শৈশবে মিরাজের প্রথম বোলিং নায়ক ছিলেন পাওয়ার। ব্যাটিংয়ে অবশ্য আগে থেকেই তার ভালো লাগত একজনকে। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং আর ম্যাচ জেতানো শটটি মনে গেঁথে গিয়েছিল তার। সেদিন থেকে এখনও মিরাজের প্রিয় ব্যাটসম্যান মুশফিক।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে যারা এখনকার নায়ক, বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে তাদের কাছেও অনেকে ছিলেন নায়ক। তাদের নিয়েই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ধারাবাহিক আয়োজন ‘নায়কদের নায়ক।’ এই পর্বে মিরাজ শোনাচ্ছেন তার নায়কদের কথা।
“২০০৭ বিশ্বকাপের সময় আমার বয়স ১০ বছরের মত। খুব বেশি কিছু মনে নেই। তবে ভারতকে হারানোর ম্যাচে মুশফিক ভাইয়ের খেলা মনে পড়ে খুব। বাচ্চা বাচ্চা চেহারার একজন মানুষ, বিশ্বকাপের মত জায়গায় এত ভালো খেলছেন! উইনিং শটটা খেলে তিনি দুদিকে হাত প্রসারিত করে ছুটে আসছিলেন, মনে গেঁথে গিয়েছিল একদম।”
“তারপর থেকে মুশফিক ভাই আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যাটসম্যান সবসময়ই। উনার সঙ্গে যখন দেখা হয়েছে, তখন বলেছি এই কথা। মজার ব্যাপার হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার যতটুকু ভালো ব্যাটিং হয়েছে, বেশির ভাগই উনার সঙ্গে। ভালো ভালো জুটি আছে উনার সঙ্গে। ভারতের বিপক্ষে হায়দরাবাদ টেস্টে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ভালো জুটি হয়েছে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেড়শ রানের জুটি হলো আমাদের। ওয়ানডেতেও হয়েছে ভালো জুটি।”
“গত বিপিএলে তো ওনার দলে থেকেই ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পেলাম। এখানেও ভালো জুটি গড়েছি আমরা দুজন। ওনার সঙ্গে ব্যাটিংয়ের একটা সুবিধা হলো, উনি প্রচুর কথা বলেন। আমাকে তা খুব সাহায্য করে। আরেকপাশ থেকে দেখে বলেন এভাবে খেলতে হবে, ওভাবে করতে হবে। অমুক বোলারকে সামলে খেলতে হবে, তমুককে আক্রমণ করতে হবে। এসব।”
“গত বিপিএলের একটি ম্যাচের কথা বলি, যেদিন মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে আমার ১৬৮ রানের জুটি হলো। আমি শুরুতে টাইমিং খুব বেশি ভালো করতে পারছিলাম না। ২০ বলে ২২ রানের মত ছিল। মুশফিক ভাই এসেই দারুণ খেলতে থাকলেন। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না তখনও। মুশফিক ভাই এক পর্যায়ে বললেন, ‘আরে পাগল, ভাবাভাবি বাদ দে, মাথা ক্লিয়ার কর। বল আসবে, মারবি। আর কিছু ভাবতে হবে না।’ এরপরই সৌম্যকে ছক্কা মারলাম, দক্ষিণ আফ্রিকার স্টিয়ান ফনজিলকে ২ ছক্কা মারলাম। ৩৩ বলে ফিফটি করে ফেললাম।”
“আমার মনে হয়, উনি আমার খেলা বোঝেন। বোলিংয়ের সময়ও উইকেটের পেছন থেকে দেখে নানা টিপস দেন। ছোটবেলার প্রিয় কেউ যখন এতটা সাহায্য করেন, এটা অনেক বড় সৌভাগ্য।”
‘পাওয়ারকে দেখে শক্তি’
“যখন খেলা শুরু করেছি মোটামুটি সিরিয়াসলি, বোলিং অ্যাকশন তখনও স্থায়ী ছিল না আমার। ছোটবেলায় যেটা হয়, অনেকরকম কিছু চেষ্টা করা হয়। আমি একেকদিন একেক অ্যাকশনে করতাম। কোনোটাই ভালো লাগত না। একদিন টিভিতে রমেশ পাওয়ারকে দেখলাম ভারতের খেলায়। উচ্চতা বেশি নয়, একটু মোটাসোটা। কিন্তু অ্যাকশনটা দারুণ। ছোট্ট একটু জাম্প, দেখতে খুব ভালো লাগত।”
“আমি পরদিন থেকেই ওই অ্যাকশন শুরু করলাম। চেষ্টা করে একদম হুবুহু পাওয়ারের মতোই অ্যাকশন করলাম। বেশ কিছুদিন ওরকমই ছিল অ্যাকশন। শুধু অ্যাকশনই নয়, পাওয়ারের ফ্লাইট ও টার্নও ভালো ছিল। আমিও ওই অ্যাকশনে শুরুর পর দেখলাম টার্ন করছে আগের চেয়ে বেশি।”
“পরে আস্তে আস্তে ওই অ্যাকশন বদলেছে। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কোচরা অনেক ঘষামাজা করেছেন অ্যাকশন। সময়ের সঙ্গে বদলেছে। কিন্তু জাম্প আর হাতের পজিশনে এখনও অনেকটা মিল আছে।”
‘এবং ক্লার্ক’
“একটু বড় হওয়ার পর, মাইকেল ক্লার্কের ব্যাটিং খুব ভালো লাগত। খুব স্টাইলিশ ছিলেন। তার মত করে ড্রাইভ খেলার চেষ্টা করতাম। বিশেষ করে, স্পিনে ডাউন দা উইকেট এসে এতো সুন্দর ড্রাইভ খেলতেন, মন ভরে যেত। পেসারদেরও ভালো খেলতেন। কিন্তু স্পিনে তার ব্যাটিং মনে হতো একটা শিল্প।”