ক্রলি-বাটলারের রেকর্ড জুটির পর অ্যান্ডারসনের ছোবল

দারুণ ব্যাটিংয়ে আড়াইশ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন জ্যাক ক্রলি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে সঙ্গ দিলেন জস বাটলার। পঞ্চম উইকেটে তাদের রেকর্ড গড়া জুটিতে রান-পাহাড় গড়ল ইংল্যান্ড। শেষ বেলায় পাকিস্তানের তিন উইকেট তুলে নিয়ে তৃতীয় টেস্টে নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করলেন জেমস অ্যান্ডারসন।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2020, 06:56 PM
Updated : 22 August 2020, 07:42 PM

সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে ৫৮৩ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ৩ উইকেটে ২৪ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে পাকিস্তান।

আজহার আলি ৪ রানে ব্যাট করছেন। ফলোঅন এড়াতে এখনও ৩৬০ রান চাই সফরকারীদর। 

দ্বিতীয় ওভারে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া শান মাসুদ পরের ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন। অ্যান্ডারসনের দারুণ ডেলিভারির কোনো জবাব জানা ছিল না তার।

অ্যান্ডারসনের পরের ওভারে স্লিপে ধরা পড়েন আরেক ওপেনার আবিদ আলি। দিনের বাকি সময় কোনো ক্ষতি ছাড়াই কাটিয়ে দেওয়ার আশা জাগিয়েছিলেন বাবর আজম ও আজহার। কিন্তু অ্যান্ডারসনের একটু নিচু হয়ে দ্রুত ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান বাবর।

ছয়শ উইকেটের দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলেন অ্যান্ডারসন। ১৩ রানে ৩ উইকেট নেওয়া এই পেসার মাইলফলক থেকে কেবল ৪ উইকেট দূরে।

সাউথ্যাম্পটনে এর আগে ৪ উইকেটে ৩৩২ রানে শনিবার দিন শুরু করে ইংল্যান্ড। প্রথম সেশনে বারবার বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হলেও ক্রলি ও বাটলারের মনঃসংযোগে তা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান বাটলার, নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন ক্রলি।

১৭১ রানে ৪০ বল আটকে ছিলেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। আগের দিন ৮৬তম ওভারে শেষ রানের দেখা পাওয়া ক্রলি ৯৯তম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আলগা করেন ফাঁস। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

এক প্রান্তে মোহাম্মদ আব্বাস দারুণ লাইন-লেংথে বোলিং করে বেধে রাখছিলেন ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু অন্য প্রান্তে মাঝে মধ্যেই বাজে বল উপহার দিচ্ছিলেন আফ্রিদি। নাসিম শাহ ও ইয়াসির শাহও সেভাবে পরীক্ষা নিতে পারেননি ব্যাটসম্যানদের।

৯৯ রানে রিভিউ নিয়ে টিকে যাওয়া বাটলার ১৮৯ বলে পৌঁছান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। দ্রুতই ছাড়িয়ে যান আগের সেরা ১০৬ রান। সাবধানী শুরুর পর শট খেলতে শুরু করেন ক্রলিও। এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড।

তাদের হাত ধরে টেস্টে পঞ্চম উইকেটে নিজেদের প্রথম তিনশ ছোঁয়া জুটি পায় ইংল্যান্ড। এই উইকেটে তাদের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৫৪ রান। ১৯৭৩ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে কিথ ফ্লেচার ও টনি গ্রেগ এই জুটি গড়েছিলেন।

কোনোভাবেই ক্রলি ও বাটলারকে বিচ্ছিন্ন করতে পারছিলেন না আজহার। থামাতে পারছিলেন না রানের গতি। আক্রমণে নিয়ে আসেন অনিয়মিত বোলারদের। তাদের হাত ধরেই ভাঙে জুটি।

আসাদ শফিকের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে যান ক্রলি। ভাঙে ৩৫৯ রানের জুটি। টেস্টে সব মিলিয়ে পঞ্চম উইকেটে এর চেয়ে বড় জুটি আছে কেবল তিনটি।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে পরিণত করার আশা জাগালেও আগেই থামতে হয় ক্রলিকে। ৩৯৩ বলে খেলা তার ২৬৭ রানের ইনিংস গড়া ৩৪ চার ও এক ছক্কায়। টেস্টে নিজের প্রথম সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের হয়ে এর চেয়ে বেশি রান আছে কেবল টিপ ফস্টারের। টেস্ট অভিষেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

ক্রলির বিদায়ের পর রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন বাটলার। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিনশর বেশি বল খেলা এই কিপার-ব্যাটসম্যান শেষ দিকে হয়তো একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। অনিয়মিত বাঁহাতি স্পিনার ফাওয়াদ আলমকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।

৩১১ বলে খেলা বাটলারের ১৫২ রানের ইনিংসে ১৩ চারের পাশে ছক্কা দুটি। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৫৪ বলে ৪০ রান করা ক্রিস ওকসকেও থামান ফাওয়াদ। দুই ছক্কায় ১৫ রান করা স্টুয়ার্ট ব্রডকে আফ্রিদি বোল্ড করে দিলে ইনিংস ঘোষণা করেন জো রুট।

আগের দিনই রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল ইয়াসিরের। শেষ পর্যন্ত এই লেগ স্পিনার ৩৯ ওভারে দিয়েছেন ১৭৩ রান, উইকেট আগের দিনের দুটিই। রান দেওয়ার সেঞ্চুরি হয়েছে আফ্রিদি ও নাসিমেরও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৫৪.৪ ওভারে ৫৮৩/৮ ইনিংস ঘোষণা (আগের দিন ৩৩২/৪) (ক্রলি ২৬৭, বাটলার ১৫২, ওকস ৪০, বেস ২৭*, ব্রড ১৫; আফ্রিদি ৩৩.৪-৫-১২১-২, আব্বাস ৩৩-৮-৮২-০, ইয়াসির ৩৯-৩-১৭৩-২, নাসিম ২৭-৬-১০৯-১, ফাওয়াদ ১২-০-৪৬-২, মাসুদ ৩-১-১১-০, শফিক ৭-০-২৪-১)

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১০.৫ ওভারে ২৪/৩ (মাসুদ ৪, আবিদ ১, আজহার ৪*, বাবর ১১; অ্যান্ডারসন ৫.৫-১-১৩-৩, ব্রড ৩-১-৬-০, আর্চার ২-০-৩-০)