প্রেসিডেন্ট’স কাপে মাহমুদউল্লাহ একাদশকে ১৩১ রানে হারিয়েছে শান্ত একাদশ। তিন ম্যাচে শান্তদের এটি দ্বিতীয় জয়, মাহমুদউল্লাহদের দ্বিতীয় হার।
দলের বিপর্যয়ে ব্যাট করতে নেমে আফিফ খেলেন ১০৭ বলে ৯৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ধৈর্যশীল ফিফটি ও শেষ দিকে ইরফান শুক্কুরের ঝড়ো ইনিংস শান্ত একাদশকে এনে দেয় ৫০ ওভারে ২৬৪ রানের পুঁজি।
এবারের আসরের প্রথম আড়াইশ ছোঁয়া স্কোর তাড়া করতে নেমে দাঁড়াতেই পারেনি মাহমুদউল্লাহ একাদশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা। ৩২.১ ওভারেই গুটিয়ে গেছে তারা ১৩৩ রানে।
টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ নেন ৩ উইকেট। পেসার আবু জায়েদের শিকারও ৩টি।
ম্যাচের শুরুটা ভালো করেছিল মাহমুদউল্লাহর দলই। টস জিতে বোলিংয়ে নামা দলকে শুরুতে জোড়া উইকেট এনে দেন রুবেল। দুটি উইকেটেই যদিও দায় ব্যাটসম্যানেরই।
মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার ঠিক পরেই অনেক বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচে ৪৭ বলে ৯ রান করা ব্যাটসম্যান এবার করেন ৪ বলে ৮।
তিনে নেমে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও বাইরের বল স্টাম্পে আনেন আলগা শটে।
নবম ওভারে শান্তদের রান তখন ৩ উইকেটে ৩১। সেই নড়বড়ে অবস্থা থেকে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান আফিফ ও মুশফিক। প্রথম বলেই জোরালো আবেদন থেকে রক্ষা পেয়ে আফিফ দ্বিতীয় বলে দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন ছুটে চলা। মুশফিক ১ রানে সুমন খানের বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান, স্লিপে দুই বারের চেষ্টায় ধরতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরপর দুই জন এগিয়েছেন দুই গতিতে। আফিফ ছুটেছেন স্বচ্ছন্দে। ড্রাইভ, ফ্লিক, কাট, সব মিলিয়ে নান্দনিক সব শটে যেন নিজের ব্যাটসম্যানশিপের পসরা সাজান তিনি। মুশফিক ইনিংস গড়েন ধীরেসুস্থে।
আফিফ যখন প্রাপ্য সেঞ্চুরিটির দুয়ারে, রান আউট হয়ে যান তখনই। মুশফিকের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে প্রায় মাঝ উইকেটে গিয়ে আবার ফিরে আসার চেষ্টায় পেরে ওঠেননি। তার ইনিংসে চার ১২ টি, একমাত্র ছক্কা মাহমুদউল্লাহকে ওয়াইড লং অন দিয়ে।
মুশফিকের সঙ্গে তার চতুর্থ উইকেট জুটির রান ১৪৭।
এরপর মুশফিকও টেকেননি বেশিক্ষণ। ফিফটির পর আউট হয়ে যান তিনি ইবাদতকে স্কুপ খেলতে গিয়ে। তার ৯২ বলে ৫২ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি কেবল একটি, সেটি এসেছে ফিফটি ছোঁয়া শটে।
এরপর তৌহিদ হৃদয় শেষের দাবি সেভাবে মেটাতে না পারলেও ইরফান শুক্কুর ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দারুণ সব শটে রান তোলেন তিনি বেশ দ্রুততায়। মূলত তার সৌজন্যেই আড়াইশ ছাড়িয়ে আরও বাড়ে দলের রান।
রান তাড়ায় শুরু থেকে জুটি গড়তে পারেনি মাহমুদউল্লাহ একাদশ। আল আমিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে ফিরেন ইমরুল কায়েস।
লিটন যথারীতি দৃষ্টিনন্দন কিছু শট খেলেন। কিন্তু থমকে গেছেন ২৭ রানেই। নাসুমের সোজা বল ফ্লিক করতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। পরে নুরুল হাসান সোহান ৩ চার ও ১ ছক্কায় করেন অপরাজিত ২৭। এটিই দলের সর্বোচ্চ স্কোর!
বেশ কয়েকবার ক্যাচ দিয়ে রক্ষা পেয়ে মুমিনুল শেষ পর্যন্ত বাজে শটে ফিরেন ৩২ বলে ১৩ রান করে। তরুণ মাহমুদুল হাসান জয় প্রথমবার সুযোগ পেয়ে পারেননি নজর কাড়তে। নাসুমের সোজা বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।
ছয়ে নেমে সোহান এক প্রান্ত আগলে রাখেন। কিন্তু লোয়ার-মিডল অর্ডারে সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজদের মধ্যে লড়াইয়ের তৃষ্ণাই দেখা গেল না। স্রেফ উইকেট বিলিয়ে আসেন তারা। লোয়ার অর্ডারেও কেউ গড়তে পারেননি প্রতিরোধ।
অনুমিতভাবেই ম্যাচের সেরা আফিফ হোসেন। তবে অবাক করার মতো ছিল সেরা বোলারের পুরস্কার। এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে লোয়ার অর্ডারে দুটি উইকেট নেওয়া তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে। অথচ দুর্দান্ত বোলিংয়ে বিশেষজ্ঞ তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়েছেন নাসুম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শান্ত একাদশ: ৫০ ওভারে ২৬৪/৮ (পারভেজ ১৯, সৌম্য ৮, শান্ত ৩, মুশফিক ৫২, আফিফ ৯৮, হৃদয় ২৭, শুক্কুর ৪৮*, রিশাদ ১, তাসকিন ০, নাসুম ০*; ইবাদত ১০-০-৬০-২, রুবেল ১০-২-৫৩-৩, সুমন ৯-০-৫২-১, রকিবুল ১০-০-৩২-০, মিরাজ ৯-০-৪৮-০, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১৮-০)।
মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৩২.১ ওভারে ১৩৩ (ইমরুল ৪, লিটন ২৭, মুমিনুল ১৩, মাহমুদুল ১৩, মাহমুদউল্লাহ ১১, সোহান ২৭*, সাব্বির ১০, মিরাজ ১৬, রকিবুল ০, সুমন ২, রুবেল ১; তাসকিন ৬-০-২৫-০, আল আমিন ৫-১-২০-১, নাসুম ৮.১-১-২৩-৩, আবু জায়েদ ৭-০-৩৪-৩, রিশাদ ৬-০-২৬-২)।
ফল: শান্ত একাদশ ১৩১ রানে জয়ী
ম্যান অফ দা ম্যাচ: আফিফ হোসেন
ব্যাটসম্যান অফ দা ম্যাচ: আফিফ হোসেন
বোলার অফ দা ম্যাচ: রিশাদ হোসেন
ফিল্ডার অফ দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত