সেরা ফিল্ডার: হাবিবুলের চোখে সৌম্য-শান্ত

সেরা ব্যাটসম্যান বা সেরা বোলার নিয়ে বিতর্ক-আলোচনা হয় প্রায়ই। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে ফিল্ডিং গুরুত্ব পায় কম। বিশ্বমানের ফিল্ডার বাংলাদেশ পেয়েছেও খুব কম। ফিল্ডিংয়ে যারা মাতিয়েছেন বা রাঙাচ্ছেন এখনও, তাদের মধ্যে সেরা কে? বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আয়োজনে সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা জানাবেন তাদের পছন্দ। প্রথম পর্বে সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার শোনাচ্ছেন তার চোখে সেরা যারা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 11:42 AM
Updated : 15 July 2020, 11:09 AM

ফিল্ডিংয়ে সব পজিশনে নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠেন কম ক্রিকেটারই। একেক পজিশনে একেকজন একেকরকম। কেউ কেউ দক্ষতা দিয়েই কোনো পজিশন নিজের করে নেন। সেরার এই বিবেচনায় তাই থাকছে আলাদা তিনটি ক্যাটাগরি; স্লিপ, ৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে ও সীমানায়। সবশেষে থাকছে, সার্বিকভাবে যে সেরা।

নিজের পছন্দের তালিকায় হাবিবুল কোনো ক্যাটাগরিতেই একজনকে রাখতে পারেননি।

স্লিপ:

“স্লিপে বিশ্বমানের ফিল্ডার আমরা কখনোই পাইনি। এজন্যই বাছাই করা কঠিন। যে কোনো ক্ষেত্রেই সেরা বেছে নিতে গেলে এমনিতে অনেকের নাম ঝটপট করে মাথায় চলে আসে। কিন্তু স্লিপে সেরার ভাবনায় কারও নামই চট করে আসছে না। অস্ট্রেলিয়া বা অনেক দেশে স্লিপ ফিল্ডিং ঐতিহ্য ও গর্বের ব্যাপার। মার্ক টেইলর বা মার্ক ওয়াহর পর তার পজিশনে কে দাঁড়াবে, এসব নিয়ে তারা গবেষণা করে। গড়ে তোলে কাউকে। আমাদের সেই সংস্কৃতি নেই। আগ্রহও কম সবার।”

“তারপরও, মন্দের ভালো বেছে নেওয়া যায়। খুব অদ্ভূত শোনাতে পারে, প্রথমেই যার নাম মনে আসছে, সে স্লিপে দাঁড়িয়েছে খুব কমই। মাশরাফি বিন মুর্তজা! ওর হাত খুব ভালো ছিল, রিফ্লেক্স দুর্দান্ত, অ্যান্টিসিপেশনও ভালো। কিন্তু এমনিতেই ইনজুরি লেগে ছিল, আর সেই সময় পেসারদের স্লিপে দাঁড়ানোর রীতিই ছিল না। পরে তো জেমস অ্যান্ডারসন বা টিম সাউদি এই ধারাটা বদলে দিয়েছেন। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, মাশরাফি খুব ভালো স্লিপ ফিল্ডার হতে পারত।”

“যদি এখনকার দল বা সামনে তাকাই, সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্তর খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। সৌম্য তো স্লিপে ভালো করতে শুরু করেছে। আরও উন্নতি করতে হবে। শান্তও খুব ভালো হতে পারে। ভবিষ্যতে আশা করি, ওরা দুজন দীর্ঘদিন আমাদের প্রথম ও দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়াবে।”

“আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের দলে ধারাবাহিকভাবে সবচেয়ে বেশিবার স্লিপে দাঁড়িয়েছি সম্ভবত আমিই। তবে নিজেকে আমি বিবেচনার বাইরে রাখছি। স্লিপে যথেষ্ট ফিল্ডিং করেছেন, তাদের মধ্যে আমার দেখা সেরা ফারুক ভাই (ফারুক আহমেদ)।”

“আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়তো ফারুক ভাই খুব বেশি খেলতে পারেননি। তবে ঘরোয়া ও অন্যান্য ম্যাচে দেখেছি। অসাধারণ স্লিপ ফিল্ডার ছিলেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সফট হ্যান্ড। স্লিপ ফিল্ডারদের হাত এতটা সফট হতে হয় যে ক্যাচ নিলে পাশের ফিল্ডারও বুঝবে না। ফারুক ভাইয়ের হাত ছিল তেমন।”

“আকরাম ভাইও (আকরাম খান) স্লিপে ভালো ছিলেন। ক্যাচের জন্য নির্ভরযোগ্য ছিলেন। আমি এভাবে বলতে পারি যে, প্রথম স্লিপে দাঁড়াবেন ফারুক ভাই, দ্বিতীয় স্লিপে আকরাম ভাই।”

