ম্যাচ পর। দুই-তিন ম্যাচ পর সেটা করতে পারেন না।”

ক্যারিয়ারে অনেকবারই তামিম বলেছেন, নেতৃত্ব নিয়ে খুব উৎসাহী তিনি নন। এই প্রসঙ্গেও সেটি মনে করিয়ে দিলেন আরেকবার।

“ আমার কোনো সমস্যা হয় না ভাই (নেতৃত্বের চাপ নিয়ে)… ওটা নিয়ে এত চিন্তাও করি না।  নেতৃত্ব নিয়ে অনেকবারই বলেছি, এটা এমন নয় যে ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখেছি। কখনোই স্বপ্ন দেখিনি দেশের অধিনায়ক হওয়ার। বরং সুযোগটা এসেছে আমার কাছে। চেষ্টা করব ভালোভাবে করতে।”

“ ভালো হবে বা খারাপ, সেটা সময়ই বলবে। অধিনায়ক আমি হই বা পরে যে হোক, কিংবা আগে যে ছিল… ভালো বা সফল অধিনায়ক হতে হলে অনেক সময় দিতে হবে। এক সিরিজ বা দুই সিরিজে আপনি যদি মনে করেন কাজ হচ্ছে না, এটা  আসলে কারও জন্য ভালো নয়। শুধু নিজের দেখে বলছি না। আমার জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য, কারও জন্যই ভালো নয়। কিছু সময় দিতেই হবে।”

একজন অভিজ্ঞ ও সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে দলের প্রতি যে দায়িত্ব, সেটার জন্য অধিনায়ক হওয়ার জরুরি বলেও মনে করেন না তামিম।

“ আমার কাছে যেটা মনে হয়, অধিনায়কের দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। সবার দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। আমি চেষ্টা করব যতটুকু সম্ভব সবকিছু করার। এরপর দেখতে হবে কী হয়, কীভাবে সাড়া দেয়।”

“ তবে এটা আমি অধিনায়ক না থাকলেও করি। আমার যে অধিনায়ক হতে হবে এটা করতে হলে, তা বিশ্বাস করতে পারি। নেতা হতে হলে অধিনায়ক হওয়া জরুরি নয়। নেতা আপনি যে কোনো সময়ই হতে পারেন। ভালো নেতা হওয়ার জন্য অধিনায়কত্বের দরকার নেই। নেতা হিসেবে কথার চেয়ে বেশি কাজ করতে হবে।”