আর্চারের ভুলে ক্ষতি হতে পারত ‘কোটি কোটি পাউন্ড’

এত সতর্কতা, এত এত পরিকল্পনা, সুনিপুন আয়োজনের অক্লান্ত প্রচেষ্টা, সবকিছু এখন শঙ্কায়। ইংল্যান্ডের ছেলেদের জাতীয় দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক স্পিনার অ্যাশলি জাইলস বলছেন, জফ্রা আর্চারের ভুলে ভেস্তে যেতে পারত বোর্ডের সব আয়োজন। হতে পারত বিশাল আর্থিক ক্ষতি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2020, 06:18 AM
Updated : 17 July 2020, 06:18 AM

‘বায়ো-সিকিউর’ বিধি ভঙ্গের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের ইংল্যান্ড দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আর্চারকে। প্রথম টেস্টের ভেন্যু সাউথ্যাম্পটন থেকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য ম্যানচেস্টার আসার পথে ব্রাইটনে নিজের বাসায় ঘণ্টাখানেক সময় কাটিয়ে সিরিজ সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ঝুঁকিতে ফেলেছেন আর্চার।

টিম বাসে সবার একই সঙ্গে ভ্রমণ একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ভেবেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ক্রিকেটারদের সবাইকে ব্যক্তিগত গাড়িতে ভ্রমণের কথা বলেছিল বোর্ড। আর্চার বিপত্তি বাধালেন সেখানেই।

জাইলসের কথায় ইঙ্গিত, এই টেস্ট থেকে বাদ পড়ার পর আর্চারের শাস্তি বাড়তে পারে আরও।

“ ভয়ঙ্কর বিপর্যয় হতে পারত এই ঘটনায়। তার এই ছোট্ট কাণ্ডের খেসারত পুরো গ্রীষ্মেই বয়ে বেড়াতে হতে পারত, ক্ষতি হতে পারত কোটি কোটি পাউন্ড। আমার মনে হয় না, জফ্রা বুঝতে পেরেছিল এটির সম্ভাব্য ধাক্কা কতটা তীব্র হতে পারে। আমরা সবকিছু পরিষ্কার করেই বলেছিলাম যে কেমনটা চাই, কিন্তু সে বোঝেনি।”

“ সব ঘটনারই ফল ভোগ করতে হয় এবং একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে আমরা যাব। শৃঙ্খলা নিয়ে একটি প্রক্রিয়া অবশ্যই থাকবে। আপাতত এটুকুই শুধু বলছি, কারণ ব্যাপারটি চাকরি সংক্রান্ত।”

সিরিজ শুরুর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ফিল সিমন্সও হোটেলের বাইরে গিয়ে শ্বশুরের শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছিলেন। তবে সিমন্স অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলেন, ফেরার পর কারও সংস্পর্শে না গিয়ে হোটেল কক্ষে আইসোলেশনে ছিলেন পাঁচদিন। কিন্তু আর্চার বাসায় সময় কাটিয়ে এসে দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন।

দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াড ঘোষণার সময়ও তার ঘটনা ছিল অজানা, তাই তাকে দলে রাখা হয়েছিল। আর্চার এটিকে সেভাবে গুরুত্বই দেননি। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর খবর, বুধবার দলের অনুশীলনে হালকা চালেই তিনি কথাটি বলেছিলেন সাপোর্ট স্টাফের একজনকে। সাপোর্ট স্টাফের সেই সদস্য ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে দলের মেডিকেল স্টাফদের জানান। সেখান থেকে ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। টিম ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন ঘটনা জানতে পারেন বুধবার রাত ১০টায়। দলের অন্যদের জানানো হয় বৃহস্পতিবার, ম্যাচ শুরুর দিন সকালে। পরে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বোর্ড জানায় আর্চারকে বাদ দেওয়ার খবর।

আর্চার দাবি করেছেন, নিজের বাসায় থাকার সময়টুকুতে কেবল একজনের সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝার পর তিনি দ্রুতই পরীক্ষা করান ও ফল এসেছে নেগেটিভ। তবে কোনো ঝুঁকি না নিতেই দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে বোর্ড। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খবর, আর্চার যার সংস্পর্শে এসেছিলেন, সেই মানুষটি হতে পারেন পেসার ক্রিস জর্ডান। আর্চার ও জর্ডান ঘনিষ্ঠ বন্ধু, থাকেন পাশাপাশি ফ্ল্যাটে। তবে জর্ডান সেটি স্বীকার বা অস্বীকার, কিছুই করেননি এখনও।

আর্চারের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর শঙ্কা আপাতত খুব একটা করছে না ইংল্যান্ডের বোর্ড। তবে তাদের দুর্ভাবনা পুরো গ্রীষ্মের আয়োজন নিয়ে। ক্রিকেট কূটনীতির কঠিন পরীক্ষায় উতরে তারা এই দুঃসময়েও ইংল্যান্ডে সফরে যেতে রাজী করিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ড দলকে। সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজও চূড়ান্ত হওয়ার শেষ ধাপে আছে। ইংল্যান্ডের ব্যবস্থাপনায় ফাঁক আছে ভেবে এখন বেঁকে বসতে পারে অস্ট্রেলিয়া। আর্চারের ঘটনার পর তাই দ্রুত অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে দ্রুত কথা বলে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে ইংল্যান্ডের বোর্ড। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গেও কথা বলতে হয়েছে তাদের।

আর্চার বিবৃতিতে কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন বারবার। জাইলস জানাচ্ছেন, শাস্তি দিলেও বোর্ড পাশেই আছে এই তরুণের।

“ এই ঘটনায় শাস্তির পাশাপাশি সমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই ভুল করি। জফ্রা এই ভুল থেকে শিখবে। আমরা ওকে সমর্থন দেব এবং সামনে তাকাব। এই ঘটনায় বিশ্বাস হারানো বা অর্জনের কিছু নেই। এই প্রথমবার এরকম কিছু সে করল।”

“এই দলের জন্য জফ্রা খুব ভালো সংযোজন। দারুণ এক তরুণ সে, অবিশ্বাস্যরকম বিনয়ী, কঠোর পরিশ্রম করে এবং দলের বড় সম্পদ। এই ঘটনায় সে ভুল করেছে। সে বলেছে যে কতটা দুঃখিত। অবশ্যই সবার জন্য খুব হতাশার ঘটনা এটি। তবে তার বয়স কম, তরুণরা ভুল করতে পারে। তাকে এখান থেকে শিখতে হবে।”