ফিটনেস উৎসবে মুগ্ধতা ছড়ালেন ক্রিকেটাররা

প্রথম গ্রুপের ফিটনেস পরীক্ষা শুরু হওয়ার সময় ছিল সকাল ১০টা। সময়ের বেশ আগে থেকেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ক্রিকেটারদের আনাগোণা শুরু। প্রিয় আঙিনায় ৮-৯ মাস পর পা রাখলেন তাদের অনেকেই। পরস্পরের সঙ্গে দেখা হলো দীর্ঘদিন পর। সব মিলিয়ে ক্রিকেটারদের যেন মিলনমেলা। মূল উপলক্ষ ফিটনেস পরীক্ষা, সেটিও দারুণভাবে উতরে গেলেন প্রায় সবাই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2020, 12:31 PM
Updated : 9 Nov 2020, 12:31 PM

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের আগে ক্রিকেটারদের দুই দিনব্যাপী ফিটনেস পরীক্ষার প্রথম দিন ছিল সোমবার। শুরুর দিনে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল যাকে ঘিরে, সেই সাকিব আল হাসানের ফিটনেস পরীক্ষাই হয়নি এ দিন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা অলরাউন্ডারের পরীক্ষা হতে পারে বুধবার।

জাতীয় দলের স্কিল ক্যাম্প, হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড (এইচপি) ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটাররা ফিটনেসের প্রক্রিয়াতেই ছিলেন বলে তাদের বাইরের ক্রিকেটারদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে এই ফিটনেস পরীক্ষার। মোট ১১৩ ক্রিকেটারকে ডাকা হয়েছে এখানে।

বরাবরের মতোই ‘বিপ টেস্ট’ দিয়ে পরখ করা হচ্ছে ফিটনেস। স্কোরের ন্যূনতম মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবার ১১। প্রথম দিনে দু-একজন ছাড়া উতরে গেছেন সবাই। দারুণ চমকে দিয়েছেন কেউ কেউ।

একজন যেমন এনামুল হক জুনিয়র। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের দ্বিতীয় সফলতম বোলার এই বাঁহাতি স্পিনার একদমই লিকলিকে হয়ে গেছেন, ফিরে গেছেন যেন সেই টিনএজ বয়সে! দর্শনধারীতে যেমন, গুণের বিচারেও ঠিক তেমন। বিপ টেস্টে ১২.২ স্কোর করেছেন তিনি।

৩৪ ছুঁইছুঁই এই স্পিনার বললেন, লকডাউনের একটি ইতিবাচক দিক ছিল ফিটনেস নিয়ে কাজ করা।

“আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট আমি এখন। জাতীয় দলে যখন খেলেছি, তার চেয়ে এখন ৬০ ভাগ বেশি ফিট বলতে পারি। লকডাউনে প্রথম তিন মাস তো বের হতে পারিনি, তখন ট্রেডমিলে রানিং করেছি। খাদ্যাভ্যাস বদলেছি। তিন মাসের পর মাঠে গিয়ে খালেদ (সৈয়দ খালেদ আহমেদ), রাহি (আবু জায়েদ চৌধুরি), ওদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি ফিটনেস নিয়ে।”

“গত ৭ মাসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি সুন্দর পরিবর্তন যদি এসে থাকে, আমি বলব ফিটনেস নিয়ে এসেছে। লকডাউনে আমাদের ক্রিকেটাররা প্রথম থেকেই নিজেদের সাধ্যমতো যে পরিশ্রম করেছে, সেটির প্রতিফলন এখানে পড়ছে। আগে যারা ৯ বা ১০ স্কোর করত, এবার প্রায় সবাই বিসিবির দেওয়া মানদণ্ডে পাশ করেছে।”

ঘরোয়া ক্রিকেটের দীর্ঘদিনের আরেক সৈনিক শাহরিয়ার নাফিসও বললেন, ফিটনেস নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটারদের মনোভাব বদলে গেছে অনেকটাই।

