প্রথম টেস্টে ৪ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল জেসন হোল্ডারের দল। নানা বাঁক পেরিয়ে শেষ সেশনে ২০০ রানের লক্ষ্য স্পর্শ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ফল যতটা বলছে, ততটা সহজ ছিল না ক্যারিবিয়ানদের জয়। ইংলিশ পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে তাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে প্রতিটি রানের জন্য। ফিল্ডিংয়ে ইংলিশরা এমনিতে বেশ ভালো; তবে দিনটি তাদের ভালো কাটেনি। হাতছাড়া হয়েছে সহজ-কঠিন বেশ কয়েকটি ক্যাচ। কাজে লাগাতে পারেনি রান আউটের সুযোগ।
চতুর্থ ইনিংসে দুইশ কিংবা এর কম লক্ষ্য তাড়ায় কখনও না হারা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শুরুতেই নাড়িয়ে দেন আর্চার। তার দারুণ গতিময় এক ডেলিভারিতে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন জন ক্যাম্পবেল। আরেক ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট হন বোল্ড। রানের খাতা খোলার আগেই এলবিডব্লিউ শামারাহ ব্রুকস।
রোস্টন চেইস ও জার্মেইন ব্ল্যাকউডের দৃঢ়তায় শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় ক্যারিবিয়ানরা। স্বাগতিকদের বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগায় তারা।
বেন স্টোকসের বলে দুইবার জীবন পান ব্ল্যাকউড। ২০ রানে ক্যাচ দিয়েছিলেন কিপার জস বাটলারকে, ২৯ রানে ররি বার্নসকে। কেউই কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ।
অসাধারণ এক বাউন্সারে চেইসের প্রতিরোধ ভাঙেন আর্চার। ভাঙে ৭৩ রানের জুটি। আর্চার পরে ভোগান নতুন ব্যাটসম্যান শেন ডাওরিচকে। ৫ রানে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া এই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে ব্ল্যাকউডের জুটিতে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আক্রমণে ফিরে ৬৮ রানের জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস। তার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও ‘নো’ বলের জন্য বেঁচে যান ডাওরিচ। কিন্তু পরের বলেই বাটলারের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
হোল্ডারকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন ব্ল্যাকউড। ছিলেন দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে। স্টোকসের বলে মিডঅফে জেমস অ্যান্ডারসনের হাতে ধরা পড়ে থামেন ৯৫ রানে। তার ১৫৪ বলের ইনিংস গড়া ১২ চারে।
এর আগে দুবার অ্যান্ডারসনের মাথার ওপর দিয়ে বল পাঠিয়ে বাউন্ডারি পেয়েছিলেন ব্ল্যাকউড। তৃতীয়বারে আর পারেননি। তার বিদায়ের সময় জয় থেকে ১১ রান দূরে ছিল সফরকারীরা।
চাপে ভেঙে পড়েনি দলটি। শুরুতে চোট পাওয়া ক্যাম্পবেল ফিরেন ক্রিজে। উডের গতিময় ডেলিভারি আঘাত হানে তার হেলমেটের গ্রিলে। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। হোল্ডারকে নিয়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
৭৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের সেরা বোলার গ্যাব্রিয়েল। ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার পেলেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য প্রায় চার মাস পর এই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরল ক্রিকেট। ব্যাটে-বলে লড়াই হলো তুমুল, ছড়ালো রোমাঞ্চ। প্রত্যাবর্তন হলো রাজসিক। ‘জীবাণুমুক্ত পরিবেশে’ হয়ে যাওয়া প্রথম ম্যাচ হিসেবে সাউথ্যাম্পটন টেস্ট এমনিতেই ইতিহাসের একটি বিশেষ পাতায় থাকবে। মাঠের লড়াইও কম মুগ্ধতা ছড়ায়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২০৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩১৮
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৮৪/৮) ১১২.২ ওভারে ৩১৩ (আর্চার ২৩, উড ২, অ্যান্ডারসন ৪*; রোচ ২২-৮-৫০-০, গ্যাব্রিয়েল ২১.২-৪-৭৫-৫, হোল্ডার ২২-৮-৪৯-১, চেইস ২৫-৬-৭১-২, জোসেফ ১৬-২-৪০-২, ব্র্যাথওয়েট ৩-০-৯-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২০০) ৬৪.২ ওভারে ২০০/৬ (ব্র্যাথওয়েট ৪, ক্যাম্পবেল ৮*, হোপ ৯, ব্রুকস ০, চেইস ৩৭, ব্ল্যাকউড ৯৫, ডাওরিচ ২০, হোল্ডার ১৪*; অ্যান্ডারসন ১৫-৩-৪২-০, আর্চার ১৭-৩-৪৫-৩, উড ১২-০-৩৬-১, বেস ১০-২-৩১-০, স্টোকস ১০.২-১-৩৯-২)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: শ্যানন গ্যাব্রিয়েল