৫-১০ বছরের নিষেধাজ্ঞা যেভাবে এড়িয়েছেন সাকিব

আইসিসি দুর্নীতি দমন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর নিজে বিস্তারিত সবকিছু জানিয়ে দেওয়ার কারণেই আরও বড় শাস্তি এড়ানো গেছে বলে মনে করেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের অলরাউন্ডার বলছেন, ৫-১০ বছরের নিষেধাজ্ঞাও পেতে পারতেন। নিজের ভুল থেকে বড় শিক্ষা পেয়েছেন বলেও জানালেন সাকিব।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2020, 06:53 AM
Updated : 24 June 2020, 01:37 PM

জুয়াড়ির কাছ থেকে তিন দফায় ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন করায় গত অক্টোবরে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পান সাকিব, যার মধ্যে এক বছরের শাস্তি স্থগিত। সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রমের বাইরে থাকতে হবে তাকে আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত।

সাকিবের মতো অভিজ্ঞ একজন, দুর্নীতি দমন ক্লাস যিনি অনেক করেছেন, তিনি কেন বারবার প্রস্তাব পেয়েও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাননি, এই প্রশ্ন সাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে উঠেছে অনেকবার। ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সাকিব বললেন, জুয়াড়ির সঙ্গে কথোপকথনকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দেননি। সেই ভুল বুঝতে পেরেছেন পরে।

“আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।”

“আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।”

তারকা ক্রিকেটার হিসেবে অসংখ্য মানুষের সংস্পর্শে তারা আসেন নানাভাবে। সাকিবের দাবি, সে কারণেই জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা তিনি ভুলে গিয়েছিল।

“দেখুন, আমরা হাজারও ফোনকল পাই, ম্যাসেজ পাই, কয়টা আর মনে থাকে! একটা উদাহরণ আমি দিতে পারি, ওই লোকটি যখন শেষবার ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল, আমি জবাব দিয়েছিলাম, ‘সরি, কার সঙ্গে কথা বলছি?’ তার মানে, আমার মনেও ছিল না, কার সঙ্গে কথা বলছি। তার সঙ্গে আগে কথা বলেছি ২-৩ বছর আগে। ওই সময় আমি জানতামও না লোকটা কে, তার নম্বরও আমার কাছে ছিল না।”

“যাহোক, তারা (আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগ) যখন তদন্ত করেছে, এসব তারা জানত এবং পরিস্থিতি বুঝেছে। তবে সত্যি বলতে, কারও উচিত নয় এসব হালকাভাবে নেওয়া। ওই ধরনের ম্যাসেজ বা কল কারও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বা ওভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত নিরাপদে থাকতে হলে। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি, বড় শিক্ষা এটি।”

সাকিব জানালেন, নিজের ওপর অতি আত্মবিশ্বাসও এক্ষেত্রে কাল হয়েছিল তার জন্য। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার তিনি কোনো সংশয় ছাড়াই। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারও। নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার আগে গত বছর বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন। সাকিবের দাবি, এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই অনেক কিছু পাত্তা দিতে চাননি তিনি।

“যেহেতু সবসময় বেশির ভাগ ব্যাপারই ঠিক করেছি, কখনও কখনও সেই বোধ পেয়ে বসতে পারে। মনে হতে পারে, ‘কী আর হবে…কিছুই হবে না। আমি তো ভুল কিছু করছি না..।’ কিন্তু কেতাবি হিসেবে তো ভুল হচ্ছে। হয়তো নৈতিকতার দিক থেকে ভুল হচ্ছে না, কিন্তু আইন বা নিয়মের দিক থেকে ভুল হচ্ছে। অনেক সময় এটি মনে থাকে না। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি…মাথায়ই আসেনি যে ভুল করতে পারি। পাত্তা দিতে চাইনি। সেই ভুলই আমি করেছি।”