গত মঙ্গলবার এইচপি স্কোয়াড নিয়ে কাজ শুরু করেছেন র্যাডফোর্ড। ২৬ জনের এই স্কোয়াডে আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আমিনুল ইসলাম বিপ্লবের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া তরুণ ক্রিকেটার যেমন আছেন, তেমনি আছেন আরও একঝাঁক উঠতি প্রতিভা।
প্রথম তিন দিনের অনুশীলনে র্যাডফোর্ডকে দেখা গেছে এইচপির ক্রিকেটারদের টেকনিক নিয়ে অনেক সময় দিতে, নিবিড়ভাবে কাজ করতে। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সেটির কারণ ব্যাখ্যা করলেন র্যাডফোর্ড।
“আমি পুরো সময়টিতেই ছেলেদের টেকনিক নিয়ে কাজ করব, ওদের পরীক্ষা নেব, টেস্ট মাচের স্বাদ দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি কালকে একটি প্রেজেন্টেশনে ওদেরকে বলেছি, বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটারদের দিকে যদি তাকাও, কেন উইলিয়ামস, বিরাট কোহলি, বেন স্টোকস, স্টিভেন স্মিথ… ওরা সব সংস্করণে ভালো, কারণ ওরা টেস্টে ভালো। তাদের টেকনিকের মৌলিক ভিত মজবুত।”
“ভিত্তি মজবুত হলে এরপর সেখান থেকে টি-টোয়েন্টি বা ৫০ ওভারের খেলায় উন্নতি করা যায়। আমি এই ছেলেদের টেকনিক মজবুত ও আঁটসাঁট করার চেষ্টা করব। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে নিয়ে পরে কাজ করব।”
টেকনিক নিয়ে জোর দেওয়ার পেছনের গল্পও শোনালেন র্যাডফোর্ড। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ দল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়, র্যাডফোর্ড তখন ছিলেন ক্যারিবিয়ানদের সহকারী কোচ। সেই সিরিজে টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি দেখেছেন বাংলাদেশের দুই চেহারা। এবার এইচপির দায়িত্ব পাওয়ার পর তাই নিজের করণীয় বুঝে নিতে সময় লাগেনি তার।
“দুই বছর আগে ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের সময় আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সঙ্গে ছিলাম। লাল বলের সিরিজে দেখা গেছে, তিন দিনেই ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, মিগুয়েল কামিন্স ও অন্য পেসারদের বোলিংয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার স্রেফ উড়ে গেছে। সাদা বলের সিরিজে দেখা গেল অন্য বাংলাদেশকে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ তারা জিতে নিল।”
এই দফায় এইচপির ক্যাম্প চলবে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত। র্যাডফোর্ড জানালেন, এই সময়টুকুতে শুধু বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট নিয়েই কাজ করা হবে।
“প্রথম দফার এই দুই সপ্তাহ সময় লাল বলের ক্রিকেট নিয়েই কাজ হবে। বোলিং মেশিন ব্যবহার করা, শর্ট বল, সুইং বল সামলানো, সবকিছু এমনভাবে সাজানো হয়েছে টেস্ট টেকনিক নিয়ে কাজ করা যায়। যেখানে কাজ করা জরুরি, সেসব দিক নিয়ে কাজ করা যায়।”
এই সময়ের বাস্তবতা অবশ্য জানেন র্যাডফোর্ড। সীমিত ওভারের ক্রিকেট, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে লোকের আগ্রহ বেশি। উঠতি ক্রিকেটারদেরও ভাবনায় এসব থাকে বেশি। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট গুরুত্ব পায় কম। র্যাডফোর্ড সেখানেই বদল দেখতে চান।
“এখন বিশ্বক্রিকেটেই সীমিত ওভারের ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা বেশি। লোকে আইপিএল দেখছে, ৫০ ওভারের ক্রিকেট দেখছে। এখানে স্থানীয় কোচদের কাছ থেকে জেনেছি, এখানকার তরুণ ক্রিকেটাররা লাল বলের ক্রিকেট খুব বেশি খেলেনি। ওদের মানসিকতা তাই শুধু রান করা নিয়েই। কিন্তু ব্যাটসম্যানের পেছনে যখন তিন স্লিপ, একটি গালি থাকবে, তখন বলের পেছনে যেতে হবে, বল ছাড়তে হবে।”
“আমি চাই টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ সত্যিই প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করুক। সেটা শুধু দেশের মাটিতে নয়, দেশের বাইরেও। অস্ট্রেলিয়ায় মিচেল স্টার্ককে খেলতে হলে এখানেও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সেই টেকনিক থাকতে হবে, সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এটিই আমার লক্ষ্য, আমার দর্শন। এটি নিয়েই কাজ করছি।”