কোয়াবের সভাতেও থমকে গেল ক্রিকেট ফেরানোর সম্ভাবনা

বিকেএসপিতে এখন ছুটি, দলগুলিকে সেখানে রেখে প্রিমিয়ার লিগ শুরু করা সম্ভব? কিংবা কক্সবাজার, বগুড়া বা রাজশাহীর মতো শহরে! ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভায় আলোচনা হলো সম্ভাব্য অনেক বিকল্প নিয়ে। কিন্তু সব আলোচনা থমকে গেল কঠিন বাস্তবতায়। আপাতত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত এসেছে সভা থেকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2020, 01:06 PM
Updated : 15 June 2020, 01:06 PM

জাতীয় দল ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেশ কজনকে নিয়ে রোববার রাতে কোয়াবের এই সভা হয়েছে অনলাইনে। জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফর, অনুশীলন শুরু, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে সভায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কোয়াব জানিয়েছে, জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফরের ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড স্বাস্থ্যবিধি ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। সূচি অনুযায়ী আগামী মাসে হওয়ার কথা এই সফর।

জাতীয় ক্রিকেটাররা গত কিছুদিনে নানা মাধ্যমে যেসব বার্তা দিয়ে এসেছেন শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে, এই সভাতেও তারা সেসব তুলে ধরেন বলে জানা গেছে। যদিও শ্রীলঙ্কার করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বেশ নিয়ন্ত্রিত এখন এবং সেখানকার ক্রিকেটাররাও অনুশীলনে ফিরেছেন, তারপরও সফরে যাওয়া নিয়ে ঝুঁকির অনেক জায়গা দেখছেন ক্রিকেটাররা। সবরকম সতর্কতা নেওয়ার পরও যদি দলের কেউ আক্রান্ত হয় কিংবা সফরে যাওয়ার পর দেশে কারও পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়, তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন থাকবে, এরকম কিছু বাস্তবতা কিছুদিন আগে বিসিবির প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে আলোচনায় বলেছেন ক্রিকেটাররা।

কয়েকদিন আগে ভারত তাদের শ্রীলঙ্কা সফর বাতিল করেছে। এমনকি অগাস্টের জিম্বাবুয়ে সফরও বাতিল করেছে তারা। তাতে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি জোরালো হয়েছে আরও।

কোয়াবের সভায় প্রিমিয়ার লিগ শুরুর সম্ভাব্যতা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বেশি। দেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের রুটি-রুজির মূল উৎস এই লিগ শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেলে চরম দুর্দশায় পড়বেন ক্রিকেটারদের অনেকেই। এজন্যই খোঁজা হয়েছে অনেক পথ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাধান মেলেনি।

সভায় থাকা সিনিয়র ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, বাস্তবতা অনুধাবন করেই আপাতত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

“প্রিমিয়ার লিগ না হলে দেশের অনেক ক্রিকেটারের জন্যই খুব খারাপ হবে। অবশ্যই আমরা চাই খেলতে। তবে এই অবস্থায় কিছু করারও নেই। লিগ শুরু করা মানে এত এত ক্রিকেটার, দলগুলির কর্মকর্তা, ম্যাচ অফিসিয়াল, স্কোরার, গ্রাউন্ডসম্যান, সবাইকে নিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ। লিগ চলার পুরো সময় কি সবাইকে এক জায়গায় আটকে রাখা সম্ভব? কেউ আক্রান্ত হলে বাকিদের কী হবে? এসব আলোচনা হয়েছে।”

“যেসব দেশে খেলা শুরু হয়েছে, তাদের বাস্তবতা আর আমাদের অবস্থা এক নয়। তারা যেভাবে পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, সেটা একটা ব্যাপার তো বটেই। পাশাপাশি, তাদের আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখী, আমাদের সেখানে গ্রাফ এখনও ওপরের দিকে। ঢাকার ও দেশের অনেক এলাকাকে মাত্রই রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় আসলে খেলা শুরুর উপায় নেই, এটা সবাই বুঝতে পারছি।”

আরেকটি প্রসঙ্গ সভায় বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। প্রিমিয়ার লিগ পেছাতে পেছাতে যদি ঘরোয়া ক্রিকেটের নতুন মৌসুমে চলে যায়, তবু যেন সেটা আগের মৌসুমের লিগ হিসেবেই ধরা হয়, বলছেন রাজ্জাক।

“এই ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কথা বলেছি। দুই মৌসুমের লিগ যেন একসঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া না হয়। আমাদের চাওয়া, যখনই খেলা শুরুর অবস্থা হয়, তখন যেন প্রিমিয়ার লিগ দিয়েই শুরু হয় এবং কোনো মৌসুম যেন হারিয়ে না যায়। এই মৌসুমের লিগ শেষ করে কয়েক মাস পর নতুন মৌসুমের লিগ করা যেতে পারে।”

সম্প্রতি কোয়াবের খুলনা জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। এই কিপার-ব্যাটসম্যান বললেন, প্রয়োজনে ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিকে কিছুটা ছাড় দেবেন, তবু যেন দুই মৌসুমের লিগ এক করে দেওয়া না হয়।

“আমরা কথা বলেছি যেন প্রিমিয়ার লিগকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং যখনই সময় হবে, এটি দিয়েই যেন শুরু করা হয়। লিগ শুরু হতে হতে নতুন মৌসুম চলে এলেও আশা করি ক্রিকেটারদের ব্যাপারটি দেখা হবে। প্রয়োজনে আমরা পারিশ্রমিকে ছাড় দেব বা ক্লাবের সঙ্গ কথা বলে অ্যাডজাস্ট করে নেব, তবু যেন একটি মৌসুমের লিগ হারিয়ে না যায়।”

খেলা শুরুর সম্ভাব্য একটি সময়ের দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন সোহান।

“এই অবস্থায় আসলে কুরবানীর ঈদের আগে খেলা শুরুর সম্ভাবনা খুব একটা দেখছি না আমি। ঈদের পর অগাস্টের কোনো একটা সময় খেলা শুরুর আশা করছি।”

তবে যথারীতি সবকিছুই নির্ভর করছে সময় ও পরিস্থিতির ওপর। আপাতত কোয়াবের সিদ্ধান্ত, দুই সপ্তাহ পর আবার সভায় বসে ঠিক করা হবে পরবর্তী করণীয়।

কোয়াবের সভাপতি ও বিসিবি পরিচালক নাঈমুর রহমানের পাশাপাশি সভায় আরও ছিলেন কোয়াবের সহ-সভাপতি ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল, সবশেষ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক, সবশেষ টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, সিনিয়র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস, জহুরুল ইসলাম, তুষার ইমরান, এনামুল হক জুনিয়র, শাহরিয়ার নাফীস, মোসাদ্দেক হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈম শেখ।