অধিনায়ক না হলেও নেতা হয়েই থাকবেন সাকিব: ডমিঙ্গো

বাংলাদেশের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এক বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে রাসেল ডমিঙ্গোর। এর অর্ধেকটা সময়ই চলে গেছে কোভিড মহামারীর পেটে। তার শুরুর কয়েক মাসে খুব হতাশাজনক কয়েকটি সিরিজও কেটেছে দলের। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ডমিঙ্গো ফিরে তাকালেন তার এই এক বছরে, তুলে ধরার চেষ্টা করলেন সামনের পথচলার সম্ভাব্য চিত্রও।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2020, 06:00 AM
Updated : 4 Oct 2020, 07:25 AM

বাংলাদেশের দায়িত্বে আপনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে অগাস্টের শেষ দিকে। কোভিডের কারণে যদিও খেলা বন্ধ আছে গত ৬ মাস ধরে, তারপরও আপনার সময়টা নিজে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

রাসেল ডমিঙ্গো: আপনি যেটা বললেন, অনেকটা সময় খেলা ছাড়াই থাকতে হয়েছে। নতুন জায়গায় এলে বুঝে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। এরপর আস্তে আস্তে সামনে এগোনোর সময়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ৬ মাসে খেলার উপায়ই ছিল না।

এমনিতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সময় আমি খুব উপভোগ করেছি। এখন ছেলেদের সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। কে কোন অবস্থায় আছে, জানা আছে আমার। এখন আমি জানি, সামনে এগোতে হলে কোন কোন জায়গায় উন্নতি করতে হবে। প্লেয়ার পুল বা জাতীয় দল ও আশেপাশে থাকা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে ভালো জানাশোনা হয়েছে। কোচিং স্টাফের আমরা সবাই তাই এদিক থেকে ভালো অবস্থায় আছি যে আমরা জানি, দল হিসেবে এখন বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় এবং কতটা উন্নতি করতে হবে।

আপনার দায়িত্বের প্রথম কয়েক মাসে বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। আফগানিস্তানের কাছে দেশের মাটিতে বাজেভাবে হেরেছে দল, ভারত ও পাকিস্তান সফরে সব টেস্টে হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। টেস্টে মূলত কোথায় পিছিয়ে আছে বাংলদেশ এবং উন্নতির পথ কি?

ডমিঙ্গো: পিছিয়ে থাকার চেয়ে আমি বরং এভাবে বলব, আমাদের কোথায় কোথায় উন্নতি জরুরি। উন্নতির তো শেষ নেই। তবে আপাতত মূল জায়গা হলো, ২০ উইকেট নেওয়ার মতো বোলিং আক্রমণ লাগবে আমাদের। বিশেষ করে দেশের বাইরে। দেশের মাটিতে আমরা তুলনামূলক ভালো অবস্থায় আছি, কারণ বেশ কিছু স্পিনার আমাদের আছে। শুরু থেকেই আমি বলে আসছি, ভালো ফাস্ট বোলিং গ্রুপ লাগবে আমাদের। দেশের বাইরে ভালো করতে এটা লাগবেই।

ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সও তো ভালো হয়নি এই সময়ে!

ডমিঙ্গো: ঠিক পরেই আসতাম ব্যাটসম্যানদের প্রসঙ্গে। ফাস্ট বোলারদের প্রয়োজনটা প্রথম জরুরি। দ্বিতীয় প্রয়োজন, টেস্ট ব্যাটসম্যানদের সুযোগ দেওয়ার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। সঠিক ছেলেদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে নিজেদের মেলে ধরতে। একটা ইউনিট গড়ে তোলার জন্য দল নির্বাচনের ধারাবাহিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

সুযোগ দেওয়ার ধারাবাহিকতা বলতে কি শান্ত, সাইফ, সাদমানদের মতো তরুণদের কথা বলছেন?

ডমিঙ্গো: হ্যাঁ, অবশ্যই। সাইফ, শান্ত, সাদমানের মতো প্রতিভাবান তরুণ আরও আছে। এমনকি মোহাম্মদ মিঠুনও…যথেষ্ট প্রতিভাবান। ওদের ওপর আস্থা রাখা জরুরি। খুব বেশি টানাহেঁচড়া করা যাবে না। তাহলেই আস্তে আস্তে টেস্ট ব্যাটিংয়ের উন্নতি হবে।

কিন্তু সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সও কি এই সময় যথেষ্ট ভালো ছিল?

ডমিঙ্গো: আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর তামিমকে খুব বেশি টেস্টে পাইনি (এই সময়ে ৫ টেস্টের ২টি খেলেছেন তামিম)। মুশফিক তো দারুণ ধারাবাহিক ছিল (এই সময়ে ৭ ইনিংসে ১টি ডাবল সেঞ্চুরি, ২ ফিফটি)। এই অল্প কিছু ম্যাচ দিয়ে ওদেরকে বিচার করা ও সমালোচনা করা উচিত নয়। তারা অনেক বছর ধরে দলে অবদান রেখে আসছে।

মাহমুদউল্লাহ আপাতত টেস্ট দলে ফেরার লড়াই করছে। মুমিনুল একটু খারাপ সময় পেরোলেও সবশেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছে। দেশের হয়ে অনেক ভালো ইনিংস তার আছে।

তাদের সঙ্গে কাজ করা আমি উপভোগ করছি। প্রাণশক্তির কোনো কমতি নেই তাদের। ভালো করতে খুবই আগ্রহী তারা, নিবেদনে কমতি নেই, ট্রেনিংয়ে মনোযোগ দারুণ, ওয়ার্ক এথিকস ভালো। আমি আপাতত তাদের এসব দিয়েই বিচার করতে চাই।

মুমিনুলের টেস্ট পারফরম্যান্সের পড়তি গ্রাফ বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় একটি আলোচিত বিষয়। ৭ টেস্ট শেষে তার ব্যাটিং গড় ছিল ৭৫, ২০ টেস্ট শেষে ৫১, এখন ৪০ টেস্ট শেষে ৪০। তার ব্যাটিংও আগের মতো আঁটসাঁট মনে হয় না। দেশের বাইরে রেকর্ড বেশ নাজুক। সমস্যা কোথায় হচ্ছে তার?

ডমিঙ্গো: টেস্ট ব্যাটসম্যানদের ক্যারিয়ারে ওঠা-নামা হয়ই। প্রায়ই হয়। ৪০ টেস্ট খেলেই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট সেঞ্চুরি তার। নিশ্চয়ই তার সামর্থ্য আছে! কাজ যা করার প্রয়োজন, সে করছে। তার ব্যাটিং আমি উপভোগ করি। যথেষ্ট অভিজ্ঞও এখন সে, জানে কী করতে হবে।

হ্যাঁ, অধিনায়ক হিসেবে তার কিছু কাজ করা দরকার এখনও, দলকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিতে চায়, সেই ধারণায় আরও স্বচ্ছ হওয়া। কোচ-অধিনায়ক সম্পর্কটা গড়ে উঠছে আমাদের। তবে খেলোয়াড় হিসেবে সে দারুণ এক টেস্ট ব্যাটসম্যান।

অধিনায়ক মুমিনুলের উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন। সামনে তাকিয়ে, মুমিনুল টেস্ট দলকে কতটা এগিয়ে নিতে পারবেন বলে আপনার মনে হয়?

ডমিঙ্গো: খুব বেশি টেস্ট ম্যাচে আমরা একসঙ্গে কাজ করিনি। সবারই সময় লাগে। আমি এখনও পর্যন্ত তার সঙ্গে কাজ করা উপভোগ করেছি। সামনে সে কতদিন থাকবে, এটা তো বোর্ডের ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অধিনায়ক হিসেবে এই দলে তার সম্ভাবনা দারুণ। টেস্টে দলের সেরা ক্রিকেটারদের একজন সে। আমি তার সঙ্গে কাজ উপভোগ করছি, এটুকুই বলতে পারি।

আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আফগানদের কাছে অমন পরাজয়, এরপর আচমকাই সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার খবর। সময়টা কতটা কঠিন ছিল?

