ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। দেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের ভাবনা। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের দ্বাদশ পর্বে এনামুল জানালেন তার চোখে সেরাদের কথা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিলেন এনামুল। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট মাতিয়েছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেও তুলেছিলেন আলোড়ন। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের নায়কদের একজন তিনি। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন ১৮ বছর ৪০ দিন বয়সে, টেস্টে যেটি এখনও সবচেয়ে কম বয়সে ১০ উইকেটের বিশ্বরেকর্ড।
নানা কারণে পরে থমকে গেছে এনামুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে চলেছেন এখনও। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের দ্বিতীয় সফলতম বোলার তিনি (৪৮৪ উইকেট)। দেড় যুগ ধরে খেলছেন দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে আলো ফেললেন তার চোখে সেরা ফিল্ডারদের ওপর।
স্লিপে:
“স্লিপে সেরা জুনায়েদ সিদ্দিক। বাকি সবার চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থেকেই সেরা সে।”
“স্লিপে জুনায়েদের সবচেয়ে বড় গুণ তার মনোযোগ। ফোকাস একটুও নড়ে না। আমাদের ক্রিকেটারদের স্লিপে দাঁড়ানোর অভ্যাস খুব একটা নেই বলে টানা মনোসংযোগ ধরে রাখতে পারে না অনেকে। জুনায়েদ এখানে অনন্য।”
“স্লিপে ওর মুভমেন্টই অন্যরকম। খুবই পজিটিভ, আত্মবিশ্বাসী। বিশেষ করে পেস বোলিংয়ে স্লিপে জুনায়েদ সবসময়ই নির্ভরযোগ্য।”
“স্পিনে আমি একটু এগিয়ে রাখব অলক কাপালীকে। স্পিন আর পেস বোলিংয়ে স্লিপ ফিল্ডিংয়ের পার্থক্য অনেক। অলকের কথা বলছি, কারণ ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে অনেক বছর একই দলে খেলছি দুজন। আমার বলে ওর অসংখ্য ক্যাচ আছে।”
“স্পিন বোলিংয়ে স্লিপে বেশি প্রয়োজন রিফ্লেক্স ও দ্রুত রিঅ্যাকশন টাইম। কারণ, এত কাছে দাঁড়ায় ফিল্ডার, বল অনেক সময় চোখের পলকে চলে আসে। অলকের রিঅ্যাকশন খুবই কুইক। ”
“তবে দুটি মিলিয়ে বললে সেরা অবশ্যই জুনায়েদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিপক্ষ দলে থেকে অনেক বছর ধরে দেখছি। জুনায়েদের মতো কেউ নেই।”
৩০ গজ বৃত্তে:
“একসময় নাদিফ চৌধুরি খুব ভালো ছিল। আমরা যখন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলি, নাদিফ অসাধারণ ছিল বৃত্তের ভেতর। অনেক লম্বা তো, বড় পদক্ষেপে খুব দ্রুত বলের কাছে যেত। আমাদের ধারণা ছিল, বিশ্বমানের ফিল্ডার হয়ে উঠবে সে। পরে নানা কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেভাবে খেলতে পারেনি।”
“আফতাব আহমেদও দুর্দান্ত ছিল এখানে। যখন জাতীয় দলে এলো, দেশের সেরা ফিল্ডারদের একজন। এরপর আরও ভালো হয়ে উঠেছিল। রিফ্লেক্স, থ্রোয়িং, ডাইভিং, সব ভালো ছিল।”
সীমানায়:
“মাশরাফি একসময় বাউন্ডারিতে দারুণ ফিল্ডিং করত। ক্যাচ কখনও ছাড়তে দেখিনি ওকে। তবে ক্যাচিংয়ের চেয়েও ভালো ছিল থ্রোয়িং। এত জোরে থ্রো করত! পরের দিকে ইনজুরি অনেক বেশি হওয়ায় আর বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করেনি।”
“ক্যাচিংয়ে খুব ভালো হাত রুবেল হোসেনের। বাউন্ডারিতে দুর্দান্ত সব ক্যাচ নিয়েছে। তবে ওর থ্রো একটু কমজোর।”
“সেরা হিসেবে বেছে নেব অবশ্য এই সময়ের একজনকে। আফিফ হোসেন। অবিশ্বাস্য গতিময়। ওর মতো এতটা গতিময় ফিল্ডার বাংলাদেশে আর আসেনি, চোখ বন্ধ করে বলতে পারি। অনেক সম্ভাব্য দুই রানকে এক রানেই থামিয়েছে সে। ক্যাচিং-থ্রোয়িংও দারুণ।”
সব মিলিয়ে সেরা:
“রাজিন সালেহ খুব ভালো অলরাউন্ড ফিল্ডার ছিল। ক্লোজ ইন বলুন বা বৃত্তের ভেতর বা বাইরে, সব জায়গায় দক্ষ ছিল। সত্যি বলতে ফিল্ডিং দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলাদা পরিচিতি প্রথম গড়েছিল রাজিনই। ফিটনেস-ফিল্ডিংয়ে তখন আমাদের সবারই আদর্শ ছিল রাজিন।”
“সাকিবও একসময় খুব ভালো ছিল। এখনও নির্ভরযোগ্য। এখন সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত এরাও ভালো। তবে আমার চোখে সেরা দুজন, মাশরাফি ও জুনায়েদ।”
“সেরা হিসেবে বিবেচনায় আমি দুটি দিক বিবেচনায় নিতে পারি, কোনো ক্রিকেটারের সেরা সময় আর সেটা যথেষ্ট লম্বা সময় ধরে রাখা। মাশরাফির সেরা সময়ে ওর মতো কাউকে আমি দেখিনি। মাঠের যে কোনো জায়গায়, ওর ক্ষিপ্রতা, বলকে তাড়া করা, ক্যাচিং, ঝাঁপানো, সব দুর্দান্ত। স্পেশাল ছিল ওর থ্রোয়িং, আগেই বলেছি, বুলেট গতির।”
“পরে ইনজুরির কারণে ওর কিছু সীমাবদ্ধতা এসেছে, বাউন্ডারিতে খুব বেশি আর করেনি ফিল্ডিং। কিন্তু পেসার হয়েও একসময় গালি-পয়েন্টে দুর্দান্ত ছিল। পরে অন্যান্য জায়গাতে এতটুকু ছাড়ও দেয়নি। অসাধারণ অলরাউন্ড ফিল্ডার।”
“জুনায়েদকে পাশাপাশি রাখছি। অনেকে অবাক হতে পারেন এতে। কারণ স্লিপ ছাড়া জুনায়েদ আসলে খুব ভালো ফিল্ডার হিসেবে অনেকের কাছেই পরিচিত নয়। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা তো দেখেছি অনেক। অন্য জায়গাগুলোতে অসাধারণ না হলেও সে নির্ভরযোগ্য। আর স্লিপে অন্যদের চেয়ে এতটা এগিয়ে যে এটা ওকে সার্বিকভাবেও সেরা হিসেবে এগিয়ে নিয়েছে।”
“একজনকে রাখতে আমার খুবই মন চাইছে। সত্যি বলতে, সবার ওপরেই তাকে রাখতে ইচ্ছে করছে, আফিফ হোসেন। তবে যেহেতু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব বেশি খেলেনি, বড় ম্যাচ বা চাপের মুহূর্তগুলোয় ওকে দেখিনি, এখনই তাই রাখছি না। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে, বছর দুয়েক পর ওকে সেরা বলতে বাধ্য হবে সবাই।”