দলের জয়ে উজ্জ্বল রুবেল-মাহমুদুল-মাহমুদউল্লাহ

ফাইনালের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে জয় ছাড়া উপায় ছিল না। সেই লড়াইয়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহ। রুবেল হোসেনের দারুণ বোলিংয়ের পর তরুণ মাহমুদুল হাসান ও অধিনায়কের জোড়া ফিফটিতে কাঙ্ক্ষিত জয়টি পেল মাহমুদউল্লাহ একাদশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2020, 11:43 AM
Updated : 19 Oct 2020, 05:16 PM

প্রেসিডেন্ট’স কাপের পঞ্চম ম্যাচে তামিম একাদশের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ একাদশ জিতেছে ৪ উইকেটে।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার ইয়াসির আলি ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের ফিফটিতে তামিমরা ৫০ ওভারে তোলে ২২১ রান।

আগের দুই ম্যাচে ৩টি করে উইকেট নেওয়ার পর এবার রুবেল হোসেনের শিকার ৩৪ রানে ৪ উইকেট। এখনও পর্যন্ত যা টুর্নামেন্টের ব্যক্তিগত সেরা বোলিং।

মাহমুদউল্লাহ একাদশের রান তাড়ায় মাহমুদুল করেন ৫৮, দলকে জয়ের কাছে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ৬৭ রানে। ইমরুলের ৪৯ রানের ইনিংসটিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তারা জিতে ৫ বল বাকি রেখে।

ম্যাচের শুরুটা ছিল রুবেলের দারুণ বোলিংয়ের ধারাবাহিকতা দিয়ে। ম্যাচের প্রথম বলে লেগ স্টাম্পে বল করে চার হজম করার পরও তার প্রথম স্পেল ছিল ৫-৩-৫-৩!

অবশ্য দারুণ বোলিং করলেও উইকেটগুলো ছিল ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে পাওয়া উপহার। বাজে শটের মহড়ায় নেমেছিলেন তামিমরা।

উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামেন তামিমরা। টুর্নামেন্টের পাঁচ ম্যাচে প্রথমবার টস জিতে ব্যাটিং নিল কোনো দল।

কিন্তু একের পর এক আত্মঘাতী শটে সেই সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলেন তারাই। একেকজন যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন, কে কতটা বাজে শট খেলতে পারেন।

দুই তামিমের জুটি আগের দুই ম্যাচে টিকতে পারেনি দুই ওভারও। এই ম্যাচে দুই ওভার টিকে তৃতীয় ওভারেই শেষ। রুবেলের অনেক বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে তানজিদ তামিম তুলে দেন স্লিপে নাঈম শেখের হাতে।

তামিম ইকবাল যে বলে আউট হলেন, আবু হায়দারের সেই ডেলিভারি না খেললে হয়তো ওয়াইড হতো। অনেক কষ্টে বলে ব্যাট ছুঁইয়ে তামিম ক্যাচ দেন পয়েন্টে।

এনামুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুনও একই পথের পথিক। রুবেলের বেশ বাইরের বল শর্ট কাভারে তুলে দেন এনামুল, কিপারের গ্লাভসে মিঠুন।

নবম ওভার তখন চলছে, স্কোরবোর্ডে রান মোটে ১৭, উইকেট নেই ৪টি।

সেই বিপর্যয় থেকে ইয়াসির ও অঙ্কনের জুটি উদ্ধার করে দলকে। আবু হায়দারের বলে দারুণ এক অন ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেন ইয়াসির। এরপর রান পেতে তাকে ভুগতে হয় অনেকক্ষণ। কিন্তু হাল না ছেড়ে লড়ে গেছেন। শুরুতে টাইমিং ঠিকঠাক না হলেও লড়াই করে গেছেন অঙ্কনও।

সময়ের সঙ্গে থিতু হয়ে এক-দুই করে রান নিতে শুরু করেন দুজন। সুযোগ পেলে খেলেছেন বড় শট। মেহেদী হাসান মিরাজকে লং অন ও লং অফ দিয়ে দুটি ছক্কায় ওড়ান অঙ্কন, মাহমুদউল্লাহকে ওয়াইড লং অন দিয়ে ইয়াসির।

ফিফটির পর ইয়াসির রানের গতি বাড়াতে শুরু করেছিলেন আরও। দৃষ্টিনন্দন দুটি ইনসাইড আউটে বাউন্ডারিও মারেন। বড় কিছুর জন্য যখন তাকে মনে হচ্ছিল তৈরি, তখনই রান আউট হয়ে যান ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিতে গিয়ে। ৮১ বলে করেন তিনি ৬২।

পঞ্চম উইকেটে দুজনের জুটিতে আসে ১১১ রান।

অঙ্কন ফিফটি স্পর্শ করেন ১০৩ বলে। রান-বলের ওই ব্যবধান আর পরে কমাতে পারেননি তিনি। রুবেলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্কয়ার লেগে। তার ৫৭ রান আসে ১১০ বলে।

