তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিং, সাইফ-সৌম্যর ফিফটি

নেটে টানা দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর এবার ম্যাচেও জ্বলে উঠলেন তাসকিন আহমেদ। অনুশীলন ম্যাচের প্রথম দিনে আগুন ঝরা বোলিং উপহার দিলেন এই ফাস্ট বোলার। তাসকিনের সমান ৩ উইকেট নিলেও বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বোলিংয়ে ছিল না ততটা ধার। ব্যাটসম্যানদের বেশির ভাগেরই হতাশ করার দিনে ফিফটি করতে পারলেন কেবল সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2020, 01:11 PM
Updated : 2 Oct 2020, 01:11 PM

দুই দিনের এই ম্যাচ দিয়েই সাড়ে ৬ মাস পর ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার সুযোগ আপাতত নাই। তাই বোলিং কোচ ও ফিল্ডিং কোচের নামে ওটিস গিবসন একাদশ ও রায়ান কুক একাদশে ভাগ হয়ে ম্যাচটি খেলছে ক্রিকেটাররা। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার প্রথম দিনে ২৩০ রানে গুটিয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন গিবসন একাদশ। 

প্রথম দিন সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তাসকিনই। লকডাউনের সময়টায় নিজের ফিটনেস নিয়ে অনেক খেটেছেন, ওজন ঝরিয়েছেন। এরপর নেটেও গত কিছুদিনে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তিনি। এবার ম্যাচেও দারুণ আগ্রাসী ও গতিময় বোলিং করলেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, শুধু নতুন বলে নয়, পুরোনো বলেও ছিলেন প্রায় একইরকম কার্যকর।

তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ের শুরু ম্যাচের প্রথম বল থেকেই। তার বাড়তি বাউন্সের বল সাইফের ব্যাটে ছোবল দিয়ে যায় পেছনে। তৃতীয় স্লিপে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম, উল্টো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।

নিজের পরের ওভারেই তাসকিন পেয়ে যান প্রথম উইকেট। ফুল লেংথ বলে ইমরুল কায়েসকে একবার ভূপাতিত করার একটু পর বিদায়ও করে দেন তিনি। বেরিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইমরুল (৭), যেভাবে আউট হয়েছেন ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার।

আরেক ওপেনার সাইফ ও তিনে নামা শান্তকেও বেশ কঠিন সময় উপহার দিয়েছেন তাসকিন। তবে অন্য দুই পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ ও আল আমিন হোসেনের বোলিংয়ে ছিল না ততটা ধার। বড় চোট কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর মাঠে নামা খালেদ প্রথম স্পেলে ছিলেন একটু এলোমেলো।

তাসকিনের বোলিংয়ে ভুগলেও অন্যদের স্বচ্ছন্দে খেলতে থাকেন শান্ত ও সাইফ। আগের অ্যাকশন বদলে ড্যানিয়েল ভেটোরির মতো অ্যাকশনে বোলিং করা তাইজুলকে শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণ করেন দুজন। মুখোমুখি প্রথম বলেই বেরিয়ে এসে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন শান্ত, আরেকটি অফ ড্রাইভে মারেন চার। তাইজুলকেই কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কায় ওড়ান সাইফ।

এই জুটি অবশ্য ভাঙেন তাইজুলই। নিচু হয়ে যাওয়া বলে আলগা শটে এলবিডব্লিউ হন সাইফ। ৯ চার ও ১ ছক্কায় করেন তিনি ৮৬ বলে ৬৪। দারুণ কিছু শট যেমন তিনি খেলেছেন, আবার অনেকবারই পড়েছেন অস্বস্তিতে। বিশেষ করে পায়ের কাজে জড়তা ছিল স্পষ্ট।

শান্ত ছিলেন বেশ সাবলীল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ গতিময় এক বলে তাকে ফেরান তাসকিন। ৪২ রান করা শান্ত অবশ্য কট বিহাইন্ডের সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না মোটেও।

চারে নামা মাহমুদউল্লাহর দিকে চোখ ছিল অনেকের। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়া এই সিনিয়র ক্রিকেটারের সামনে প্রতিটি ম্যাচই সুযোগ নিজের ফেরার দাবি জানানোর। প্রথম সুযোগটি তিনি কাজে লাগাতে পারেননি। ৩৪ রানে তিনিও শিকার তাসকিনের।

প্রথম স্পেলের পর জড়তা একটু কাটিয়ে ওঠেন খালেদ। তার স্কিড করা বলে উড়ে যায় লিটন দাসের বেলস।

এরপর সৌম্যর ব্যাটে নিয়মিত এসেছে বাউন্ডারি, কিন্তু আরেকপাশে দাঁড়োতে পারেননি কেউ। মোসাদ্দেক হোসেনকে ১৩ রানেই থামান তাইজুল।

শেষ দিকে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে বল তুলে চমকে দেন রায়ান কুক একাদশের অধিনায়ক মুমিনুল। কিপার-ব্যাটসম্যান মিঠুন আরও বড় চমক দেন বল হাতে। ১.৫ ওভার বোলিংয়ে তুলে নেন নাঈম হাসান ও ইবাদত হোসেনের উইকেট।

১০ চারে ৫১ রান করা সৌম্যকে ফিরিয়ে একমাত্র শিকার ধরেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। ৬ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে নাটকীয়ভাবে গুটিয়ে যায় গিবসন একাদশ।

আলোকস্বল্পতার কারণে এ দিন আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেনি কুক একাদশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওটিস গিবসন একাদশ: ৬৩.৪ ওভারে ২৩০ (সাইফ ৬৪, ইমরুল ৭, শান্ত ৪২, মাহমুদউল্লাহ ৩৪, লিটন ৭, সৌম্য ৫১, মোসাদ্দেক ১৩, নাঈম ২, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ৪, হাসান ০*; তাসকিন ১৭-৪-৪৫-৩, খালেদ ১৩-৩-৫৯-১, আল আমিন ৮-০-১৯-০, তাইজুল ১৭-১-৭০-৩, সাইফ উদ্দিন ৭-১-৩০-১, মিঠুন ১.৪-০-৫-২)।