নতুন অ্যাকশনে তাইজুলের রান আপ আগের চেয়ে ছোট হয়েছে আরেকটু। বল ছাড়ছেন তিনি বুকের কাছ ঘেঁষে হাত নিয়ে, আগের চেয়ে শরীরের আরও কাছ থেকে। খুব বেশি জটিলতাও নেই এই অ্যাকশনে। বোলিংয়ে খুব বেশি ‘এফোর্ট’ দিতে হচ্ছে বলেও মনে হয় না খালি চোখে।
ভেটোরির মতো অ্যাকশন বাদ দিয়ে আবার কেন নতুন অ্যাকশন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেটির প্রেক্ষাপট শোনালেন তাইজুল।
“ওই অ্যাকশনে একটা জায়গায় একটু সমস্যা হচ্ছিল। ভেটোরি তো অনেক লম্বা, তার জন্য হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু আমার পা একটু বেশি সামনে পড়ে যাচ্ছিল আর শরীর ডাউন হয়ে যাচ্ছিল।”
“এখন যে অ্যাকশনে করছি, এটা অনেক স্মুথ। খেয়াল করলে দেখবেন, জটিল কিছু এখানে নেই। বেশ খাড়া অ্যাকশন, পা বড় হয়ে যাচ্ছে না। কোমর থেকে বেশ শক্তিও পাচ্ছি এখন। নেটে যে কদিন বোলিং করলাম, দেখলাম যে এই অ্যাকশনে ফ্লাইট খুব ভালো হচ্ছে, আরও ভালো জায়গায় বল থাকছে। ব্যাটসম্যান কাট করা বা ড্রাই করার জায়গা পাচ্ছে কম। আরও অভ্যস্ত হলে আশা করছি বাড়তি বাউন্স মিলবে।”
করোনাভাইরাসের প্রকোপে পড়া বিরতি শেষে ক্রিকেট শুরুর পর নিজের সহজাত অ্যাকশনে প্রথম বদল আনেন তাইজুল। ভেটোরির অ্যাকশনের আদলে গড়া সেই অ্যাকশনে বাড়তি বাউন্সের পাশাপাশি বৈচিত্রও বাড়ছে বলে দাবি ছিল তার। কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্ট’স কাপে ওই অ্যাকশনে বোলিং করেন তিনি। টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচে খুব খারাপ করেননি বোলিং, আবার খুব ভালোও ছিল না।
মূলত দেশের বাইরে ভালো পারফর্ম করা ও সীমিত ওভারেও বাংলাদেশ দলে থিতু হওয়ার তাড়না থেকেই বদলটা তিনি এনেছিলেন। এখন সেটি বাদ দিয়ে আরেক দফা বদলের পেছনে একই তাগিদের কথাই তাইজুল বললেন আবার।
“জাতীয় দলের খেলা থাকলে এসব সম্ভব হতো না। লম্বা সময় খেলা নেই বলেই নানা কিছু পরীক্ষা করে দেখছি। অনেক বিরতি এখন, লম্বা সময় নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। সফল হবই, এটার নিশ্চয়তা নেই। তবে পরীক্ষা করে দেখতে তো ক্ষতি নেই!”
একটা ক্ষতির শঙ্কা অবশ্য থাকছেই। এসব পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে গিয়ে আবার নিজের আসল সত্ত্বাই না হারিয়ে যায়! এমনিতে ক্রিকেটারদের টেকনিক-স্কিলে টুকটাক পরিবর্তন বা ঝালাই সবসময়ই চলতে থাকে। কিন্তু ২৮ বছর বয়সে এসে অ্যাকশনে এত বড় বদল বোলিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না তো? তাইজুল এখানে অভয় দিলেন।
“সেরকম শঙ্কা নেই বলেই মনে করি। কারণ, আগের অ্যাকশনে আমি যখন-তখন ফিরে যেতে পারি। যখনই মনে হবে নতুন কিছুতে কাজ হচ্ছে না, তখনই পুরোনো অ্যাকশনে ফিরব। বোলিংও আশা করি, আগের মতো থাকবে। এটা নিয়ে সন্দেহ নেই।”
নতুন এই অ্যাকশন নিয়ে স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেটোরির সঙ্গে এখনও কথা হয়নি তাইজুলের। তবে সবুজ সঙ্কেত পেয়েছেন জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছ থেকে।
দেশের মাটিতে টেস্টে তাইজুল দলে অপরিহার্য হলেও দেশের বাইরে অনিয়মিত। রেকর্ডও বেশ বাজে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি দলে থিতুই হতে পারেননি কখনও। অভিষেক ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করলেও বাংলাদেশের হয়ে ৬ বছরে ওয়ানডে খেলতে পেরেছেন মোটে ৯টি, টি-টোয়েন্টি কেবল ২টি। তবে এবার লাল বলের পাশাপাশি বিসিবির সাদা বলের চুক্তিতেও রাখা হয়েছে তাইজুলকে। তিনিও নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে চান নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য।
“এই পরীক্ষা আর এত পরিশ্রম, সবকিছুই করছি ক্যারিয়ার আরও লম্বা করার জন্য। দলকে আরও কিছু দেওয়ার জন্য। অন্তত আরও ৬-৭ বছর বা আরও বেশি সময় যেন খেলতে পারি। টিকে থাকতে হলে বোলিং এক জায়গায় রাখলে চলবে না। চেষ্টা করে যাচ্ছি, দেখা যাক কতটা পারি।”
অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারলে সামনে বিসিবির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে নতুন এই অ্যাকশনেই বোলিং করবেন বলে জানালেন তাইজুল।