শান্ত একাদশের নায়ক হৃদয় ও শুক্কুর

দুই দলেই তারকা বেশ কজন। এমনকি উঠতি ক্রিকেটারদের মধ্যেও কয়েকজন পেয়ে গেছেন তারকার আমেজ। কিন্তু তাদের ছাপিয়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলেন এমন দুজন, ম্যাচের আগে যারা ছিলেন আড়ালে। বিপর্যয়ের মধ্যে দারুণ পরিণত ব্যাটিংয়ে শান্ত একাদশকে জয় এনে দিলেন তৌহিদ হৃদয় ও ইরফান শুক্কুর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2020, 12:37 PM
Updated : 12 Oct 2020, 05:47 AM

প্রেসিডেন্ট’স কাপের প্রথম ম্যাচে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারে সমৃদ্ধ মাহমুদউল্লাহ একাদশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে শান্ত একাদশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মাহমুদউল্লাহর দলকে ১৯৬ রানে থামিয়ে শান্তরা জিতেছে ৫৩ বল বাকি রেখে।

মন্থর উইকেটে এক পর্যায়ে ৭৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল শান্ত একাদশ। ষষ্ঠ উইকেটে হৃদয় ও শুক্কুরের ১০৫ রানের জুটি দলকে নিয়ে যায় জয়ের পথে।

দলকে জয়ের কাছে নিয়ে হৃদয় আউট হয়েছেন দুটি করে চার ও ছক্কায় ৫২ রান করে। শুক্কুর জয় নিয়ে ফেরেন ৬ চারে ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে।

এই টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেই সবার দৃষ্টি থাকবে বেশি। প্রথম দিনে হৃদয় ও শুক্কুর ছাড়াও আলো ছড়িয়েছেন কয়েকজন।

দুটি দুই দিনের ম্যাচে আগুন ঝরা বোলিংয়ের পর এখানেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তাসকিন আহমেদ। গতি, আগ্রাসন, কিছুটা সুইং মিলিয়ে উন্নতির ছাপ রেখেছেন আবারও। তার সঙ্গে শান্ত একাদশের অন্য দুই পেসার আল আমিন হোসেন ও মুকিদুল ইসলাম নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ একাদশের একমাত্র ফিফটি এসেছে অধিনায়কের ব্যাট থেকেই। আরেক অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস করেছেন ৪০। পেসার ইবাদত হোসেন প্রথম স্পেলে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ একাদশ দইশর নিচে থমকে গেছে মূলত নিজেদের ব্যাটসম্যানদের ভুলেই। একের পর এক ব্যাটসম্যান উপহার দিয়ে এসেছেন উইকেট।

ম্যাচের শুরুটা যদিও তাদের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। প্রথম ওভারে তাসকিনকে দৃষ্টিননন্দন স্কয়ার ড্রাইভে চার মারেন লিটন দাস। পরের ওভারে আল আমিনকে কাট করে বাউন্ডারিতে পাঠান মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

৩ ওভারে ১৭ রান তোলার পর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে পৌনে এক ঘণ্টা। দলের ছন্দপতনের শরু হয়তো সেই বিরতি থেকেই।

বৃষ্টির পর প্রথম বলেই দ্রুত সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টায় রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রোয়ে আউট হন নাঈম। পরের ওভারে তাসকিনের বাড়তি লাফানো বলে বাজে শটে প্লেড অন হন লিটন।

সেটির রেশ মিলিয়ে না যেতেই আল আমিনকে আলসে ড্রাইভ খেলে স্টাম্পে বল টেনে আনেন মুমিনুল হক। টানা তিন ওভারে উইকেট হারিয়ে দলের রান তখন ৩ উইকেটে ২১।

সেখান থেকেই দুই অভিজ্ঞ ইমরুল ও মাহমুদউল্লাহর ইনিংস মেরামতের লড়াই। স্পিনার নাঈম আক্রমণে আসার পর দুই ব্যাটসম্যান শুরু করেন পাল্টা আক্রমণ। নাঈমকে স্লগ সুইপে ছক্কায় ওড়ান ইমরুল, একই ওভারে বেরিয়ে এসে লং অনের ওপর দিয়ে ওড়ান মাহমুদউল্লাহ।

৭৩ রানের এই জুটি ভেঙেছে নাঈমের বলেই। পুল খেলার মতো যথেষ্ট শর্ট বল না হলেও পুল করে দেন ইমরুল, মিড উইকেটে ক্যাচ নেন সাইফ হাসান।

ছয়ে নেমে নুরুল হাসান সোহান খুব স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেননি। ১৮ রান করে রানআউট হয়েছেন নিজের খামখেয়ালিতে, সরাসরি থ্রোয়ে স্টাম্প ভাঙেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বির রহমান এরপর চেষ্টা করেছেন দলকে এগিয়ে নিতে। ৮০ বলে ফিফটিতে পা রাখেন মাহমুদউল্লাহ।

এই দুজনই ফেরেন মুকিদুলের এক ওভারে। ফিফটির পরপরই অযথা স্লগ করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ (৮২ বলে ৫১)। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন সাব্বির।

