প্রেসিডেন্ট’স কাপের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে তামিম একাদশের বিপক্ষে শান্ত একাদশের জয় ৭ রানে।
চার ম্যাচে তিন জয়ে পয়েন্ট তালিকার সবার ওপরে থেকে ফাইনালে পা রাখল তারুণ্য নির্ভর শান্ত একাদশ। এই ম্যাচে তামিমরা হেরে যাওয়ায় ফাইনালে উঠে গেল মাহমুদউল্লাহ একাদশও। তামিমদের জয় মোটে একটি।
শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন যিনি, সেই সাইফ উদ্দিন হতে পারতেন ম্যাচের নায়ক। অসাধারণ বোলিংয়ে নেন তিনি ৫ উইকেট। শান্ত একাদশ আটকে যায় ১৬৫ রানে। বৃষ্টিতে ৪১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে তামিমদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৪। রান তাড়ায় একসময় পথেই ছিল তারা। কিন্তু ৩০ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে দলটি অলআউট হয় ১৫৬ রানে।
শেষ দিকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে শান্তদের জয়ের নায়ক তাসকিন আহমেদ। শুধু গুরুত্বপূর্ণ উইকেটই নেননি, পুরনো বলেও গতি ও আগ্রাসনে চাঙা করে তোলেন তিনি দলকে। ৪ উইকেট নিয়ে এই ফাস্ট বোলারই ম্যাচের সেরা।
অসাধারণ বোলিং করেন তাসকিনের নতুন বলের সঙ্গী আল আমিন হোসেন; ৯ ওভারে ১৮ রানে নেন ১ উইকেট।
ম্যাচের শেষটা যেমন দারুণ করেন শান্তরা, শুরুটা ছিল ঠিক উল্টো। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা ধুঁকতে থাকে শুরু থেকেই।
ম্যাচের তৃতীয় ওভারে সাইফ উদ্দিনের স্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শটে ফেরেন সৌম্য সরকার। টুর্নামেন্টের চার ইনিংসে এই বাঁহাতি ওপেনারের রান মোট ৪৫।
এই ম্যাচেও দলের ত্রাতা হতে পারেননি অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। মুস্তাফিজের প্রথম বলেই কাটারে ক্যাচ তুলে দেন মিড অনে।
২৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে দল। মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন আবারও উদ্ধার করেন দলকে। আগের ম্যাচে ১৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন। এবার দুজনের জুটিতে আসে ৯০ রান।
৫১ করে মুশফিকের বিদায়ে ভাঙে জুটি। সাইফকে উড়িয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শরিফুল ইসলামের দারুণ ক্যাচে আউট হন তিনি।
এরপর আফিফও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। মেহেদিকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে শেষ হয় তার ৪০ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংস।
তৌহিদ হৃদয়, ইরফান শুক্কুররা আগের ম্যাচগুলিতে বড় অবদান রেখেছিলেন দলে। তবে এদিন পারেননি। হৃদয়কে বোল্ড করেন সাইফ। মুস্তাফিজের লো ফুল টস স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কায় ওড়ান ইরফান, কিন্তু পা দিয়ে ভেঙে দেন স্টাম্প। হিট উইকেট!
দারুণ সব ইয়র্কারে সাইফ উদ্দিন এরপর দাঁড়াতে দেননি লোয়ার অর্ডারকে। ৩৬ রানে শান্ত একাদশ হারায় শেষ ৬ উইকেট।
২৬ রানে ৫ উইকেট নেন সাইফ। টুর্নামেন্টে এই প্রথম ৫ উইকেট পেলেন কোনো বোলার। ১২ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি।
দারুণ বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান।
লক্ষ্য খুব কঠিন ছিল না, তবে এই টুর্নামেন্টে তামিমদের ব্যাটিং ফর্মও যাচ্ছেতাই। তামিম ও এনামুল হকের উদ্বোধনী জুটি তাই ছিল বেশ সাবধানী। তাতেও অবশ্য লাভ হয়নি। তাসকিনের বলে এনামুল ফিরে যান ৭ রানেই।
পরের জুটিতে সেই ধাক্কা সামাল দেয় তারা। সেখানে অগ্রনী ভূমিকা অধিনায়কেরই। তিনে নামা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন প্রথম রানের দেখা পেতে খেলেন ১৭ বল। শুরুতে নড়বড়ে ছিলেন তামিমও। উইকেটে সময় কাটিয়ে পরে খুঁজে পান ছন্দ। তাসকিনের এক ওভারে মারেন তিন বাউন্ডারি। দুজনের জুটির ৫০ রানে অঙ্কনের অবদান ছিল কেবল ৮। পরে অঙ্কনও কিছুটা খুঁজে পান আত্মবিশ্বাস।
৬৮ রানের এই জুটি শেষ হয় অঙ্কনের রান আউটে। সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন তাসকিন।
৫৭ রানে তামিমের বিদায় থেকেই দলের পেছন দিকে হাঁটার শুরু। বাজে শটের ধারা এরপর ধরে রাখেন ইয়াসির, মোসাদ্দেক, মেহেদিরাও। ধুঁকতে ধুঁকতে ৩৩ বলে ৬ রান করে নাসুমকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন ইয়াসির। তাসকিনের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেক। তাসকিনকেই আপার কাট করে থার্ডম্যানে ধরা পড়েন মেহেদি।
ক্রমে বাড়তে থাকে প্রয়োজনীয় রান রেট। আকবর আলিকেও ফেরান তাসকিন। ৩ ওভারে যখন প্রয়োজন ২৭, তাসকিনের বলে বিশাল এক ছক্কায় ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান মিঠুন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও পূরণ করতে পারেননি দলের আশা। ২৯ রানে বিদায় নেন আল আমিনের বলে।
শেষ ওভারে তামিমদের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। সৌম্য সরকারের করা ওভারের তৃতীয় বলে সাইফ ছক্কা মারেন লং অন দিয়ে। কিন্তু বোলিংয়ের নায়ক শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে নায়ক হতে পারেননি। পরের বলে আবার ছক্কার চেষ্টায় ধরা পড়েন। দারুণ ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতেন শান্তরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শান্ত একাদশ: ৩৯.৩ ওভারে ১৬৫ ( পারভেজ ১০, সৌম্য ৭, শান্ত ৫, মুশফিক ৫১, আফিফ ৪০, তৌহিদ ১৩, শুক্কুর ১১, নাসুম ১২*, রিশাদ ০, তাসকিন ২, আল আমিন ১*; সাইফ উদ্দিন ৮.৩-১-২৬-৫, মেহেদি ৮-১-৩৩-২, খালেদ ৮-০-৩৪-০, মুস্তাফিজ ৮-১-৩৬-৩ শরিফুল ৭-০-৩৫-০)।
তামিম একাদশ: (লক্ষ্য ৪১ ওভারে ১৬৪) ৪০.৪ ওভারে ১৫৬ (তামিম ৫৭, এনামুল , অঙ্কন ২২, ইয়াসির ৬, মিঠুন ২৯, মোসাদ্দেক ৬, মেহেদি ৪ , আকবর ০, সাইফ ; তাসকিন ৮-০-৩৬-৪, আল আমিন , আবু জায়েদ , নাসুম ৮-০-২৭-১, আফিফ ৩-০-১০-০, রিশাদ ৪-১-১৭-০)।
ফল: শান্ত একাদশ ৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তাসকিন আহমেদ
ব্যাটসম্যান অব দা ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম
বোলার অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন
ফিল্ডার অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল