সেরা ফিল্ডার: তুষারের চোখে এগিয়ে সাকিব

এক যুগের সঙ্গে আরেক যুগের তুলনায় প্রবল আপত্তি তুষার ইমরানের। বিশেষ করে তুলনা যখন ফিল্ডিংয়ে, বিভিন্ন প্রজন্মের বাস্তবতায় তিনি পার্থক্য দেখেন আকাশ-পাতাল। তার পরও, কেবল সেরা বাছাইয়ের খাতিরেই তুষার ডুব দিলেন ভাবনার জগতে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান শেষ পর্যন্ত সেরা হিসেবে বেছে নিলেন সাকিব আল হাসানকে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2020, 12:20 PM
Updated : 21 July 2020, 03:01 PM

ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ফিল্ডার। দেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের পছন্দ। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের চতুর্দশ পর্বে তুষার জানালেন তার ভাবনা।

বাংলাদেশের ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে ২০ বছর ধরে খেলছেন তুষার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার প্রায় ১২ হাজার রানের ধারেকাছে নেই দেশের কেউ। ১৭৭ ম্যাচ খেলে ও ৩১ সেঞ্চুরি উপহার দিয়েও তিনি জায়গা করে নিয়েছেন চূড়ায়। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ৫ টেস্ট ও ৪১ ওয়ানডে। ঘরোয়া ক্রিকেট যেমন কাছ থেকে দেখছেন দুই দশক ধরে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও অনুসরণ করে আসছেন লম্বা সময় ধরে। সুদীর্ঘ এই পথচলার অভিজ্ঞতা থেকে তুষার জানালেন তার চোখে সেরা ফিল্ডারদের কথা।

স্লিপে:

“স্লিপে আমি যাকে সেরা বলব, অনেকেই হয়তো অবাক হবেন, অলক কাপালী।”

“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যতদিন খেলেছে, অলক স্লিপে দাঁড়িয়েছে কমই। ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরই বেশি ফিল্ডিং করত। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বছরের পর বছর ধরে দেখছি ওকে স্লিপে দাঁড়াতে।”

“অলকের হাত ভালো, ক্যাচ মিস হয় কম। সবচেয়ে যেটা উল্লেখযোগ্য, স্পিনে স্লিপ ফিল্ডিংয়ে অলক দুর্দান্ত।”

“স্লিপ ফিল্ডারদের কথা বলতে গেলে লোকে হয়তো বেশি ভাবে পেস বোলিংয়ে কে কেমন ফিল্ডিং করে স্লিপে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা আলাদা। এখানে তো উইকেট খুব গতিময় নয়, ১৪০-১৫০ কিলোমিটার গতির বোলারও নেই যে স্লিপে অনেক জোরে বল আসবে। বাংলাদেশে পেস বোলিংয়ে স্লিপ ফিল্ডিং বেশ সহজ। বল আসেই কম। এলেও খুব বেশি পরীক্ষা নেয় না ফিল্ডারদের।”

“স্পিনে আবার উল্টো। বিশেষ করে ব্যাটসম্যান কাট খেলতে গেলে, বা অনেক সময় ড্রাইভ করলেও বল চোখের পলকে চলে আসে স্লিপে। স্লিপ ফিল্ডারের রিফ্লেক্স ভালো হতে হয়। স্পিনে দারুণ সব ক্যাচ নিতে আমি দেখেছি অলককে।”

“এছাড়া জুনায়েদ সিদ্দিক, ফরহাদ হোসেনও স্লিপে ভালো। ওরা মূলত রানিংয়ে সেভাবে দক্ষ নয় বলে স্লিপে দাঁড়াতে দাঁড়াতে ভালো হয়ে গেছে। তবে সেরা আমার কাছে অলকই।”

৩০ গজ বৃত্তে:

“বৃত্তের ভেতর সাকিব একসময় বেশ ভালো ছিল। এখনও ভালো। বল খুব দ্রুত থামিয়ে আরও দ্রুত ফেরত পাঠাতে পারে ও। মাশরাফিও দারুণ, ওর আশপাশ দিয়ে বল পাঠানো কঠিন। গুলির বেগে থ্রো করে। পরে নাসির হোসেনও খুব ভালো ছিল।”

“তবে এখানে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখব আফতাব আহমেদকে। অনুশীলনে অনেক আলসেমি করত ও, কিন্তু মাঠে নামলে দেখা যেত উল্টো চেহারা। ওর চেয়ে জোরে দৌড়তে পারত কমজনই। দ্রুত বলের কাছে পৌঁছে যেত। বল থামানো, ডাইভিং, চারপাশে ছুটোছুটি, সবকিছুই আফতাবের ছিল দারুণ।”

সীমানায়:

“বাউন্ডারিতে সাব্বির রহমান খুব ভালো। তরুণদের মধ্যে আফিফ হোসেন দুর্দান্ত। এত গতিময় কোনো ফিল্ডার আমি আগে দেখিনি বাংলাদেশে। বাউন্ডারিতেই বেশি ফিল্ডিং করে সে। ভবিষ্যৎ খুব ভালো ওর। তরুণ বয়সে আমিও ভালোই করতাম। এখন ততটা পারি না।”

“এখানে সেরা বলব অবশ্য সৌম্য সরকারকে। বাউন্ডারিতে ওর হাত থেকে ক্যাচ মিস হয়ই না বলতে গেলে। জাতীয় দলে হোক বা ঘরোয়া ক্রিকেটে, খুব কমই দেখেছি ওকে ক্যাচ ফসকাতে। খুলনা দলে একসঙ্গে খেলি আমরা, তখন অবশ্য স্লিপে অনেক বেশি ফিল্ডিং করে। তবে বাউন্ডারিতে সৌম্য খুবই নির্ভরযোগ্য। বলের কাছে যাওয়া বলেন, ডাইভ দেওয়া বা বল মুঠোয় জমানো, সবই ভালো ওর।”

সব মিলিয়ে সেরা:

“কঠিন, খুবই কঠিন এটা বলা। এক যুগের সঙ্গে আরেক যুগের বাস্তবতায় অনেক অমিল। আমাদের আগের জমানায় ফিল্ডিং অতটা গুরুত্ব পেত না। ফিটনেস, ট্রেনিং নিয়ে সচেতনতা ছিল না। তার পরও অনেকে ভালো করেছেন। আমাদের সময় একটু একটু করে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে ফিল্ডিং। এখন তো মহাগুরুত্বপূর্ণ। আগে এত সীমাবদ্ধতার সধ্যে যারা মোটামুটি ভালোও ছিলেন, এই যুগে তারা কতটা ভালো হতেন? কেউ জানে না সেটা।”

“যদি একটু ভাগ করে বলার সুযোগ পাই, তাহলে ২০০৫ থেকে ২০১২ বা ২০১৩ পর্যন্ত চোখ বন্ধ করে বলা যায় সেরা সাকিব আল হাসান। এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত সেরা নাসির হোসেন, সৌম্য সরকার।”

“সব মিলিয়ে যদি সেরার বাছাই করতেই হয়, আমি বলব সাকিবের কথাই। সত্যিকারের অলরাউন্ডার। ব্যাটে-বলে যেমন, ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশ দলে বছরের পর বছর অনেক অবদান ওর। বৃত্তের ভেতরে দারুণ, বাইরেও একসময় দুর্দান্ত ছিল।”

“সাকিবকে বল হতে দেখলে যেমন ভরসা পাওয়া যায়, ব্যাটিংয়েও যেমন আশা করা যায় বেশির ভাগ সময় কিছু করবে, ফিল্ডিংয়েও তেমন আস্থার একটা জায়গা আছে। সেরা সময়ের সাকিবের ফিল্ডিংয়ে দুর্বলতা ছিল সামান্যই।”