ডমিঙ্গো: সাকিবের নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই গোটা দলের জন্য ছিল বড় এক ধাক্কা। সে বিশ্বমানের ক্রিকেটার, এই দলের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। দল তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সামর্থ্যের একজন ক্রিকেটারকে হারানো কখনোই সহজ নয়।

তবে বাস্তবতা সবাইকে মানতেই হয়। আমরা ইতিবাচক দিকটা দেখার চেষ্টা করেছি। সাকিবের না থাকা অন্য কারও সুযোগ করে দিয়েছে ম্যাচ খেলার, অন্যদের সুযোগ করে দিয়েছে পারফর্ম করার, নিজেদের মেলে ধরার।

সাকিবের ক্ষেত্রেও আমি ইতিবাচক দিকটিই এখন দেখছি। আশা করি, বাইরে থাকার এই এক বছর সাকিবকে আরও ক্ষুধার্ত করে তুলবে এবং বাংলাদেশের জন্য আরও ভালো পারফর্ম করতে মরিয়া থাকবে সে। আমি মুখিয়ে আছি তাকে দলে ফিরে পেতে।

অবশ্যই কেউ চায় না খেলা বন্ধ থাকুক বা পিছিয়ে যাক। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়ায় মনের কোনো কোণে কোনোরকম স্বস্তির ছোঁয়া কি আছে, যে বিশ্বকাপের মতো আসরে সাকিবকে নিয়েই খেলা যাবে?

ডমিঙ্গো:  স্বস্তির ছোঁয়া বলব না। কারণ আমরা সবাই চাই যত বেশি সম্ভব ম্যাচ খেলতে। অস্ট্রেলিয়ায় খেলার খুব বেশি সুযোগ আমরা পাই না। এটি ভালো সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়ায় নিজেদের মেলে ধরার। সাকিবকে ছাড়া খেলাটা অবশ্যই আদর্শ হতো না। তবে অবশ্যই আমরা চাই যত বেশি সম্ভব খেলতে।

নিষেধাজ্ঞার সময়টায় সাকিবের যোগাযোগ কতটা ছিল আপনার?

ডমিঙ্গো: সাকিবের সঙ্গে অনেক কথা হয় আমার। নিয়মিতই যোগাযোগ হয়ে আসছে। তার ট্রেনিং ও অন্যান্য সব কিছু নিয়েই কথা হয়। এই মাসেই তার নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে এবং শিগগিরই সে খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে।

এখনও সে যথেষ্ট ফিট আছে। ট্রেনিং করছে। দ্রুতই পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে। কোয়ালিটি ক্রিকেটার সে, মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হবে না।

নিষিদ্ধ হওয়ার আগে দুই সংস্করণের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব। অধিনায়ক নির্বাচন যদিও আপনার এখতিয়ার নয়, তবে আপনার কি মনে হয়, ফিরেই সে সরাসরি অধিনায়কত্ব করতে পারে?

ডমিঙ্গো:
 এটা বোর্ডের ব্যাপার, আমার কথা না বলাই ভালো। তিন ফরম্যাটেরই অধিনায়ক বোর্ড নির্বাচন করে। আমাদের কাজ অধিনায়কদের সমর্থন করা, পাশে থাকা, সহায়তা করা। আমরা সেটিই করে যাব। 

আনুষ্ঠানিক অধিনায়ক না হলেও, দলের নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে সাকিবের ভূমিকা কতটা দেখেন?

ডমিঙ্গো: অনেক দেখি। দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের একজন সে। অধিনায়ক না থাকার সময়ও পারফরম্যান্স দিয়ে সে দলকে একরকম নেতৃত্ব দেয় এবং ছেলেরা তার দিকে তাকিয়ে থাকে। নেতৃত্বের দিক থেকে তাই দলে বিশাল ভূমিকা রাখতে হবে তাকে।

সে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। ম্যাচে তাকে দেখে, ট্রেনিং থেকে ছেলেরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। এমনকি কোচ হিসেবেও তার কাছ থেকে শেখার সুযোগ আছে আমার। আশা করি, সে নিজেও কোচিং স্টাফদের কাছ থেকে অনেক শিখবে।

বরাবরই সে দলের নেতাদের একজন। ফেরার পরও তা বদলানোর সম্ভাবনা দেখি না। অধিনায়ক না হলেও সে নেতা হয়েই থাকবে।

নেতৃত্বের ধারাবাহিকতাকে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বরাবরই বড় এক সমস্যা মনে করা হয়। টেস্টে লম্বা সময় অধিনায়কের দায়িত্ব কাউকে দেওয়া হয় না, টি-টোয়েন্টিতেও হয় না…

ডমিঙ্গো: মুমিনুল তো আমাদের টেস্ট অধিনায়ক!

