ভয় না থাকলে বিশ্বকাপ জিততাম না: প্লাঙ্কেট

এক দশকের বেশি সময় ধরে ভয়ের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন লিয়াম প্লাঙ্কেট। এক সময়ে যা ছিল সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, এখন যেন সেটাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। ইংল্যান্ডের এই পেসার মনে করছেন, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল বলেই মেলে ধরতে পেরেছেন নিজেকে। জিততে পেরেছেন বিশ্বকাপ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2020, 08:19 PM
Updated : 19 June 2020, 08:19 PM

দা ব্রোকেন ট্রফি পডকাস্টে নিজের জীবনের এই দিক তুলে ধরেন প্লাঙ্কেট। জানান কতটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।

“ভয়, দুঃশ্চিন্তা, অন্তত ২০১০ সাল থেকে ভোগাচ্ছিল আমাকে। সত্যিই আমার মধ্যে অনেক বেশি উৎকণ্ঠা কাজ করত…খুব খারাপ অবস্থা ছিল যখন আমি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলাম এবং সেখানে ক্লাব ক্রিকেট খেলতাম। এমনও হয়েছে, টানা আট দিন বেডরুম থেকে বের হতে পারিনি। আমি কোনো একজনের সঙ্গে থাকতাম এবং এই সব ভয়, দুঃশ্চিন্তা সঙ্গী করেই থাকতাম।”

২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা ছিল প্লাঙ্কেটের। ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন উইকেট নেওয়া এই পেসারের ধারণা, তার সব ভয় আর উৎকণ্ঠা না থাকলে নাকি চূড়ায় উঠতে পারতেন না তিনি। শেরিয়ানা বয়েলের লেখা ‘দা ফোর গিফট অব এনজাইটি’ বইটিও তার ভীষণ কাজে দিয়েছে বলে জানান প্লাঙ্কেট।

“এখনও পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, দুঃশিন্তাগুলোই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার, যা আমি কিছুটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করেছি। মনে হয়, ওই ভয়টা না থাকলে আমি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে পারতাম না, বিশ্বকাপ জয়ে দলকে সাহায্য করতে পারতাম না, এমনকি বিশ্বকাপ দলেও থাকতাম না।”

“আমার জীবনে যে বিষয়গুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেদিকে এটাই আমাকে পরিচালিত করেছে। একা একজনের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমি উৎকণ্ঠায় ভুগতে পারি, কিন্তু এরপরই ৩০ হাজার মানুষের সামনে গিয়ে খেলতে পারি। তখন আমার কিছুই মনে হবে না। আর তাই, ভয় পাওয়া, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়া-এগুলো থাকায় আমি কৃতজ্ঞ।”

গত বিশ্বকাপে সাত ম্যাচে ৪.৮৫ ইকোনমিতে নেন ১১ উইকেট। মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট এনে দেওয়ার গুরু দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ঠিকঠাক পালন করা এই পেসার জানালেন, এখন কীভাবে সামাল দেন মনের ভীতি।

“বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও সচেতন। আমাকে কি বা কোন বিষয়গুলো উদ্বিগ্ন করে তোলে, আমি জানি। কীভাবে ভীতি আমার মনে চেপে বসেছে, এর কারণ কি, কীভাবে প্রস্তুত হতে পারি এবং এমনটা আবার হলে তখন কী করব-এসব বুঝতে আমার ১০ বছর লেগেছে।”

“যখনই আমি বুঝতে পারি যে কোনো কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি, ভয় জেঁকে বসতে যাচ্ছে, তখন অনুভূতিটাকে আমি নিজের অংশ হিসেবে দেখতে শুরু করি, এরপর ধীরে ধীরে সব ঠিক হতে শুরু করে। একটা বই পড়েছিলাম, দা ফোর গিফট অন এনজাইটি, এটা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।”

বিষয়টি নিয়ে এখন যেমন সহজেই কথা বলতে পারছেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে তা এতটা সহজ ছিল না বলে জানালেন প্লাঙ্কেট।

“মার্কাস ট্রেসকোথিকের ঘটনার আগে আমি ড্রেসিংরুমে এ নিয়ে কখনও কিছু শুনিনি। ব্যাপারটা তখন এমন ছিল, ‘এসব কি বলছো তুমি? সব ঠিক হয়ে যাবে।’ তবে আমার মনে হয়, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।”

“ভয় আর দুঃশ্চিন্তা একজন মানুষের কী হাল করতে পারে, সবাই জানে। আমরা দেখেছি, এতে মানুষের কি অবস্থা হয়। এটা একটা ভালো জায়গা যেখানে নিজেকে নিয়ে বিব্রত বা লজ্জিত না হয়ে কারো সঙ্গে কথা বলা যায়। এই বিষয়ে অবশ্যই কথা বলা উচিত।”

প্লাঙ্কেটের উপলব্ধি, অনেককেই জীবনের কোনো এক সময়ে এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই এ নিয়ে আন্তরিক আলোচনার বিকল্প দেখেন না তিনি।

“মানুষ রোগটাকে যতটা বিরল ভাবে, আসলে ততটা না। অনেকের মাঝেই দেখা যায়। যখন কারও এটা হয়, সে মনে করে সমস্যাটা তার একারই সামলাতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে কথা বললে দেখা যায় একজন বলছে, ‘আমার ক্ষেত্রে এটা কাজ করেছে।’ এরপর আরও বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এটা অনেকটা ক্রিকেটের মতো; যেখানে আপনি অনেক মানুষের থেকে অনেক কিছু শিখবেন। আমি হয়তো একটু ধ্যান করব, আরেকজন হয়তো চাপমুক্ত থাকার জন্য অন্য কিছু করবে।”