কোভিড-১৯: বড় আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা নেই বিসিবির

করোনাভাইরাসের ছোবলে নড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো প্রতাপশালী ক্রিকেট বোর্ডের আর্থিক ভিত। তবে এই ধাক্কায় টালমাটাল হওয়ার শঙ্কা খুব একটা নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বোর্ড পরিচালক ও অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলছেন, খুব বড় আর্থিক ক্ষতি হবে না বলেই তাদের বিশ্বাস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2020, 09:13 AM
Updated : 30 May 2020, 11:35 AM

বিসিবির ভরসার মূল কারণ দুটি; নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা ও লাভজনক কোনো সিরিজ বাদ না পড়া বা স্থগিত না হওয়া।
 
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশের পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্য সফর। সেখানে আর্থিক ক্ষতি আয়োজক বোর্ডগুলোর। বাংলাদেশের ঘরের মাঠে হওয়ার কথা ছিল জুনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ, যেটি পিছিয়ে গেছে। তবে তাতে আর্থিক ক্ষতি খুব বেশি হচ্ছে না, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন ইসমাইল হায়দার।
 
“সত্যি কথা বলতে, টেস্ট সিরিজ থেকে খুব বেশি আয় আমাদের হয় না। ভারতের বিপক্ষে সিরিজ সবসময়ই লাভজনক, এটা ক্রিকেট বিশ্বের সবার জন্যই। এর বাইরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান আর কখনও কখনও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ থেকে ভালো আয় হয় বটে, তবে মূলত ওয়ানডে-টি-টোয়েন্টি থেকে।”
 
“অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ না হওয়ায় আমাদের একদমই যে ক্ষতি হবে না, তা নয়। তবে সেটি উল্লেখযোগ্য কিছু নয়।”
 
অগাস্টে দেশের মাটিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ না হলেও তাই আর্থিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না।
 

আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা বিসিবির যেটুকু আছে, প্রায় সবটুকুই আইসিসির আর্থিক সহায়তার খাতকে ঘিরে। বিসিবির রাজস্বের প্রায় অর্ধেক আসে আইসিসির সহায়তা থেকে। আইসিসির আয়ের বড় উৎস বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হলে তাই বড় অঙ্কের একটা আয় থেকে বঞ্চিত হবে আইসিসি। স্বাভাবিকভাবেই সদস্য দেশগুলোতে সহায়তাও কমে যাবে তাদের।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ না হলে এবার এশিয়া কাপ হওয়ার সম্ভাবনাও কম। ইসমাইল হায়দার জানালেন, সম্ভাব্য ক্ষতির একটি চিত্র তারা অনুমান করে রেখেছেন।
“বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ না হলে ক্ষতি তো কিছু হবেই। এসব আসর থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার কথা আমাদের। আইসিসির সঙ্গে কথা হচ্ছে এগুলো নিয়ে। টুর্নামেন্ট যদি না হয়, তাহলে আমাদের ২০ থেকে ২৫ ভাগ আয় কমতে পারে। টুর্নামেন্ট পিছিয়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অবশ্যই আবার আয়োজন করা হবে। তবে আমি বলছি এই আর্থিক বছরের হিসাব। আর যদি টুর্নামেন্টগুলো সময়মতো হয়, তাহলে বিসিবির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।”
পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনা সামান্যই। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস সম্প্রতি বলেছেন, এই টুর্নামেন্ট আয়োজনকে ঘিরে বড় ঝুঁকি আছে।
বিসিবির তবু খুব বিচলিত না হওয়ার কারণ, নিজেদের মজবুত আর্থিক অবস্থান। আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও বিভিন্ন সময়ে নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশের এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিসিবি সভাপতি থাকার সময় ১১৫ কোটি টাকার ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ রেখে গিয়েছিলেন, নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রায় সাড়ে ৭ বছরে সেই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ কোটির টাকার মতো।
অর্থ কমিটির প্রধান ইসমাইল হায়দার টাকার অঙ্ক সরাসরি বললেন না, তবে বোর্ডের আর্থিক অবস্থার একটি ধারণা দিলেন।
“আর্থিক সক্ষমতার দিক থেকে আমরা বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম পাঁচটি বোর্ডের মধ্যে আছি। দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বোর্ডের চেয়ে আমাদের অবস্থা ভালো। রিজার্ভ আমাদের যা আছে, আগামী ২-৩ বছর এই অবস্থা চললেও খুব সমস্যা হবে না। আর এত লম্বা সময় নিশ্চয়ই অচলাবস্থা চলবে না।”
“আমরা বলছি না যে নিরাপদে আছি। ২০-২৫ ভাগ আয় কমলেও তো ক্ষতিই। তবে আমাদের সামর্থ্য আছে তা সামাল দেওয়ার ও ভবিষ্যতে পুষিয়ে নেওয়ার। আমাদের টিম স্পন্সর, মিডিয়া স্পন্সর, এসবের মেয়াদ শেষ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা উদ্যোগ নেব। সেখান থেকেও আয় হবে। বিপিএল করতে পারলে আয় হবে।”
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক ক্রিকেট বোর্ডেই কৃচ্ছ্রসাধন চলছে। কর্মীদের অনেকের চাকরি চলে গেছে, এমনকি প্রধান নির্বাহীর পারিশ্রমিকও কম দেওয়া হচ্ছে অনেক জায়গায়। তবে বিসিবিতে এমন কিছু হবে না, জোর দিয়েই বললেন ইসমাইল হায়দার।
“আমাদের মাননীয় বোর্ড সভাপতি (নাজমুল হাসান) স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, বোর্ডের কাউকে এই পরিস্থিতি স্পর্শ করবে না। গ্রাউন্ডসম্যান থেকে শুরু করে ওপরের পদ যদি বলেন, কারও কোনো ক্ষতি হবে না। শুধু নিজেদের চাকুরে যারা, তারাই নন, দায়িত্বের জায়গা থেকেই ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি আমরা।”
“নিজেদের কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে আমরা গত কিছুদিনে বাইরেও অনেক সহায়তা করেছি। ১৬০০ ক্রিকেটারকে আর্থিক সহায়তা করেছি, তৃতীয় বিভাগ থেকে শুরু করে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটার আছে যেখানে। ১৫ হাজার মানুষকে ত্রাণ দিয়েছি, যেখানে প্যাকেটে দুই সপ্তাহের খাবার আছে। ফেডারেশনগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য খেলার অসহায় ক্রীড়াবিদদের জন্য ৫০ লাখ টাকা সহায়তা করেছি আমরা। আরও করে যাচ্ছি ও করার পরিকল্পনা আছে। বিসিবির আর্থিক অবস্থান শক্ত বলেই এসব আমরা করতে পারছি।”