হ্যাঁ, আমরা সেটা জানি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে অধিনায়ক বলা কঠিন, কারণ তাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সিরিজ ধরে। এখন কেবলমাত্র ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালকেই অনির্দিষ্ট মেয়াদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই সংস্করণে প্রতিটি সিরিজ ধরে দায়িত্ব দেওয়া হয়…

ডমিঙ্গো: এই ব্যাপার নিয়ে আসলে আমাদের আলোচনার সুযোগ আছে। কথা বলতে হবে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে লম্বা সময় দায়িত্ব দেওয়া ও পরিকল্পনা করা জরুরি।

এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চলছে, কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক জানেন না তার দায়িত্ব কতদিনের। দুই বছরে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, কেউ জানে না কে অধিনায়কত্ব করবেন। এভাবে কি অধিনায়ক নিজের ছাপ রাখা বা নিজেকে মেলে ধরার, সতীর্থদের আস্থা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছেন?

ডমিঙ্গো: নিজের দায়িত্ব ও মেয়াদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা অবশ্যই জরুরি। তাহলে সে পরিকল্পনা সাজাতে পারে, সেভাবে দল গোছাতে পারে। এরপর সে সফল হতে পারে, নাও পারে। কিন্তু তার সুযোগ থাকে। সংক্ষিপ্ত সময়ের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কখনোই কার্যকর হয় না।

অধিনায়ক মমিনুলকে নিয়ে বললেন একটু আগে। ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে তামিম ইকবালের সম্ভাবনা কতটা দেখন?  

ডমিঙ্গো:
তামিম অধিনায়ক হওয়ার পর তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো ওয়ানডেই খেলতে পারলাম না আমরা। অধিনায়ক হিসেবে তাই ওর সঙ্গে কাজ করা হয়নি, ততটা ধারণা এখনও নেই। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একজন সে, সফলতম ব্যাটসম্যান। যে সংস্করণে সে অধিনায়ক, সেই সংস্করণে দুর্দান্ত ক্রিকেটার। অধিনায়ক হিসেবে সে কীভাবে এগোয়, এটা দেখতে আমিও মুখিয়ে আছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি রোমাঞ্চিত তার সঙ্গে কাজ করার সম্ভবনায়।

সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট ও স্ট্রাইক রোটেশন নিয়ে কিছু প্রশ্ন গত কিছুদিনে উঠেছে। এটা নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

ডমিঙ্গো: আমার এটা নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা নেই। একটুও নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কথা আমাকে অনেকেই বলেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া বা সমর্থকদের কথা নিয়ে ভাবলে আমার চলবে না। দলের জন্য কোনটা প্রয়োজনীয়, আমার কাছে সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়ের ওয়ানডে ক্রিকেটের দাবি কিংবা দলের চাওয়া কি তিনি মেটাতে পারছেন?

ডমিঙ্গো: হি ইজ ফাইন, হি ইজ ফাইন।

আরেকটি আলোচিত প্রসঙ্গ, সামনে যেটির মুখোমুখি হয়তো তামিম ও আপনাকে হতে হবে। মাশরাফি বিন মুর্তজা নেতৃত্ব ছাড়লেও ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়েননি। সামনে তাকিয়ে, দলে তার ভবিষ্যৎ আপনি কিভাবে দেখেন?

ডমিঙ্গো: মাশরাফির সঙ্গে অবশ্যই আমাদের বসতে হবে, কথা বলতে হবে। কথা বললে পরস্পরের মনোভাব আমরা জানতে পারব। তার সঙ্গে কথা না বলে আমি কিছু বলতে চাই না। কারণ সে দলের সাবেক অধিনায়ক, সফলতম অধিনায়ক এবং অনেক কিছু দিয়েছে। সেই সম্মান তার প্রতি আমাদের দেখাতে হবে। আলোচনা যেটিই হোক, খুব আন্তরিকভাবে হবে তা।

তার ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত সে অবশ্যই নিতে পারে এবং দলে জায়গা পাওয়ার বিবেচনায় নিজেকে রাখতে পারে। তবে আমারও অবশ্যই তার সঙ্গে বসতে হবে, দল নিয়ে আমার ভবিষ্যৎ ভাবনা ব্যাখ্যা করতে হবে, তার কথাও শুনতে হবে। তার পর দেখা যাবে। আশা করি, আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে বা পরের ওয়ানডে খেলার আগেই তার সঙ্গে কথা বলব।

মাশরাফি বেশ কবারই বলেছেন , ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন এবং ওয়ানডে দলে নেওয়া হলে চালিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে তখন কি তাকে আর সব বোলারের মতোই পারফরম্যান্স দিয়ে বিবেচনা করা হবে নাকি অন্য কোনো সুবিধা কিংবা বাধা তার থাকবে?