এরপর লোয়ার অর্ডারে আবু হায়দার ও রকিবুল হাসানের চেষ্টায় দল যায় দুইশর কাছাকাছি। শেষ দিকে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করে দেন সৌম্য সরকার।

নতুন বলের মতো পুরোনো বলেও প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন তাসকিন ও আল আমিন। লেগ স্পিনার রিশাদ খুব নজরকাড়া কিছু করতে না পারলেও রান দেননি বেশি।

শান্ত একাদশের রান তাড়া শুরু হয়েছিল সাইফ ও সৌম্য সরকারের স্ট্রোকের ঝলকে। পা না নড়লেও হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশনে চারটি বাউন্ডারি পেয়ে যান সাইফ। সৌম্য খেলেছেন তার মতোই। মাহমুদউল্লাহ একাদশের নতুন বলের দুই পেসার রুবেল হোসেন ও আবু হায়দারের বলে ছিল না ধার।

ইবাদত বোলিংয়ে এসে পাল্টে দেন চিত্র। অফ স্টাম্প ঘেঁষা বাড়তি লাফানো বল সাইফের (১৭) ব্যাটে ছোবল দিয়ে আশ্রয় নিলে স্লিপে নাঈমের হাতে।

ইবাদতের পরের উইকেটে বড় কৃতিত্ব ফিল্ডারের। আপার কাট করেছিলেন সৌম্য (২১), থার্ডম্যান থেকে বাঁয়ে অনেকটা দৌড়ে সামনে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নেন রকিবুল হাসান।

প্রথম স্পেলে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উইকেটটিও দলকে এনে দেন ইবাদত। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল যেন নিঁখুতভাবে স্টাম্পে টেনে আনেন মুশফিকুর রহিম।

দুটি দুই দিনের ম্যাচের পর এই ম্যাচ, টানা তিন ইনিংসে ব্যর্থ হলেন মুশফিক, তিনটিতেই হয়েছেন বোল্ড।

এসবের মধ্যেও নাজমুল হোসেন শান্ত ছিলেন সাবলীল। প্রথম বল থেকেই খেলেছেন আত্মবিশ্বাসী সব শট। অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ত কাল হয় তার। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলের তীক্ষ্ণ টার্নের বল জায়গা বানিয়ে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ২৮ রানে।

দলকে উদ্ধার করতে পারেননি আফিফ হোসেনও। মাহমুদউল্লাহর বলে শর্ট মিড উইকেটে দারুণ ক্যাচ নিয়ে তাকে ৪ রানে থামান সাব্বির।

৭৯ রানে ৫ উইকেট হারানো শান্তর একাদশ তখন দিকহারা। ত্রাতা হয়ে আসেন হৃদয় ও শুক্কুর। কোনো ঝুঁকি নেননি দুজন। এক-দুই করে বাড়িয়ছেন রান, সুযোগ পেলেই বল পাঠিয়েছেন বাউন্ডারিকে। প্রতিপক্ষ বোলাররা খুব একটা বিপাকেও ফেলতে পারেননি তাদের।

লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে ২৮ ওভারের পর বোলিংয়ে এনেছেন মাহমুদউল্লাহ। এত পরে এসে খুব একটা সুবিধাও করতে পারেননি আমিনুল। শেষ দিকে একটি উইকেট অবশ্য তিনি পেয়েছেন। তাকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হৃদয়।

নাঈমকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন শুক্কুর।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মাহমুদউল্লাহ একাদশ: ৪৭.৩ ওভারে ১৯৬ (লিটন ১১, নাঈম ৯, মুমিনুল ০, ইমরুল ৪০, মাহমুদউল্লাহ ৫১, সোহান ১৪, সাব্বির ২২, আমিনুল ৬, আবু হায়দার ১৪*, রকিবুল ১৫, রুবেল ১; তাসকিন ১০-০-৩৭-২, আল আমিন ১০-১-৪০-২, মুকিদুল ৯-০-৪৪-২, নাঈম ১০-১-৩৯-১, রিশাদ ৮-০-৩৩-০, সৌম্য ০.৩-০-১-১)।

শান্ত একাদশ:  ৪১.১ ওভারে ১৯৭/৬ (সাইফ ১৭, সৌম্য ২১, শান্ত ২৮, মুশফিক ১, আফিফ ৪, হৃদয় ৫২, শুক্কুর ৫৬*, নাঈম ৭*; রুবেল ৭-১-৩১-০, আবু হায়দার ৫-০-২৯-০, ইবাদত ৯-০-৪৬-৩, মাহমুদউল্লাহ ৭-১-২৭-১, রকিবুল ৮-১-৩৩-১, আমিনুল ৫.১-০-৩১-১)

ফল: শান্ত একাদশ ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: তৌহিদ হৃদয়

ব্যাটসম্যান অব দা ম্যাচ: ইরফান শুক্কুর 

বোলার অব দা ম্যাচ:  তাসকিন আহমেদ

ফিল্ডার অব দা ম্যাচ:  রিশাদ হোসেন