মাহমুদউল্লাহ একাদশে সুমনের জায়গা পাওয়ার প্রেক্ষাপট ছিল বেশ নাটকীয়। দলটির মূল স্কোয়াড থেকে শুরুতে চোট নিয়ে ছিটকে যান মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। তার বদলে স্ট্যান্ড বাই তালিকা থেকে নেওয়া হয় আবু হায়দারকে। এরপর এই দলের জন্য আরেকটি ধাক্কা হয়ে আসে তরুণ পেসার হাসান মাহমুদের চোট।
মাহমুদউল্লাহদের স্ট্যান্ড বাই তালিকায় তখন আছেন কেবল দুই বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল হক ও হাসান মুরাদ। পেসারের বদলি লাগবে আরেকজন পেসার। বাধ্য হয়ে তাই শান্ত একাদশের স্ট্যান্ড বাই থেকে সুমনকে নেওয়া হলো মাহমুদউল্লাহর দলে। রোববারের ফাইনালে সেই সুমনই ধসিয়ে দিলেন শান্তদের ব্যাটিং লাইন আপ।
৩৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সুমন পেয়েছেন জোড়া পুরস্কার, ফাইনালের ম্যান অব দা ম্যাচ ও ফাইনালের সেরা বোলার।
সুমনের বোলিং দেখলে এমনিতে খুব ভয়ঙ্কর কিছু মনে হয় না। রান আপ ছোট, বলের গতিও খুব বেশি নয়। তার বড় অস্ত্র লাইন-লেংথ, ছোট সুইং আর লেংথ থেকে বাড়তি বাউন্স। বল স্কিড করে বেশ। এসব মিলিয়েই ধোঁকা খায় ব্যাটসম্যানরা। উইকেট শিকারের প্রবণতা তার দারুণ, ব্যাটসম্যানরা তার শিকারে পরিণত হন নিয়মিতই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের মূল স্রোতে সুমনের উঠে আসা অন্যদের থেকে একটু আলাদা। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত কোনো ম্যাচ তিনি খেলেননি কখনোই। কিন্তু গত দুই বছরে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করেছেন বেশ। পারফর্ম করেছেন বাংলাদেশ ইমার্জিং দলে, বিসিবি একাদশে।
ঢাকা লিগে সেবার বিকেএসপির হয়ে ১৫ উইকেট নিয়ে নিজের আগমণী জানান দেন তিনি। ওই বছরই জায়গা পান বাংলাদেশ ইমার্জিং দলে (অনূর্ধ্ব-২৩)। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলার পর ইমার্জিং দলের হয়ে যান ভারত সফরে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে দেশের মাটিতে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে ১৪ উইকেট নিয়ে তিনিই হন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ডিসেম্বরে এই দলের হয়ে সোনা জেতেন দক্ষিণ এশিয়ান গেমস ক্রিকেটে।
ইমার্জিং দলে খেলার ফাঁকে সফরকারী জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিসিবি একাদশেও খেলে ফেলেন। চট্টগ্রামে আফগানদের বিপক্ষে দুই দিনের ম্যাচে দারুণ বোলিংয়ে নেন ৩ উইকেট।
এভাবেই ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে এগিয়ে চলেছেন সুমন। এই টুর্নামেন্টও সেটির একটি প্রমাণ। ফাইনালের আগে ২ ম্যাচ খেলে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। ফাইনালে ছাপিয়ে গেলেন সবাইকে।
যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে বড় কোনো আসর এটি নয়, তারপরও দেশের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে নায়ক হতে পারা তার সামনে এগিয়ে চলার পথে আত্মবিশ্বাসের বিশাল রসদ হবে নিশ্চিতভাবেই।