ডমিঙ্গো: (একটু ভেবে) নির্বাচক তো শুধু আমিই নই, অন্য নির্বাচকদের সঙ্গে বসতে হবে আমার। আমি একাই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। একটা ব্যাপার হলো, অনেক তরুণ পেসার উঠে আসছে এবং কোচ হিসেবে আমি চাইব তাদের ম্যাচ খেলার সুযোগ করে দিতে। তাই যেটা বলছিলাম, মাশরাফি-বোর্ড-নির্বাচক, সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে সবকিছু।

আগামী তিন বছরে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, একটি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। আপনার কি মনে হয়, দলের প্রস্তুতি ঠিক পথে আছে? মহামারীতে যদিও খেলা বন্ধ, কিন্তু পরিকল্পনার দিক থেকে, সামনে এগোনোর পথ গোছানো, সম্ভাব্য ছবি আঁকা, এসব কি ঠিক আছে?

ডমিঙ্গো: লম্বা সময় ধরে খেলা বন্ধ আছে। আমরা আবার যখন শুরু করব, অবশ্যই প্রস্তুতিও পথে ফিরবে। শুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এখনও এক বছর আছে। সময় তাই আছে। পরিকল্পনা তো চলতেই থাকে। মাঠের খেলা শুরু হলেই আসল প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে।

প্রস্তুতি তো একটা বড় ধাক্কা খেল নিল ম্যাকেঞ্জি ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায়!

ডমিঙ্গো: ওর চলে যাওয়াটা অবশ্যই আমাদের জন্য আদর্শ নয়। মাঝপথে ম্যানেজমেন্টে কয়েকটি বদল এসেছে (বোলিং কোচের দায়িত্বে শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টের জায়গায় এখন দায়িত্বে ওটিস গিবসন), খুব সহজ নয় এসব বদল। বিশেষ করে ম্যাকেঞ্জিকে হারানো অবশ্যই খুব বড় ধাক্কা, ছেলেদের আস্থা ছিল ওর ওপর। তবে কিছু করার নেই। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার দুটি লক্ষ্যের কথা মনে করা যেতে পারে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ের চারে তুলতে চেয়েছেন এবং নতুন তারকা বের করতে চেয়েছেন। চুক্তির অর্ধেক পথ পেরিয়ে গেছে, কী মনে হয়, কতটা পারবেন?

ডমিঙ্গো: দুর্ভাগ্যজনকভাবে, খেলাই বন্ধ হয়ে আছে লম্বা সময় ধরে। এই এক বছরে আমরা কেবল তিনটি ওয়ানডে খেলেছি, র‍্যাঙ্কিংয়ের উন্নতির ক্ষেত্রে এটাই চ্যালেঞ্জের। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা খুব ভালো ওয়ানডে দল। ওয়ানডের উপযোগী ক্রিকেটার অনেক আছে দলে, ছেলেরা ওয়ানডে খুব উপভোগ করে। আমি সত্যিই বিশ্বাস করি, ওয়ানডেতে আমরা সেরা তিন-চারে যেতে পারি। অবশ্যই পারি।

নতুনদের ক্ষেত্রে, অনেককে নিয়েই আমার আশা আছে। সাইফ হাসান খুব ভালো ব্যাটসম্যান হয়ে উঠতে পারে। রাব্বিকেও (ইয়াসির আলি চৌধুরি) মনে ধরেছে আমার। শান্তর কথা তো অনেকবারই বলেছি, খুবই ভালো সম্ভাবনা আছে ওর। হাসান মাহমুদ, দুর্দান্ত এক তরুণ পেসার। ওকে নিয়ে অনেক আশা আমার।

তরুণ প্রতিভা আরও বেশ কিছু আছে। আশা করি বছর দুয়েকের মধ্যেই আমরা ওদেরকে সুপারস্টার হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।