ম্যানচেস্টারে বুধবার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে অ্যারন ফিঞ্চের দল। দুই বল বাকি থাকতে ৩০৩ রানের লক্ষ্য স্পর্শ করে সফরকারীরা।
ষষ্ঠ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দুইশ রানের জুটিতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন ম্যাক্সওয়েল ও কেয়ারি। ভাগ্যকে পাশে পাওয়া দুই ব্যাটসম্যানই পেয়েছেন সেঞ্চুরির দেখা; ম্যাক্সওয়েলের দ্বিতীয়, কেয়ারির প্রথম।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের মতো। প্রথম দুই বলেই নেই জেসন রয় ও জো রুট! মিচেল স্টার্ককে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন রয়। পরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ রুট।
ভালো শুরুটা অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ওয়েন মর্গ্যানকে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে দলকে পথ দেখান বেয়ারস্টো। দ্রুত এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
আবার জোড়া উইকেটের ধাক্কা ইংল্যান্ড সামাল দেয় শতরানের জুটিতে। ১১৭ বল স্থায়ী ১১৪ রানের জুটিতে অগ্রণী ছিলেন স্যাম বিলিংস।
লেগ স্পিনার জ্যাম্পাকে রিভার্স সুইপ করে বিলিংস ক্যাচ দিলে ভাঙে বিপজ্জনক জুটি। ৫৮ বলে দুই ছক্কা ও চারটি চারে ৫৭ রান করে ফিরেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
এরপর বেশিক্ষণ টেকেননি বেয়ারস্টো। প্যাট কামিন্সের বেশ ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে যান এই ওপেনার। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিতে ১২৬ বলে ১২ চার ও দুই ছক্কায় তিনি করেন ১১২ রান।
ডেথ ওভারের প্রথম বলে শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে বেয়ারস্টো ফিরে গেলেও ভাটা পড়েনি ইংলিশদের রানের গতিতে। টম কারান ও আদিল রশিদকে নিয়ে দলকে তিনশ রানে নিয়ে যান ওকস। ৩৯ বলে ৬ চারে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন এই অলরাউন্ডার।
জ্যাম্পা ৫১ রানে নেন ৩ উইকেট। দারুণ শুরু এনে দেওয়া বাঁহাতি পেসার স্টার্ক খরুচে বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেন ৭৪ রানে।
জফ্রা আর্চারের ‘বানি’ বনে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নার এবার কাটিয়ে দেন গতিময় এই পেসারকে। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনিও। আক্রমণে এসে নিজের প্রথম ওভারেই দারুণ এক ডেলিভারিতে বাঁহাতি এই ওপেনারকে বোল্ড করে দেন রুট। পরে কট বিহাইন্ড করেন মিচেল মার্শকে।
সফরকারীদের বিপদ আরও বাড়িয়ে রান আউট হয়ে যান মার্নাস লাবুশেন। সপ্তদশ ওভারে ৭৩ রানে নেই অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেট।
পরিস্থিতি হতে পারতো আরও খারাপ। আর্চারের ‘নো’ বলের কল্যাণে ব্যক্তিগত ৯ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান কেয়ারি। আদিল রশিদকে স্লগ করতে গিয়ে কিপার বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান ম্যাক্সওয়েল।
পরে রশিদের উপরে চড়াও হয়ে রানের গতি বাড়ান বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে তাকে সঙ্গ দেন কেয়ারি।
আগের সেরা ১০২ ছাড়িয়ে ম্যাক্সওয়েল করেন ১০৮। ৯০ বলে ৭ ছক্কা ও চারটি চারে গড়া এই ইনিংসের পথে পৌঁছান তিন হাজার রানের মাইলফলকে।
পরের ওভারে ফিরে যান কেয়ারিও। আগের সেরা ৮৫ ছাড়িয়ে এই কিপার-ব্যাটসম্যান করেন ১০৬ রান। তার ১১৪ বলের ইনিংসে সাত চারের পাশে ছক্কা দুটি।
শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন দুই সেঞ্চুরিয়ান। পরপর দুই ওভারে তাদের বিদায়ে শঙ্কায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। দুই টেলএন্ডারকে দেখে একটা জুয়াই খেলেন ইংলিশ অধিনায়ক। মার্ক উডকে রেখে শেষ ওভারে বল তুলে দেন রশিদের হাতে। তার ছিল ১০ রানের পুঁজি।
ম্যাচের প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে জোর ধাক্কা দেওয়া স্টার্কের ব্যাট থেকেই আসে জয়সূচক রান। তিন বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১১ রান করে তিনিও ফেরেন নায়কের বেশে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (রয় ০, বেয়ারস্টো ১১২, রুট ০, মর্গ্যান ২৩, বাটলার ৮, বিলিংস ৫৭, ওকস ৫৩*, কারান ১৯, রশিদ ১১*; স্টার্ক ১০-০-৭৪-৩, হেইজেলউড ১০-০-৬৮-০, কামিন্স ১০-০-৫৩-১, জ্যাম্পা ১০-০-৫১-৩, মার্শ ৬-০-২৫-০, ম্যাক্সওয়েল ৪-০-২৩-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৯.৪ ওভারে ৩০৫/৭ (ওয়ার্নার ২৪, ফিঞ্চ ১২, স্টয়নিস ৪, লাবুশেন ২০, মার্শ ২, কেয়ারি ১০৬, ম্যাক্সওয়েল ১০৮, কামিন্স ৪*, স্টার্ক ১১*; ওকস ১০-০-৪৬-২, আর্চার ৯-০-৬০-১, উড ৯-১-৪০-০, রুট ৮-০-৪৬-২, কারান ৬-১-৪০-০, রশিদ ৭.৪-০-৬৮-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
ম্যাচ অব দা সিরিজ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল