সেরা ফিল্ডার: আফিফের মাঝে সবকিছুই দেখেন ইমরুল

আফিফ হোসেনের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক দিন ধরেই রোমাঞ্চিত বাংলাদেশের ক্রিকেট। অনেকেই তার মাঝে দেখেন ভবিষ্যৎ ‘জেনুইন’ অলরাউন্ডারের প্রতিচ্ছবি। ইমরুল কায়েসের চোখে অবশ্য আফিফের একটি ছবি এখনই দারুণ উজ্জ্বল। তরুণ এই ক্রিকেটারকেই বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ফিল্ডার মনে করেন ইমরুল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2020, 11:46 AM
Updated : 15 July 2020, 11:01 AM

ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। দেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের ভাবনায় সেরাদের কথা। তিনটি ক্যাটেগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের একাদশ পর্বে ইমরুল জানালেন তার ভাবনা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ হতে চলেছে ইমরুলের। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন আরও আগে থেকে। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে কাছ থেকে দেখেছেন অনেককেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জানালেন তার চোখে সেরা ফিল্ডারদের কথা।

স্লিপে:

“স্লিপে সেরা নিঃসন্দেহে জুনায়েদ সিদ্দিক। ওর সঙ্গে স্লিপে অনেক ম্যাচে দাঁড়িয়েছি আমি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও দেখেছি অনেক। আমাদের দেশে ওর মতো স্লিপ ফিল্ডার আর দেখিনি।”

“জুনায়েদকে বেছে নেওয়ার প্রথম কারণ, স্লিপে খুব কম ক্যাচ পড়েছে ওর হাত থেকে। ওর ‘রিচ’ অনেক বড়, অনেক দূর পৌঁছাতে পারে। বল ফিঙ্গারিং ক্যাপাসিটি খুব ভালো, গ্রিপ দারুণ। শুধু জাতীয় দলে নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও সবসময় স্লিপে সেরা জুনায়েদ।”

“ফরহাদ হোসেনও বেশ ভালো স্লিপ ফিল্ডার। তবে ফরহাদকে তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখিনি। তাই জুনায়েদই সেরা।”

৩০ গজ বৃত্তে:

“বৃত্তের ভেতরে আমি দুজনের কথা বলব, নাসির হোসেন ও আফিফ হোসেন।”

“নাসিরের কথা বলতে অবশ্যই ইনজুরির আগের নাসিরকে বোঝাচ্ছি। জাতীয় দলে আসার পর কয়েক বছর অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে। খুব গতিময় ছিল তখন, থ্রোয়িং আর্ম ভালো ছিল। ক্যাচিং তো ভালো ছিলই, মনে হতো না নাসির কখনও ক্যাচ ছাড়তে পারে। এছাড়াও মাঠে ছুটোছুটি করত, খুব চনমনে ও প্রাণবন্ত থাকত।”

“নাসিরের আরেকটা বড় গুণ ছিল, অনেক রিল্যাক্সড থাকত। ভালো ফিল্ডিংয়ের জন্য এটা জরুরি। খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল।”

“নাসিরের ওই সবকিছু এখন আফিফের মধ্যে দেখতে পাই। আফিফের গতি এমনকি নাসির চেয়ে বেশি। ওর রিফ্লেক্স, ডাইভিং, অ্যান্টিসিপেশন, সব দারুণ।”

“সাকিব আল হাসানও একসম খুব ভালো ছিল বৃত্তে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে ২৬-২৭ বছর বয়স পর্যন্ত খুব দুর্দান্ত ফিল্ডার ছিল। পরে বয়সের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই একটু ম্লান হয়ে গেছে।”

“সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকারও ভালো বৃত্তের ভেতর। তবে এগিয়ে রাখব যৌথভাবে নাসির ও আফিফকেই।”

সীমানায়:

“বাউন্ডারিতে আমার সবচেয়ে ভালো মনে হয় সৌম্যকে। এমনিতে স্লিপ থেকে শুরু করে সব জায়গায় ফিল্ডিং করতে পারে সৌম্য। তবে বাউন্ডারিতে বেশি ভালো। উচ্চতা কাজে লাগায় ভালোভাবে, ক্যাচিং খুব ভালো। থ্রোয়িংও ভালো। অনেক মাঠ কাভার করতে পারে।”

“ক্যাচিং সামর্থ্যের দিক থেকে বাউন্ডারিতে রুবেল হোসেন খুব পিছিয়ে নেই সৌম্যর চেয়ে। খুবই নির্ভরযোগ্য ফিল্ডার, কম সময়ই ক্যাচ ছাড়ে সে। তবে থ্রোয়িং আর্মে জোর একটু কম।”

“বাউন্ডারিতে তামিম ইকবালও ভালো। দারুণ কিছু ক্যাচ নিয়েছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে সেরা বলব সৌম্যকে।”

সব মিলিয়ে সেরা:

“খুব বেশি ভাবতে হচ্ছে না আমাকে। সব মিলিয়ে আমার কাছে সেরা আফিফ। জানি, অনেকেই বলবেন যে সে এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যথেষ্ট খেলেনি। কিন্তু ঘরোয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের ক্রিকেটেই ওকে তিন-চার বছর ধরে দেখছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও যতটুকু খেলেছে, আমার মনে হয়, বিচার করার জন্য যথেষ্ট। আমি ওকেই সেরা বলব।”

“ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আমি সবার আগে দেখি গতি। বলের কাছে কে কতটা দ্রুত যেতে পারে। গতির দিক থেকে আফিফের ধারেকোছে কেউ নেই বাংলাদেশে। এরপর বল পিক আপ, গ্রিপিং, দ্রুত বল রিলিজ করা, থ্রোয়িংয়ে জোর, নিশানা, আফিফের সব আছে। ক্যাচিং নিয়ে তো কথাই নেই। ন্যাচারাল অ্যাথলেটও সে।”

“ভালো ফিল্ডার অনেক আছে। কিন্তু সবারই দেখা যায় যে কোনো একটি জায়গায় একটু ঘাটতি আছে বা কোথাও কমজোর। আফিফের মধ্যে আমি কোনো দুর্বলতা দেখি না, সবকিছুই আছে ওর। এটা যদি আফিফ ধরে রাখতে না পারে, আমি বলব ওরই ব্যর্থতা হবে সেটি।”