মোসাদ্দেক হোসেন ও সাইফ উদ্দিনের জন্য তখন ঝড় তোলার মঞ্চ প্রস্তুত। কিন্তু ছন্দ পেতে একটু সময় নেন দুজনই। সাইফ পরে দুর্দান্ত কিছু শট খেলেন, ইবাদতকে ছক্কায় ওড়ান পুল শটে। শেষ দুই ওভারে গিয়ে দ্রুত রান বাড়ান মোসাদ্দেক।

ইবাদতের করা শেষ ওভারে আউট হন দুজনই। ২৯ বলে ৩৮ করেন সাইফ, ৩৯ বলে ৪০ মোসাদ্দেক।

ব্যাটিংয়ের শেষটা যেভাবে করেন তামিমরা, বোলিংয়ের শুরুটাও হয় তেমনই। দুই ওভারের মধ্যেই মাহমুদউল্লাহ একাদশের দুই ওপেনারকে ফেরান তারা।

সাইফ উদ্দিনের একটু ভেতরে ঢোকা ফুল লেংথ বলে ক্রস ব্যাটে খেলে বোল্ড হন নাঈম শেখ। মুস্তাফিজের বলে প্রিয় ফ্লিক শট খেলে ক্যাচ দেন লিটন দাস।

ইমরুল ব্যাটিংয়ে নামার পর পাল্টে যায় চিত্র। ব্যাটের কানায় লেগে কয়েকটি চার যেমন তিনি পেয়েছেন, তেমনি দারুণ কয়েকটি শটও খেলেছেন। তাতে দলের রান বাড়তে থাকে দ্রুততায়। সরে যায় শুরুর চাপ।

তিনে নেমে মাহমুদুল আগলে রাখেন এক প্রান্ত, ইমরুল রান করেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নড়বড়ে শুরু পেছনে ফেলে দল পৌঁছে যায় শক্ত অবস্থানে।

৮৪ রানের এই জুটি ভাঙেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তার বাড়তি লাফানো দুর্দান্ত ডেলিভারি ইমরুলের ব্যাটে ছোবল দিয়ে যায় গালির দিকে, দারুণ ক্যাচ নেন মেহেদি হাসান।

৫৫ বলে ৪৯ রান করে ইমরুল ফিরলেও পথ হারায়নি দল। পরের জুটিতে মাহমুদুল ও মাহমুদউল্লাহ যোগ করেন ৫৬ রান।

মাহমুদুলকে এক-দুই নিতে বেশ ভুগতে দেখা গেছে, ফাঁকে চমৎকার কিছু শটও খেলেন। এই ম্যাচের বাস্তবতায় অবশ্য তার স্ট্রাইক রেট খুব সমস্যা হয়নি দলের জন্য। ১০১ বলে ৫৮ করে শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন তাইজুলের বলে।

তামিমরা ম্যাচে ফিরতে পারেনি এরপরও। দলের মূল স্ট্রাইক বোলার মুস্তাফিজকে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরাতে অনেক দেরি করে ফেলেন তামিম ইকবাল। মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহানের জুটি ততক্ষণে জমে গেছে। এই জুটিও ছাড়িয়ে যায় ফিফটি।

এই জুটিতেই যখন মনে হচ্ছিল ধরা দেবে জয়, সাইফ উদ্দিনের শর্ট বলে পুল করে সীমানায় ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। ৮৭ বলে তার রান ৬৭।

এরপর সোহান দলকে নিয়ে যান জয়ের ঠিকানায়। শেষ দিকে গিয়ে বাজে শটে সাব্বির রহমান বিদায় নেন। সোহান অপরাজিত থাকেন ২৬ রানে।

এই জয়ে চার ম্যাচে মাহমুদউল্লাহদের জয় দুটি। তিন ম্যাচে শান্ত একাদশের জয় দুটি, তামিম একাদশের একটি। এই দুই দলের বুধবারের লড়াই দিয়ে চূড়ান্ত হবে ফাইনালের দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

তামিম একাদশ: ৫০ ওভারে ২২১/৮ (তামিম ৯, তানজিদ ১, এনামুল ১, ইয়াসির ৬২, মিঠুন ২, অঙ্কন ৫৭, মোসাদ্দেক ৪০, সাইফ উদ্দিন ৩৮, মেহেদি ১*, তাইজুল ০*; রুবেল ১০-৩-৩৪-৪, আবু হায়দার ১০-০-৪০-১, ইবাদত ১০-১-৬০-২, রকিবুল ১০-০-৩২-০, মিরাজ ৫-০-৩০-০, মাহমুদউল্লাহ ৫-০-২৩-০)।

মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৪৯.১ ওভারে ২২২/৬ (নাঈম ৩, লিটন ৫, মাহমুদুল ৫৮, ইমরুল ৪৯, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, সোহান ২৬*, সাব্বির ৩, মিরাজ ০*; সাইফ উদ্দিন ১০-১-৪৯-৩, মুস্তাফিজ ১০-১-৫৩-১, মেহেদি ৯.১-০-৩৬-০, খালেদ ১০-০-৩৯-১, তাইজুল ১০-০-৪০-১)।

ফল: মাহমুদউল্লাহ একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রুবেল হোসেন

ব্যাটসম্যান অব দা ম্যাচ: মাহমুদুল হাসান

বোলার অব দা ম্যাচ: রুবেল হোসেন

ফিল্ডার অব দা ম্যাচ: লিটন দাস