৩০ গজ বৃত্তের ভেতরঃ

“বৃত্তের ভেতর সবার আগে মনে পড়ছে অলক কাপালীর কথা। অসাধারণ ফিল্ডার ছিল। ডাইভিং, পিক আপ, সব ভালো ছিল। ওর দুর্বলতা ছিল থ্রো। খুব পাওয়ারফুল থ্রো করতে পারত না। সত্যি বলতে, অলক যদি কষ্ট করত, তাহলে জন্টি রোডসের মতো ফিল্ডার হতে পারত। জানি না, কেন সে অতটা পরিশ্রম করেনি।”

“জাভেদ ওমর বেলিম খুব গতিময় ছিল। দ্রুত বলের কাছে যেত। আফতাব আহমেদও ভালো ছিল বৃত্তের ভেতর, তবে বরাবরই ছিল একটু অলস। সাকিব আল হাসান সবসময়ই নিরাপদ। চারপাশে কাভার করবে, বল যাবে না ওর কাছ দিয়ে। নাসির হোসেনও বেশ ভালো ছিল।”

“তবে বৃত্তের ভেতর সেরা বলতে গেলে আসলে ভাবতে হবে মাল্টি স্কিলড কারও কথা। বৃত্তে জন্টি রোডস, রিকি পন্টিং বা হার্শেল গিবসের মতো ফিল্ডার তো আমরা কখনোই পাইনি। যাদের পেয়েছি, আমার চোখে সেরা দুজন, রাজিন সালেহ ও মাশরাফি।”

“রাজিন খুব প্রাণবন্ত ছিল। প্রচুর ছুটোছুটি করত, ঝাঁপাত। ক্লোজ ইন ফিল্ডিংয়ে যেমন দুর্দান্ত ছিল, তেমনি সব জায়গাতেই। থ্রোয়িংও ছিল ভালো। থ্রোয়িংয়ে বৃত্তের ভেতর থেকে বললে, মাশরাফি আমার মতে বাংলাদেশের সেরা। নিখুঁত নিশানা ওর। আমার ধারণা, সরাসরি থ্রো ১০টার মধ্যে ৬টাই লাগাতে পারবে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় যা অনেক। খুব কুইক ছিল, ডাইভিংও দারুণ। থ্রোয়ে জোর ছিল প্রচণ্ড। তার থ্রো ব্যাক আপ করতে গেলে আমাদের ভয় লাগত। ক্যাচিং তো ভালো ছিলই। গালিতে অসাধারণ সব ক্যাচ আছে ওর। আমি বলছি ২০০৯-১০ সালের আগের মাশরাফির কথা। পরে তো বড় বড় ইনজুরিতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু সীমাবদ্ধতা এসেছে ওর।”

“আরেকজন সেরা হতে পারে। আফিফ হোসেন। অবিশ্বাস্য গতিময়, হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে গতির জন্যই আমরা ওকে ডাকতাম ‘এমবাপে।’ এত কুইক কোনো ফিল্ডার বাংলাদেশে আমি আর দেখিনি। ওর সামর্থ্য আছে দেশের সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার ও সত্যিকার অর্থেই বিশ্বমানের ফিল্ডার হওয়ার। তবে, আপাতত বৃত্তের ভেতর আমার সেরা রাজিন ও মাশরাফি।”

সীমানায়: 

“এখানে খুব বেশি ভাবতে হবে না। দুজনের কথা বলব আমি, সৌম্য ও শান্ত। দুজনই দ্রুত অনেক জায়গা কাভার করতে পারে। নার্ভ ভালো। ক্যাচ নেওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য। থ্রো ভালো, হাতে জোর আছে।”

সব মিলিয়ে সেরাঃ

“মাশরাফি ফিল্ডার হিসেবে খুব আন্ডাররেটেড। ওর বোলিং, পরে ক্যাপ্টেন্সির পারফরম্যান্সের কারণে ওর ফিল্ডিং আড়ালে থেকে গেছে। বিশেষ করে, ইনজুরির আগের মাশরাফি আমাদের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডারদের একজন।”

“তবে সব মিলিয়ে সেরা বলব আমি সৌম্য ও শান্তকে। দুজনই দুর্দান্ত অলরাউন্ড ফিল্ডার। যে কোনো পজিশনে ফিল্ডিং করতে পারে। ক্যাচিং, থ্রোয়িং, ডাইভিং, রিফ্লেক্স, অ্যান্টিসিপেশন, নার্ভ, সব ভালো। শান্তকে নিয়ে বলতে পারেন যে, এখনও সেভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেনি। তবে গত ২-৩ বছরে আমি তাকে হাই পারফরম্যান্স, একাডেমি, ‘এ’ দলে অনেক দেখেছি। আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা দুই ফিল্ডার সৌম্য ও শান্ত।”