কোহলিও আমাকে প্রচুর স্লেজিং করে: মুশফিক

মুশফিকুর রহিমের স্লেজিং যেমন উজ্জীবিত করে বিরাট কোহলিকে, তেমনি কোহলিদের স্লেজিংও দারুণ অনুপ্রেরণা জোগায় মুশফিককে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান জানালেন, কোহলি ও ভারতীয়রা মাঠে প্রচুর স্লেজিং করেন তাকে। এজন্যই ভারতের বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স তুলনামূলক ভালো!

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2020, 01:58 PM
Updated : 20 May 2020, 03:15 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভিডিও আড্ডায় মুশফিক জানান, কোহলি তাকে বরাবরই স্লেজিং করে আসছেন নানাভাবে।

কোহলি-মুশফিকের এই স্লেজিং নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত তামিম ইকবালের ফেইসবুক শো থেকে। গত সোমবার তামিমের অতিথি ছিলেন কোহলি। উইকেটকিপারদের স্লেজিং তাকে ভালো খেলতে প্রেরণা জোগায় জানিয়ে ভারতীয় অধিনায়ক সেদিন বলেছিলেন, “কখনও কখনও মুশফিকরাও এক্ষেত্রে সহায়তা করে। উইকেটের পেছন থেকে কিছু শোনায়, তাতে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠি।”

মুশফিক সাধারণত স্লেজিং খুব বেশি করেন না বলেই শোনা গেছে বরাবর। কোহলির মন্তব্যের পর তাই ঝড় ওঠে আগ্রহের। মুশফিক মেটালেন সেই কৌতূহল।

“স্পেশাল তেমন কিছু বলেনি। এটা তো নরম্যালই, বিরাট কোহলি যেটা বলেছে। এটা তো খেলার একটা ট্যাকটিকস। অনেক সময় সামনে কী আসতে পারে বা এটা ডট হলে বা বড় রান তাড়া করতে হলে বা টার্গেট সেট করতে হলে, ছোট ছোট কিছু জিনিস আছে যেগুলো রিমাইন্ডার…এগুলো যে কেউ যে কোনো সময় করতে পারে। এমনিতে ওকে এত স্লেজিং করার মতো এত বড় খেলোয়াড় এখনও হইনি।”

মুশফিক জানালেন, কোহলির মতো তিনিও স্লেজিং থেকে ভালো করার প্রেরণা খুঁজে নেন।

“আমিও এটি বলতে চাই, কোহলি আসার পর থেকে ভারতের বিপক্ষে যতগুলি ভালো ইনিংস খেলেছি, তার কৃতিত্বও তাকে দিতে চাই। আমি যখনই উইকেটে যাই, সে আমাকে অন্যরকমভাবে স্লেজিং করেছে। সবসময়ই করে আসছে। আমাকে স্পেশাল নাকি জানি না, হয়তো সবাইকেই করে। কারণ মাঠে অনেক আগ্রাসী থাকে সে, চায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে।”

“আমাকে যতবার স্লেজিং করেছে, যেটা ওর ক্ষেত্রে হয়েছে, সেটা আমার ক্ষেত্রেও একই। আমাকেও উজ্জীবিত করেছেন অনেক বেশি। এজন্যই আপনারা খেয়াল করবেন, আমার রেকর্ড অন্য দলগুলির চেয়ে ভারতের বিপক্ষে একটু হলেও তুলনামূলক ভালো।”

 

মুশফিকের দাবির পক্ষে স্বাক্ষ্য দিচ্ছে পরিসংখ্যানও। টেস্টে তার ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৩৬.৭৭, কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেটি ৫১.৮০। জিম্বাবুয়ে (৬০.৪২) ছাড়া আর কেবল ভারতের বিপক্ষেই তার গড় পঞ্চাশের বেশি। ভারতের মাটিতে টেস্ট গড় ৫৫.১৬।

টি-টোয়েন্টিতে তার ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ২০.০৩, কিন্তু ভারতের বিপক্ষে ৩২.৭১। ওয়ানডেতে অবশ্য ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে ভারতের বিপক্ষে গড় সামান্য কম।  

মাঠের স্লেজিংয়ে অনেক সময় চলে এসেছে মাঠের বাইরের ঘটনাও। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে যখন ফাইনালে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখন টিভি পর্দায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের উল্লাসের সঙ্গে নিজের সেলফি তুলে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন মুশফিক। সেটি নিয়ে তখন আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল অনেক। কয়েক মাস পর যখন হায়দরাবাদে টেস্ট খেলতে গেল বাংলাদেশ, মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কথার বান ছুটে গিয়েছিল মুশফিকের দিকে।

“বলেছে অনেক কথাই। ‘আউট হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়’ বা ‘বোলিং অনেক কঠিন’, এসব অনেক কথা। হায়দরাবাদ টেস্টের আগে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতার পর আমি একটা টুইট করেছিলাম। সেটি হয়তো তারা অন্যভাবে নিয়েছিল। যদিও আমি কাউকে মিন করে টুইট করিনি। তারা ভেবেছিল, ভারত হেরেছে বলে টুইট করেছি। আসলে তা নয়। বাংলাদেশের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ আমার প্রিয় দল, এজন্যই ওদের জয়ে টুইট করেছিলাম। এটা নিয়ে পরে ওদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, ওরা বুঝতে পেরেছে।”

“তো ওই ঘটনা নিয়ে ওরা অনেক কথা বলেছে (মাঠে) যে ‘ওকে বাউন্সার মারো’ বা ‘যত তাড়াতাড়ি পারো আউট করো’ এসব সবসময় বলেছে। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে এবং ভেতরে জেদ কাজ করে। অন্যভাবে উজ্জীবিত হই।”

মুশফিকের মতে, এত বেশি স্লেজিং করাতেই বরং তার জন্য ভালো হয়েছে।

“ওদের স্লেজিং বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাত যে কিছু একটা করতে হবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ফিফটি করেছিলাম যখন, ফতুল্লায় এশিয়া কাপে সেঞ্চুরি, তখনও অনেক কিছু বলেছে। ভারতে সম্প্রতি যে টেস্ট সিরিজ খেলেছি, হয়তো সেঞ্চুরি করতে পারিনি, তবে দুটি ফিফটি করেছি, ওখানেও অনেক কথা বলেছে। সব মিলিয়ে এটা আমার জন্য ভালো হয়েছে। আমার মনে হয়, এটা আমার খেলার সঙ্গে মানিয়ে যায়।”