চলে গেলেন নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী

নিউ জিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট জয়ের অধিনায়ক জন রিড আর নেই। দীর্ঘদিন কোলন ক্যান্সারে ভুগে বুধবার অকল্যান্ডে মারা গেছেন কিউই ক্রিকেটের অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডার। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর ১৩৩ দিন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2020, 02:52 PM
Updated : 14 Oct 2020, 02:52 PM

নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর জানায়। মারা যাওয়ার আগে তিনিই ছিলেন নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি বয়সী জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার।

খেলোয়াড়ী জীবনে রিড ছিলেন অসাধারণ এক অলরাউন্ডার। তার টেস্ট অভিষেক ১৯৪৯ সালে, গৌরবময় ক্যারিয়ার শেষে অবসর ১৯৬৫ সালে। ৫৮ টেস্টে রান করেছেন ৩ হাজার ৪২৮। দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লেয়ার ছিলেন। বলা হয়, ওয়ানডে ক্রিকেট শুরুর অনেক আগেই তিনি ছিলেন ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটসম্যান।

মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন ৮৫টি। তার অফ কাটার ছিল দারুণ কার্যকর, আচমকা বাউন্সারে চমকে দিতেন ব্যাটসম্যানদের। টেস্টে উইকেট কিপিংও করেছেন। গালি ও কাভারে ছিলেন দুর্দান্ত ফিল্ডার।

রিডের ৬ টেস্ট সেঞ্চুরির একটি ১৯৬৩ সালে ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে। তার ইনিংস থেমেছিল ঠিক ১০০ রানে, ১৫৯ রানে অলআউট হয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। এখনও এটি সর্বনিম্ন দলীয় রানের ইনিংসের রেকর্ড, যেখানে কারও সেঞ্চুরি আছে।

রিড হতে চেয়েছিলেন রাগবি খেলোয়াড়, তবে হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে পূরণ হয়নি সে স্বপ্ন। পরে হয়ে যান ক্রিকেটার, নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেট তাকে পেয়ে হয়েছে সমৃদ্ধ।

রিড ছিলেন দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লেয়ার। ছবি: টুইটার।

তার নেতৃত্বেই ২৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে নিউ জিল্যান্ড পায় প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ (১৯৫৬ সালে)। ৪৫তম টেস্টে ধরা দিয়েছিল তাদের প্রথম জয়। দেশের বাইরে নিউ জিল্যান্ডের প্রথম জয়ও আসে তার অধিনায়কত্বেই (১৯৬২ সালে)। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওই সফরে সব ম্যাচ মিলিয়ে ৭ সেঞ্চুরিতে ১ হাজার ৯১৫ রান করেছিলেন রিড। 

স্বপ্নময় এমন সব জয়ের মতো দুঃস্বপ্নের একটি অভিজ্ঞতাও রিডের ছিল। টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় ইনিংসের ম্যাচে খেলেছিলেন তিনি। ১৯৫৫ সালে অকল্যান্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল মাত্র ২৬ রানে। দলের ২৪৬ রানের প্রথম ইনিংসে রিডের ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৩।

নিউ জিল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি ৩৪ টেস্টে। জয় যেখানে ৩টি, হার ১৮টি, ১৩টি ড্র। ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ড সফর করা বিশ্ব একাদশের অধিনায়ক ছিলেন তিনিই, ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি স্যার গ্যারি সোবার্স ছিলেন তার সহকারী। দলটির হয়ে খেলেছিলেন সেবার চার্লি গ্রিফিথ, ওয়েস হল, হানিফ মোহাম্মদ, রোহান কানহাইয়ের মতো গ্রেটরা।  

সব মিলিয়ে ২৪৬ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪১.৩৫ গড়ে রিড করেছেন ১৬ হাজার ১২৮ রান। সেঞ্চুরি ৩৯টি। হাত ঘুরিয়ে নিয়েছেন ৪৬৬ উইকেট। নিয়েছেন ২৪০টি ক্যাচ, আছে সাতটি স্টাম্পিংও। ক্যারিয়ার সেরা ২৯৬ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন নর্দান ডিস্ট্রিক্টসের হয়ে। যেখানে ৩৫ চারের সঙ্গে ছক্কা ছিল ১৫টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড হিসেবে টিকে ছিল যা তিন দশকের বেশি সময় ধরে। 

১৯৫৯ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার হয়েছিলেন রিড। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটে তার গুরুত্ব ও প্রভাব এতটাই ছিল যে অধিনায়ক থাকার সময় দায়িত্ব পালন করেছেন নিউজিল্যান্ডের নির্বাচক হিসেবেও। অবসরের পর কিছুদিন কোচিং করিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। পরে ফিরে যান স্বদেশে।

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে রিড আলাদা করে পরিচিত হয়ে ওঠেন আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে। ১৯৯৩ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ৫০ টেস্ট ও ৯৮ ওয়ানডেতে। ২০০৩ সালে নিয়োগ পান নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।

নিউ জিল্যান্ডের খেলাধুলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়েলিংটনের বিখ্যাত বেসিন রিজার্ভ ক্রিকেট গ্রাউন্ডের একটি গেটের নামকরণ করা হয় রিডের নামে। তার ছেলে রিচার্ড রিড ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ৯টি ওয়ানডে।

২০১৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শরীর নিয়ে ভুগছিলেন। এখন সবকিছুর সমাপ্তি। নিউ জিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ’-এ লেখা হয়েছে, নিউ জিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ইনিংসগুলোর একটি শেষ হলো তার মৃত্যুতে।