“আমাদের ফ্যাসিলিটিজের একটু দুর্বলতা রয়েছে। তারপরও যখন থেকে বেঞ্চ মার্ক ১১ সেট করে দিয়েছে, তখন থেকে আমরা অনেক সচেতন হয়েছি এবং আজকের ফিটনেস টেস্টে দেখা যাচ্ছে যে প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ ক্রিকেটার হয়তো পাশ করে যাবে। এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক। সার্বিক পরিকল্পনা আমার কাছে মনে হয়েছে বেশ ইতিবাচক।”

“আমি দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিলাম, প্রথম রাউন্ডে ৭ জন ছিল, পরের রাউন্ডে ৭ জন। ১৮ জনের মধ্যে মাত্র একজন ১১ করতে পারেনি। অন্য সবাই  ১১ সহজেই করতে পেরেছে। এতে একটা ব্যাপার প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের যারা জাতীয় দলের বাইরে আছেন, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন, তারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ফিটনেস নিয়ে, স্কিল নিয়ে।”

ঘরোয়া ক্রিকেটের আরেক পরিচিত মুখ ফজলে মাহমুদ রাব্বি জানালেন, মাঠে ফেরার তাড়না থেকেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন অনেকে।

“ফিটনেস পরীক্ষার খবর যখন পেলাম, খুব ভালো লেগেছে। আমি অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গেই কথা বলেছি। সবাই খুব রোমাঞ্চিত ছিল যে এই দিনটি কবে আসবে, কখন আমরা আবার মাঠে নামব। সবাই এখন মাঠে নামতে মুখিয়ে আছি।”

বিসিবির হেড অব ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স নিকোলাস লি দারুণ সন্তুষ্ট ক্রিকেটারদের ফিটনেসে। গত কিছুদিনে জাতীয় দলের স্কিল ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ক্রিকেটার ও এইচপির ক্রিকেটারদের ফিটনেস পরখ করেছেন লি, কাজ করেছেন তাদের নিয়ে। এবার ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ফিটনেসের অবস্থা দেখলেন। ফিটনেসের মান ও মানসিকতায় তিনি খুশি।

“ওদের প্রচেষ্টা দেখে, নানা প্রশ্ন শুনে আমার মনে হয়েছে যে ওরা শারীরিকভাবে ফিট হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পেশাদার পর্যায়ে সবচেয়ে পরিশ্রমী যে দলগুলো আমি দেখেছি, ওরা তার মধ্যে থাকবে।  ছেলেদের মনোভাব খুবই ভালো। বিভিন্ন কিছু করার জন্য প্রশ্ন করে, সবসময় উন্নতি করতে চায়।”

“আমি জানি না আগে এটি কী রকম ছিলো কারণ আমি এখানে ছিলাম না। ৬ মাস হলো এখানে এসেছি। এই সময়ে যা দেখেছি, ক্রিকেটাররা তাদের ফিটনেস নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করছে।”

ঘরোয়া ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে গত দুই মৌসুম ধরেই বেশ কড়াকড়ির চেষ্টা করছেন নির্বাচকরা। এবারের এই ফিটনেস পরীক্ষার আয়োজন সেটিরই অংশ। প্রথম দিনে ক্রিকেটারদের ফিটনেস স্বস্তি দিয়েছে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে।

“বিপ টেস্ট ভালোই দিয়েছে সবাই। মোটামুটি যে গ্রুপটা শেষ হয়েছে, প্রায় ৯০ শতাংশই ভালো দিয়েছে। এতদিন এরা ফিটনেসের বাইরে ছিল, তারপরও ভালোই করেছে। কালকে আরেকটা গ্রুপের আছে। সবাই একটা ভালো অবস্থানে আছে বলেই আশা করছি।”

ফিটনেস টেস্ট শেষে আগামী বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্লেয়ার্স ড্রাফট হবে ঢাকার একটি হোটেলে।