‘ভক্তরাও যেন জেন্টলম্যান হন’, মাশরাফি-তামিমদের অনুরোধ

কেউ মাশরাফিয়ান, কেউ সাকিবিয়ান, কেউবা মুশফিকিয়ান বা রিয়াদিয়ান। এমনকি মিরাজিয়ানও চোখে পড়ে। প্রিয় তারকার সঙ্গে নিজেদের পরিচয় মিশিয়ে দেন তারা। কিন্তু তাদের অনেককেই দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে। এক ক্রিকেটারের ভক্ত অন্য ক্রিকেটার বা তার ভক্তদের গালিগালাজ বা খাটো করায় মেতে ওঠেন প্রায়ই। এসব বন্ধ করতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করলেন জাতীয় দলের চার সিনিয়র ক্রিকেটার।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2020, 07:57 AM
Updated : 24 May 2020, 09:09 AM

তামিম ইকবালের নিয়মিত ফেইসবুক লাইভের শেষ পর্বে শনিবার রাতে অতিথি ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। সেখানেই চার সিনিয়র ক্রিকেটার আলোচনা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তুমুল আলোচিত এই বিষয়টি নিয়ে। ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত ক্রিকেটে সমর্থকদেরও ভদ্র হওয়ার আহবান জানালেন তারা।

পৌনে দুই ঘণ্টার আড্ডার শেষ দিকে এই প্রসঙ্গ তুললেন তামিম। সমর্থকদের অনুরোধ করলেন পরস্পরকে আক্রমণ না করতে।

“ এখন দেখা যায়, সবারই ফ্যান গ্রুপ আছে। যেমন, তামিমিয়ান, মুশিফিকিয়ান, মাশরাফিয়ান… এরকম গ্রুপ। সবার পছন্দের ক্রিকেটার থাকতেই পারে। কিন্তু ইদানিং দেখছি, এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে আক্রমণ করে। আমি এটাই অনুরোধ করব, এই আক্রমণ যেন না করে।

“ আমরা সবাই বাংলাদেশের জন্য খেলি, সবাই আমরা বন্ধু-ভাই। আপনারাও বন্ধু-ভাই হয়ে থাকবেন। তামিমের সাপোর্টার মুশফিককে গালি দেবে বা মুশফিকের সাপোর্টার আমাকে, এটা করবেন না। গ্রুপের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এসব দয়া করে করবেন না। আপনি মুশফিকিয়ান, তামিমিয়ান বা যে ইয়ান হন না কেন, আমরা সবাই বাংলাদেশের জন্য খেলি। আপনারাও নিজেদের বিভাজন করবেন না।”

তামিমের কথার সূত্র ধরেই মাশরাফি বললেন, ক্রিকেট খেলার যেমন আলাদা বিশেষত্ব আছে, দর্শকদেরও তেমন হওয়া উচিত।

“ এই জিনিসটা আমারও মাথায় ছিল। ধন্যবাদ তোকে প্রসঙ্গ তোলার জন্য। মূলত আমাদের ক্ষতি আমরাই করতে পারি, বাইরের মানুষ করবে না। আজকে যে আমাকে পছন্দ করছে, সে তোকে গালি দিচ্ছে বা অন্যদের… আল্টিমেটলি আমরা কাদের জন্য খেলি? আপনাদের জন্য খেলি, দেশের জন্য খেলি। গালি দিলে সবাইকে একসঙ্গে দেন। খেলা নিয়ে সমালোচনা হবেই। কিন্তু একজনকে সুনির্দিষ্ট করে গালি দেওয়া খারাপ।”

“এই যে সাকিবিয়ান, তামিমিয়ান, মাশরাফিয়ান… সব সমর্থকের পছন্দের ক্রিকেটার থাকতে পারে। কিন্তু আরেকজনকে ছোট করা খারাপ। অশ্রদ্ধা করা বা কাউকে টেনে নামানো খুবই দৃষ্টিকটু। আশা করব, ক্রিকেট জেন্টলম্যান’স গেম, বাইরের দেশে দর্শকদেরও দেখি জেন্টলম্যান। আমাদের দর্শকরা সবসময় সমর্থন দেয়। এখন এই ব্যাপারগুলোতে যদি খেয়াল রাখতে পারি, আমরাও মাথা উঁচু করে থাকতে পারব।”

মাহমুদউল্লাহর মতে, অন্যদের সম্মান করলে সেই সম্মানই ফেরত পাওয়া যায়।

“ আমার কাছে মনে হয়, কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে কখনও লাভ হয় না। কাঁদা নিজের গায়েই লাগে। আমরা সবাই বাংলাদেশ দলের জন্য খেলি। সবারই পছন্দের ক্রিকেটার থাকতে পারে, তাই বলে অন্যকে ছোট করতে হবে না। সবসময় মনে রাখা উচিত, ভালোর বিকল্প নেই। ভালো কিছু করলে ফলও ভালোই মিলবে। শ্রদ্ধা করলে শ্রদ্ধাই মিলবে।”

মুশফিকও সবাইকে অনুরোধ করলেন, এই ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখতে।

“ আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করি। সবসময় চেষ্টা করি। কখনও সফল হই, কখনও হই না। তার মানে এই নয় যে একজনের কারণে দল হেরে যায়। আমার মনে হয়, দর্শক-মিডিয়া, সবাই এটির অংশ। জিতলে একসঙ্গে জিতি, হারলেও একসঙ্গে হারি।

“ আমার ভক্ত হলে আমি কখনোই আশা করব না, সে অন্য কোনো ক্রিকেটারকে খারাপ বলবে। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আশা করি সবাই খেয়াল রাখবেন।”