আশাভরে সামনে তাকিয়ে মুমিনুল-তামিম-মুশফিকরা

ব্যাট-বলের লড়াইয়ের উত্তেজনা আবার ফিরে আসতে শুরু করেছিল। স্কিল ঝালাইয়ের পাশাপাশি চলছিল নানা পরিকল্পনাও। রোমাঞ্চ নিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরের অপেক্ষায় ছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আপাতত এসবের সমাপ্তি। সফর স্থগিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হতাশ ক্রিকেটাররা। তবে বাস্তবতাও তারা অনুধাবন করছেন। তাই হতাশায় মুষড়ে না পড়ে নতুন আশা নিয়েই সামনে তাকিয়ে মুমিনুল হক, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2020, 01:16 PM
Updated : 29 Sept 2020, 01:16 PM

সফর স্থগিত হলেও ক্রিকেটারদের স্কিল ক্যাম্প চলবে আরও দুই সপ্তাহ। আপাতত তারা মনোযোগী এই ক্যাম্পে নিজেদের শাণিত করা নিয়ে। এরপর একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে ঘরোয়া মৌসুম শুরুর পরিকল্পনা করছে বিসিবি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে সফর পিছিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া আর সামনের পরিকল্পনা জানালেন ক্রিকেটারদের অনেকে। 

মুমিনুল হক

“বাস্তবতা মানতেই হবে। কিছু করার নেই। অবশ্যই খেলায় ফিরতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু আপাতত নিরাপদ থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি টেস্ট সিরিজ খেলতে গেলে প্রস্তুতিও যথাসম্ভব ভালো হওয়া দরকার। বিসিবি এখানে কোনো আপোস করেনি, সেটিই ঠিক হয়েছে।”

“এমনিতে আমি মানসিকভাবে তৈরি হয়ে গিয়েছিলাম সফরের জন্য। দল নিয়ে, নিজেকে নিয়ে ভাবনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে ভাবনা আসলে সবসময়ই থাকে, এখনও আছে। আপাতত ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে তাকিয়ে আছি।”

“ঘরোয়া ক্রিকেট আমার মনে হয়, খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। মন্দের ভালো হিসেবে এটা বলতে পারি যে, ৬ মাস ধরে আমরা খেলার বাইরে, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললে ভালো হবে।”

মুশফিকুর রহিম

“সিরিজ হলে খুব ভালো লাগত। পরিস্থিতির কারণে হচ্ছে না, কিছু তো করার নেই। আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন।”

“আমরা পেশাদার ক্রিকেটার, প্রস্তুতি চালিয়ে যাব। সামনে যখন খেলা শুরু হবে, তখন টানা অনেক খেলা হবে। তখন যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট ও প্রস্তুত থাকি, সেই চেষ্টা করে যাব।”

“সামনে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচ রেখেছে বিসিবি, এটা খুব ভালো উদ্যোগ। যতই অনুশীলন করি না কেন, ম্যাচ খেললে এবং ম্যাচে বড় স্কোর করলে এটা অন্যরকম আত্মবিশ্বাস আসে। এখন তাই প্র্যাকটিস ম্যাচগুলিতে ভালো করা নিয়ে চিন্তা করছি।”

“খেলা না থাকার এই লম্বা সময়টা অবশ্যই হতাশার। তবে এর মধ্যেও একটি ইতিবাচক দিক হলো, এই সময়টায় ফিটনেস ও টেকনিক্যাল স্কিল নিয়ে, ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে অনেক কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। খেলা চলতে থাকলে সাধারণত এসব নিয়ে কাজ করার সুযোগ আসে না। সব মিলিয়ে আমি আগ্রহ নিয়েই সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।”

তামিম ইকবাল

“আমরা তো খেলতে প্রস্তুতই ছিলাম। কিন্তু শ্রীলঙ্কার শর্তগুলো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে। বিসিবি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। ওই শর্তগুলো মেনে খেলার মতো অবস্থায় নেই আমরা।”

“আমরা অবশ্যই চাই খেলা হোক, যত দ্রুত সম্ভব আমরা যেন ম্যাচে ফিরতে পারি। এজন্যই কাজ করে যাচ্ছিলাম সবাই। মানসিকভাবেও সিরিজের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেখানে আমরা বুঝতেই পারছি প্রস্তুতি যথেষ্ট হবে না সিরিজের জন্য, তখন খেলতে যাওয়া কঠিন।”

“আমরা আমাদের মতো প্র্যাকটিস করে যাব। সামনে ঘরোয়া ক্রিকেট বা যেটাই হোক, বিসিবি নিশ্চয়ই ভালো কিছুই ঠিক করবে আমাদের জন্য। আন্তর্জাতিক সিরিজ যার সঙ্গেই খেলি সামনে, আশা করি ততদিনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকব।”

তাইজুল ইসলাম

“অনেক দিন খেলা নেই তো, ভালো লাগছে না। আমরা খেলার মানুষ, খেলা হলেই ভালো লাগে। ক্রিকেট শুরু করার পর থেকে মনে হয় এত লম্বা সময় ম্যাচ খেলা ছাড়া থাকিনি। কিন্তু এখানে আমাদের কারও হাত নেই। বিসিবি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের ভালো জন্য, দেশের ক্রিকেটের ভালোর জন্যই নিয়েছে।”

“মানসিকভাবে আমরা সিরিজের জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলাম একরকম। আসলে এখনও প্রস্তুত আছি। বিসিবি যেখানেই বলবে, আমরা খেলব। সবারই আসলে একই অবস্থা, খেলতে চায়। আশা করি, দ্রুতই খেলায় ফিরবে পারব আমরা।”

তাসকিন আহমেদ

“অনেক দিন পর খেলা হওয়ার কথা ছিল। শুধু আমি নই, সবাই খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম। এখন খারাপ লাগছে অবশ্যই। তবে কিছু করার নেই। কারও হাত নেই এই পরিস্থিতির ওপর। সবাইকে মেনে নিতেই হবে।”

“আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো এগোচ্ছিল। খুব ভালো ট্রেনিং চলছে। ব্যাক্তিগতভাবে বললে, আমি লকডাউনের সময়টায় অনেক খেটেছি ফিটনেস নিয়ে। এরপর ট্রেনিংয়ে বোলিংয়েও উন্নতির চেষ্টা করছি। কোচরাও খুশি হয়েছেন আমার বোলিং দেখে। এখন চাওয়া, যত দ্রুত খেলা শুরু হয়। বিসিবি নিশ্চয়ই ভালো কিছুই করবে আমাদের জন্য।”

“আমি চেষ্টা করব, এই ডিসিপ্লিন ও উন্নতির ধারাটা ধরে রাখতে। খেলা নাই বলে হারাতে চাই না সবকিছু। সামনে ২ সপ্তাহ ক্যাম্প হবে আরও, প্র্যাকটিস ম্যাচ হবে। ভালো করার চেষ্টা করব। এই সিরিজটা হলে খুব ভালো হতো। তবে সুযোগ সামনেও আসবে ইনশাল্লাহ। অনেক খেলা আছে। তখনও পারফর্ম করার চেষ্টা করব।”

মেহেদী হাসান মিরাজ

“বিসিবির সিদ্ধান্ত আমরা সবসময় সমর্থ করি। এবারও তারা ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।”

“ক্রিকেটীয় দিক থেকে সফর না হওয়ার ভালো-খারাপ দুটি দিকই আছে। একটা হলো, অনেকদিন থেকে আমরা খেলছি না। খেলা হলে অবশ্যই ভালো লাগত। কিন্তু অন্য আরেকটা দিকও আছে। সিরিজটি হলে, ১৫-২০ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে খেলতে হতো আমাদের। এই কদিনের অনুশীলনে আর কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা সহজ কিছু নয়। ফল ভালো না হলে তখন আবার অনেক কথা হতো।”

“সেদিক থেকে এটা ভালো হয়েছে যে আমরা এখন ক্যাম্পে থাকব, সামনে ঘরোয়া ক্রিকেট হবে, খেলার মধ্যে থাকব। তার পর আন্তর্জাতিক ম্যাচ আবার যখন খেলব, তার আগে নিজেদের প্রস্তুত করার পর্যাপ্ত সময় পাব।”

নাজমুল হোসেন শান্ত

“সত্যি বলতে, সিরিজ হচ্ছে না বলে একটু হতাশ লাগছে। যদিও বাস্তবতা এখন কঠিন এবং বিসিবি এজন্যই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সফরে না যাওয়ার। এখনকার পরিস্থিতিকে মেনে চলাই আপাতত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খারাপ লাগছে, তবে খুব বেশি চিন্তার কিছু দেখছি না। বিসিবি অবশ্যই পরিস্থিতি বুঝে যখন যেভাবে প্রয়োজন, সিদ্ধান্ত নেবে।”

“ব্যাক্তিগতভাবে, আমি ভালো খেলছিলাম। পাকিস্তানে টেস্টে, এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টেস্ট খেলে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম। এরপরই এত লম্বা বিরতিটা হতাশার বটে। তবে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে না। আবার ভালো খেলতে পারব না, এমন তো নয়। নেতিবাচক কিছু ভাবছি না।”

“সামনে আমরা প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলব। চেষ্টা করব সেগুলোয় ভালো করার। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে যেটাই হোক, পারফর্ম করতে চাইব। এভাবেই আস্তে আস্তে এগোনের চেষ্টা করব। আশা করি, এভাবেই নিজের ছন্দটা ধরে রাখব ও রানের মধ্যে থাকতে পারব।”