নজর থাকবে যে তরুণদের ওপর

তারকাদের নিয়ে বাড়তি আগ্রহ বরাবরই থাকে। প্রেসিডেন্ট’স কাপেও তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের পারফরম্যান্স নিয়ে থাকবে তুমুল কৌতূহল। তবে তরুণ ও উঠতি ক্রিকেটারদের জন্যও এই টুর্নামেন্ট হতে পারে আলো ছড়ানোর দারুণ মঞ্চ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2020, 03:55 PM
Updated : 10 Oct 2020, 05:35 PM

সাত মাস পর হতে যাচ্ছে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, মাঠে নামতে ও পারফর্ম করতে মরিয়া থাকবেন তাই সব ক্রিকেটারই। বিপিএল ছাড়া কোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে দেশের শীর্ষ প্রায় সব ক্রিকেটারকে একসঙ্গে দেখা যায় না। প্রেসিডেন্ট’স কাপ এদিক থেকেও হতে যাচ্ছে অনন্য। তবে টুর্নামেন্টের ধরনের কারণেই তরুণদের সামনে থাকবে বড় সুযোগ।

গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অনেক ক্রিকেটার, ঘরোয়া ক্রিকেটের উঠতি আরও অনেক ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন টুর্নামেন্টের তিন দলে। পরের ধাপের ক্রিকেটের জন্য তারা কতটা তৈরি বা পিছিয়ে আছেন, সেটি পরখ করা যেতে পারে এখানে।

তরুণদের মধ্যে দেশের ক্রিকেটের নানা বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতায়, কয়েকজনকে নিয়ে আগ্রহ থাকবে একটু বেশিই। 

আফিফ হোসেন

(শান্ত একাদশ)

অনেক দিন থেকেই তাকে মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। গত মার্চে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে, টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ১২টি। খুব দারুণ কিছু এখনও করতে পারেননি। তবে ২১ বছর বয়সী অলরাউন্ডারের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় নেই বিন্দুমাত্র।

আগ্রাসী ঘরানার বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তিনি, ব্যাট করতে পারেন নানা পজিশনে। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখনও সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে ২৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরির পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে, বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য তার আছে। বুদ্ধিদীপ্ত অফ স্পিন দিয়ে কার্যকর হতে পারেন তিনি ইনিংসের বিভিন্ন পর্যায়ে।

ফিল্ডিংয়ে তিনি এখনই দেশের সেরাদের একজন। দেশের বর্তমান-সাবেক অনেক ক্রিকেটারের মতে, আফিফের মতো গতিময় ফিল্ডার বাংলাদেশে কখনোই আসেনি। 

ক্রিকেটীয় স্কিলের পাশাপাশি তাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখার আরেকটি কারণ, ভয়ডরহীন মানসিকতা।

তাকে ঘিরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে আশা, সেটি পূরণ করার পথে ছোট্ট একটি পদক্ষেপ হতে পারে এই টুর্নামেন্ট। এখানে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করলে সামনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিশ্চিতভাবেই তাকে নিয়মিত বিবেচনা করতে হবে জোর দিয়ে।

আমিনুল ইসলাম বিপ্লব

(মাহমুদউল্লাহ একাদশ)

জাতীয় দলে লেগ স্পিনারের খরা কাটানোর চেষ্টায় সবচেয়ে বড় বাজি আপাতত ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের ব্যাটিং অলরাউন্ডার হুট করেই এইচপির ক্যাম্পে লেগ স্পিন দিয়ে নজর কাড়া এবং লেগ স্পিনার হিসেবে জাতীয় দলে চলে আসা, গত বছর বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল সেটি। শুরু থেকেই দারুণ পারফর্ম করে আমিনুল বাড়িয়ে দিয়েছেন তাকে নিয়ে স্বপ্নের সীমানা। বাংলাদেশ দলের হয়ে ৭টি টি-টোয়েন্টি খেলে নিয়েছেন তিনি ১০ উইকেট।

টি-টোয়েন্টি দলে তিনি নিয়মিত হয়ে উঠছেন। পরের ধাপ ওয়ানডে ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ওয়ানডের জন্য কতটা তৈরি এই লেগ স্পিনার কিংবা কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে এখনও, সেটির ধারণা মিলতে পারে এই ওয়ানডে টুর্নামেন্ট থেকে।

রকিবুল হাসান

(মাহমুদউল্লাহ একাদশ)

রকিবুল হাসান

গত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ে বড় অবদান ছিল এই বাঁহাতি স্পিনারের। আসরে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি, ৬ ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন ১০.১৬ গড় ও ওভারপ্রতি মাত্র ৩ রান দিয়ে। বিশ্বকাপের আগেও নানা সিরিজ-টুর্নামেন্টে তার পারফরম্যান্স ছিল ধারাবাহিক।

