ধারাবাহিক আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডার। বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক ক্রিকেটাররা জানাচ্ছেন তাদের ভাবনা। তিনটি ক্যাটাগরিতে আলাদাভাবে সেরার পাশাপাশি বাছাই করা হচ্ছে সার্বিকভাবে সেরা। আয়োজনের সপ্তম পর্বে আকরাম বললেন তার পছন্দ নিয়ে।
নাঈমুর একসময়ের তুমুল সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়কও তিনি। কিন্তু নানা কারণেই পূর্ণতা পায়নি তার সম্ভাবনা। ফিল্ডিংয়ে তবু তাকেই সেরা মানছেন আকরাম। সাকিবের ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে চর্চা হয় নিত্যই। তার ফিল্ডিং আড়ালে পড়ে থাকে অনেক সময়ই। আকরাম ফিল্ডিংয়েও তাকে মানেন সেরা।
বাংলাদেশের আইসিসি ট্রফি জয়ী অধিনায়ক, পরবর্তীতে জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক, এখনকার বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন তার ভাবনা।
স্লিপে:
“তারপরও যাদেরকে দেখেছি, আমি ফারুক ভাইকে (ফারুক আহমেদ) সেরা বলতে চাই। মজার ব্যাপার হলো, তার মূল পজিশন ছিল গালি বা পয়েন্ট। কিন্তু স্লিপে যখন দাঁড়াতেন, খুব কমই দেখেছি ক্যাচ ছাড়তে। অনেক ক্যাচ নিয়েছেন। তার রিফ্লেক্স ভালো ছিল।”
“আমিও স্লিপে ফিল্ডিং করেছি বেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটে নান্নু ভাই (মিনহাজুল আবেদিন) যখন অধিনায়ক ছিলেন, আমাকেই স্লিপে পাঠাতেন। জাতীয় দলেও করেছি। তবে নিজের কথা বলতে চাই না।”
৩০ গজ বৃত্তে:
“অলক কাপালী শুরুর দিকে দুর্দান্ত ছিল বৃত্তের ভেতর। পরে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। এখানে আমি সবচেয়ে এগিয়ে রাখব দুর্জয়কে।”
“দুর্জয় খুব গতিময় ছিল। দ্রুত বলের কাছে চলে যেত। অ্যান্টিসিপেশন ভালো ছিল। অ্যাকুরেসিও দারুণ ছিল। চারপাশে ঝাঁপাত। ক্যাচিংও ভালো ছিল।”
“আসলে দুর্জয়দের প্রজন্ম থেকেই আমাদের ফিল্ডিং ভালো হতে শুরু করে। তার আগে পর্যন্ত সেভাবে পাত্তা পেত না ফিল্ডিং। দুর্জয়দের সময় বিকেএসপি থেকে একঝাঁক ছেলে বেরিয়ে এলো, ওরা সবাই ফিল্ডিংয়ে ভালো ছিল। নাহিদ নামে একটা ছেলে ছিল, ঢাকা লিগে খেলেছে। সেও অসাধারণ ফিল্ডিং করত।”
সীমানায়:
“শান্তও (হাসিবুল হোসেন) খুব ভালো ছিল। অনেকেই ভুলে গেছে ওর কথা। মাশরাফির মতো চটপটে ও প্রাণবন্ত ছিল, খুব অ্যাথলেটিক ছিল। জহুর এলাহি ব্যাট দিয়ে ওর পায়ে মারার পর থেকে ওর পারফরম্যান্স পড়তির দিকে যেতে শুরু করে।”
“বাউন্ডারিতে সেরা বলব সৌম্য সরকারকে। ওর পিক আপ খুব পরিষ্কার। অনেক গ্রাউন্ড কাভার করে। ফিল্ডিংয়ে সেন্স একটা বড় ব্যাপার। সৌম্যর সেন্স ভালো। থ্রো ভালো। আর খুব আত্মবিশ্বাসী।”
সব মিলিয়ে সেরা:
“সবার আগে বলব দুর্জয়ের কথাই। বৃত্তের ভেতরে ও কতটা ভালো ছিল, আগেই বলেছি। বাউন্ডারিতেও খুব ভালো ছিল। সব পজিশনেই খুব নিরাপদ ফিল্ডার ছিল। তবে ইনজুরির আগ পর্যন্ত। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার পর ফিল্ডিংয়ে আগের ধার ছিল না। তবে আগের দুর্জয়ই আমার কাছে সেরা।”
“সেরা যখন বলছি, আমি কিন্তু তখনকার বাস্তবতা, প্রেক্ষাপট, সব বিবেচনায় রেখেই বলছি। এক যুগের সঙ্গে আগের যুগের তুলনা করা কঠিন। সব মাথায় রেখেছি বলছি। যেমন, তখন মাঠের অবস্থা ছিল খুব বাজে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ৬ মাস ফুটবল হতো, সেখানেই আমরা পরে ক্রিকেট খেলতাম। আউটফিল্ড খুব বাজে থাকত। ডাইভ দেওয়া, অ্যান্টিসিপেট করা খুব কঠিন ছিল। দুর্জয় সেসবের মধ্যেও সবকিছু দারুণভাবে করত। এখনকার মতো মাঠ পেলে, এত ভালো ফিটনেস ও ট্রেনিং পেলে, তখন আরও ভালো করত বা এখনকার যুগে হলেও সেরা হতো।”
“দুর্জয়ের সঙ্গে আমি সাকিবকেও সেরা হিসেবে রাখব। এখন সে বৃত্তের ভেতরে বেশি ফিল্ডিং করে। খুবই ভালো ফিল্ডিং করে। সবচেয়ে বেশি স্টাস্পে হিট করে। আগে বাউন্ডারিতেও খুব ভালো ছিল। এখনও যখন বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করে, সে খুবই নিরাপদ। পাশাপাশি স্লিপে যখন ফিল্ডিং করেছে, ভালো করেছে। সোহাগ গাজী নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ম্যাচে (২০১৩ সালে) হ্যাটট্রিক করল, হ্যাটট্রিক উইকেটে সাকিব অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছিল স্লিপে।”
“ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও অনেক ভালো ফিল্ডার আমরা দেখেছি। অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। সবাইকে তাই ঠিকভাবে বিচার করা কঠিন। সব কিছু মিলিয়ে দুর্জয় ও সাকিবকে যৌথভাবে সেরা রাখছি।”