‘ক্রিকেটে প্রবলভাবে আছে বর্ণবাদ’

যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে অবাক হননি ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার মাইকেল কারবেরি। তার মতে, বিশ্বজুড়ে এসব নিত্যদিনের ঘটনা। দেশের হয়ে ১৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটারের অভিযোগ, ক্রিকেটও প্রবলভাবে ডুবে আছে বর্ণবাদে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2020, 08:57 AM
Updated : 11 June 2020, 09:10 AM

ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর বিশ্বজুড়ে বর্ণবাদ বিরোধী যে আন্দোলন চলছে, সেটির প্রেক্ষিতেই মুখ খুলেছেন কারবেরি। ৩৯ বছর বয়সী সাবেক ক্রিকেটার তার ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন ‘ক্রিকেট ব্যাজার পডকাস্ট’’-এ।

“আমাকে অনেকবার পুলিশ আটকেছে, স্রেফ আমি কালো বলে। মিনিয়াপোলিসে যা দেখেছেন, সেটি নিত্যদিনের ব্যাপার। কেবল ওই মাসেই সম্ভবত জর্জ ফ্লয়েডের মতো আরও ৫০ থেকে ১০০টি ঘটনা ছিল। এই ঘটনা এত আলোড়ন তুলেছে, কারণ কোনো একজন এটি ভিডিও করেছে। আরও অসংখ্য ঘটনা আড়ালে থেকে যায়।”

“এই যে স্লোগান, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’…আমাদের জীবন আসলে কখনোই ‘ম্যাটার’ করেনি। এজন্যই এখনও বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলতে হয়। কিছুই বদলায়নি। এটা স্রেফ কালো মানুষদের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনাগুলিরই একটি।”

ফ্লয়েডের ঘটনার প্রেক্ষিতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল অভিযোগ করেছিলেন, ক্রিকেটেও বর্ণবাদ আছে। আরেক ক্যারিবিয়ান ড্যারেন স্যামি তো বর্ণবাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগই করেছেন। একই ধরনের কথা শোনা গেল কারবেরির কণ্ঠেও।

“ক্রিকেটে বর্ণবাদ প্রবলভাবে আছে। ক্রিকেটে যে ব্যাপারটি আছে, খেলাটা যারা চালায়, তারা কৃষ্ণাঙ্গদের পাত্তা দেয় না। ইংলিশ ক্রিকেটের কাঠামোয় কালো মানুষরা মোটেও গুরুত্ব পায় না।”

ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে প্রায় দেড় যুগ খেলেছেন কারবেরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন ২০৮টি। ইংলিশ ক্রিকেটে কৃষ্ণাঙ্গদের বাস্তবতা আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলেন তিনি।  

“এই মুহূর্তে যদি ইংলিশ ক্রিকেটে তাকান, গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত যারা নেন, সেখানে কি একজনও কৃষ্ণাঙ্গ আছেন? অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, অ্যাশলি জাইলসরা বড় দায়িত্বে আছেন। কোন কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার কবে ইংলিশ ক্রিকেটে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? একজনও নয়।”

“এরপর নিচের দিকে আসুন। ইংল্যান্ডের প্রধান কোচদের তালিকায় তাকান। কবে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রধান কোচ ছিল? কাউন্টি দলগুলিতে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক? হ্যাঁ, সত্যি ছিল, ৬ ম্যাচের জন্য (২০১৮ সালে লেস্টারশায়ারের অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ৬ ম্যাচ পরই বরখাস্ত করা হয়েছিল কারবেরিকে)। আমার বদলে যাকে আনা হয়েছিল, সে পুরো মৌসুম দায়িত্ব পালন করেছে ও সব ম্যাচ হেরেছে। কাউন্টি ক্রিকেটে কৃষ্ণাঙ্গ কোচ আছেন কজন? একজনও নয়। অথচ যোগ্য অনেকের কথাই আমি জানি। আমি যদি এখনকার তরুণ হতাম, অনুপ্রেরণার জন্য সামনে কৃষ্ণাঙ্গ কে আছে?”

ইংল্যান্ডের হয়ে ৬টি করে টেস্ট, ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন কারবেরি। ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে চট্টগ্রামে তার টেস্ট অভিষেক। দুই ইনিংসে ৩০ ও ৩৪ করার পর বাদ পড়ে যান। আবার সুযোগ মেলে ২০১৩-১৪ অ্যাশেজে। অস্ট্রেলিয়ায় সেই সফরে ৫ টেস্টেই খেলেছিলেন কারবেরি। ১০ ইনিংসের ৬টি ৩০ ছুঁয়েও ফিফটি পর্যন্ত যেতে পেরেছিলেন কেবল একবার। এরপর আর কখনও সুযোগ পাননি টেস্টে।

২০১৮ সালে লেস্টারশায়ারের নেতৃত্ব কেড়ে নেওয়ার পর ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সাময়িক বিরতি নেবেন তিনি। এরপর আর ফেরেননি। ওখানেই শেষ হয়ে যায় তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ১৪ হাজার রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিশ্বাস, গায়ের রঙ ভিন্ন হলে তার ক্যারিয়ারের চিত্র ভিন্ন হতো।

“আমার ক্যারিয়ার কেন শেষ হলো? আপনার কি মনে হয়? আমি খেলে যেতে পারতাম। কিন্তু আত্মসম্মান নিয়ে খুশি থাকা জরুরি। হয়তো আমি ৫০-১০০টি টেস্ট খেলতে পারতাম, লোকে বলে সেই যোগ্যতা আমার ছিল। কিন্তু আমার কাছে আত্মসম্মানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে।”

কারবেরির দাবি, অশ্বেতাঙ্গ অনেকেই বৈষম্য অনুভব করেন। তবে ঝামেলায় জড়াতে চান না বলে প্রকাশ করেন না সেসব।

“যদি মঈন আলি বা র‌্যাশকে (আদিল রশিদ) জিজ্ঞেস করেন এসব নিয়ে, স্বাভাবিকভাবেই ওরা এসব বলবে না, কারণ এখনও ওরা দলে আছে। আমাদের-ওদের মতো অনেককেই এই আপোস সবসময় করতে হয়।”