এবার সিনিয়র ক্রিকেটে নিজেকে তার মেলে ধরার পালা। গত মার্চে করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা তিনি ভালো করেছিলেন। বোলিং স্কিলের সঙ্গে ১৮ বছর বয়সী স্পিনারের বড় সম্পদ আগ্রাসী ও লড়িয়ে মানসিকতা।

আব্দুর রাজ্জাক বিবেচনার বাইরে যাওয়ার পর থেকে সীমিত ওভারে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হিসেবে নিয়মিত কাউকে পায়নি বাংলাদেশ। ঠিক পথে থাকলে রকিবুলের মধ্যে আছে সেই শূন্যতা পূরণের সব উপাদান। এই টুর্নামেন্ট থেকেই হতে পারে ভবিষ্যতের পানে তার হাঁটা।

তানজিদ হাসান তামিম

(তামিম একাদশ)

তানজিদ হাসান তামিম

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। বিশ্বকাপে প্রত্যাশিত ধারাবাহিকতা দেখাতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়ে খেলেছিলেন ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। দারুণ আগ্রাসী ও সাহসী ব্যাটসম্যান তিনি, একইসঙ্গে নান্দনিক।

শুধু বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নয়, প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটেও। গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একটি সেঞ্চুরিসহ করেছিলেন ৩৭১ রান। এবার ঢাকা লিগ স্থগিত হওয়ার আগে একমাত্র ম্যাচে করেছেন ৫৯। যুব বিশ্বকাপের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে খেলেছেন ৮২ রানের ইনিংস। ফেব্রুয়ারিতে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিকেএসপিতে দুই দিনের ম্যাচে সাত নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ৯৯ বলে ১২৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।

তার প্রতিভা ও সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার আরেকটি মঞ্চ হতে পারে এই টুর্নামেন্ট। ছেলেবেলার নায়ক তামিম ইকবালের নেতৃত্বে খেলবেন তিনি, ইনিংস শুরু করবেন তার সঙ্গে। ১৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের রোমাঞ্চও তাই বাড়তি থাকার কথা!

শরিফুল ইসলাম

(তামিম একাদশ)

শরিফুল ইসলাম

যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের বাঁহাতি পেসার, বিশ্বকাপের আগেই তিনি খেলেছেন আরও বড় পর্যায়ে। আনকোরা অবস্থায় তার বোলিং দেখেই মুগ্ধ হয়ে নির্বাচকরা তাকে খেলিয়েছেন বাংলাদেশ ‘এ’ দল, বিসিবি একাদশে। ১৬ বছর বয়সে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে। রেকর্ডও যথেষ্ট ভালো।

শুরুর দিকে তার গতি ছিল দারুণ, তবে সুগঠিত ছিল না শরীর, অ্যাকশন ছিল না মসৃণ। সময়ের সঙ্গে শরীর পোক্ত হয়েছে, অ্যাকশন আরেকটু ভালো হয়েছে। গতি যদিও একটু কমেছে, তবে সময়ের সঙ্গে তা বাড়ানোর সুযোগ আছে। সুইং করাতে পারার ক্ষমতা তার সহজাত। নিজেকে গড়ে নিতে পারলে জাতীয় দলের জন্য হতে পারেন বড় সম্পদ। ১৯ বছর বয়সী এই পেসারের উন্নতি ও অগ্রগতি দেখানোর বড় সুযোগ এই টুর্নামেন্ট।

আকবর আলি

(তামিম একাদশ)

আকবর আলি

এ বছর দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত নামগুলোর একটি। তার নেতৃত্বে গত যুব বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ। ফাইনালে ঠাণ্ডা মাথার বীরোচিত ইনিংস খেলে তিনিই ছিলেন ম্যাচ-সেরা। ব্যাটিংয়ে, নেতৃত্বে, শরীরী ভাষায় ও ক্রিকেট বোধে দারুণ পরিণত মানসিকতার ছাপ এর মধ্যেই রেখেছেন ১৯ বছর বয়সী এই কিপার-ব্যাটসম্যান।

প্রত্যাশার যে ভার তার ওপর এখনই চেপে বসেছে, সেটিকে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন। তবে চ্যালেঞ্জ জয়ের রসদ যে তার ভেতর আছে, সেই প্রমাণও নানা সময়ে রেখেছেন। তার ওপর তাই ভরসা রাখাই যায়।

তামিম একাদশের স্কোয়াডে এনামুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন আছেন বলে শুরুর দিকে আকবরের সুযোগ পাওয়াটা হবে কঠিন। তবে যখনই মাঠে নামবেন, তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবেই।