বাংলাদেশের বাস্তবতায় ব্যাটিং-বোলিংয়ের সেরা নিয়ে আলোচনা যত হয়, ফিল্ডিং আড়ালে পড়ে থাকে ততটাই। ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। দেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের ভাবনা। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের অষ্টম পর্বে শাহরিয়ার জানালেন তার ভাবনা।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে শাহরিয়ারের পদচারণা। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ১০০টি, বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরে খেলছেন ও অনুসরণ করে আসছেন একনিষ্ঠভাবে। নিজের দেখার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বললেন তার চোখে সেরা ফিল্ডারদের কথা।
স্লিপে:
“স্লিপে সেরা বাছাই করতে এক মুহূর্ত ভাবারও প্রয়োজন নেই। কোনো সংশয় ছাড়াই সেরা ফরহাদ হোসেন।”
“ফরহাদ সেরা, প্রথম কারণ সে ক্যাচিংয়ে সেরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে তো ঘরোয়া ক্রিকেটের খবর সেভাবে কেউ রাখে না বা দেখে না। এজন্য ফরহাদের কথা অনেকে জানেন না। স্লিপ ক্যাচিংয়ে তার ধারেকাছে কাউকে আমি দেখিনি বাংলাদেশে।”
“জুনায়েদও খুব ভালো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখা গেছে ওকে। তবে ফরহাদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে না খেললেও ওকে অনেক অনেক এগিয়ে রাখব আমি। আমাদের দেশে আমরা খুব ভালো স্লিপ ফিল্ডার পাই না, কারণ উইকেট বেশির ভাগই মন্থর ও নিচু বাউন্সের। স্লিপে বল যায়ই না। কিন্তু ফরহাদকে আমি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বমানের স্লিপ ফিল্ডার মনে করি।”
৩০ গজ বৃত্তে:
“বৃত্তের ভেতর বিভিন্ন সময় খুব ভালো ফিল্ডার পেয়েছি আমরা। প্রথমেই আমার মনে পড়ছে নাদিফ চৌধুরির কথা। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে দেখছি। অসাধারণ ফিল্ডার ছিল। ক্যাচিং ভালো, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং দুর্দান্ত।”
“এছাড়াও নানা সময়ে খুব ভালো ফিল্ডার ছিল রাজিন সালেহ ভাই, অলক কাপালী, আফতাব আহমেদ। নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমানও ভালো। তবে ওদের দুজনকে আরেকটু বেশি দেখতে পারলে আরও ভালোভাবে বিচার করতে পারতাম। ক্যাচিং পজিশনগুলোতে মাশরাফি মুর্তজা খুব ভালো।”
“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত খেলেছেন যারা, তাদের মধ্যে বৃত্তের ভেতর সাকিব হয়তো সেরা। ওর ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে এত মাতামাতি হয় যে ফিল্ডিং আড়ালে চাপা পড়ে যায়। ওর ক্যাচিং, থ্রোয়িং, সব ভালো। সরাসরি স্টাম্পে হিট করে অনেক।”
“সাকিব ও নাদিফের মধ্যে একজনকে বাছাই করা কঠিন। সাকিবের দুর্বলতা খুব বেশি নেই। তবু একজনের কথা বললে আমি নাদিফকেই বেছে নেব। হয়তো আন্তর্জাতিক ম্যাচ বেশি খেলেনি (৩টি টি-টোয়েন্টি), তবে যদি চোখধাঁধানো ফিল্ডারের কথা ভাবা হয়, স্রেফ ফিল্ডিং দিয়েই যে দলে আসতে পারে, আমি মনে করি, নাদিফ তেমন একজন।”
সীমানায়:
“বাউন্ডারিতে তামিম ইকবালের ক্যাচিং খুব ভালো। গুরুত্বপূর্ণ দু-একটি ম্যাচে তার হাত থেকে ক্যাচ ফসকেসে বটে। তবে সেটা হতেই পারে। ওর ক্যাচিংয়ের হাত এমনিতে খুব ভালো।”
“বাউন্ডারিতে গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে নাজমুল ইসলাম অপু দারুণ। অনেক গ্রাউন্ড কাভার করে। বল ওকে ফাঁকি দিতে পারে কমই। অনেক সময় এমনও দেখেছি, অপু দৌড়ে বলের আগে চলে গেছে, বল ওর পেছনে! সাব্বির রহমানও বেশ গ্রাউন্ড কাভার করতে পারে। বাউন্ডারি থেকে থ্রোয়িংয়ে রাজ ভাই (আব্দুর রাজ্জাক) দারুণ।”
সব মিলিয়ে সেরা:
“এটা কঠিন, খুবই কঠিন। আমি এমনকি ব্যাটিং-বোলিংয়েও সেরা বাছাইয়ের খুব আগ্রহী নই কখনও। কারণ একেক সময় আর একেক পজিশন ও অবস্থায় একেকজন ভালো। ফিল্ডিংয়ে কাজটা আরও বেশি কঠিন। সব পজিশনে সবাই একরকম নয়। নানা পজিশনে একেকজনের দক্ষতা একেকরকম।”
“তারপরও যদি সেরা বাছাই করতেই হয়, স্রেফ বেছে নেওয়ার খাতিরে আমি এগিয়ে রাখব সাকিবকে। যেটা আগেই বলেছি, তার ব্যাটিং-বোলিংয়ের তুলনায় ফিল্ডিংয়ের মূল্যায়ন কমই হয়। কিন্তু সে সব পজিশনেই নিরাপদ ও ভালো। অলরাউন্ড ফিল্ডার হিসেবে সৌম্য সরকারও বেশ ভালো। তবে সাকিব একটু এগিয়ে।”