নায়কদের নায়ক: সৌম্যর মুগ্ধতা সৌরভ-যুবরাজ থেকে সাকিব-তামিমে

তখন কেবল ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছে সৌম্য সরকারের। বড় ভাই পুষ্পেন সরকার বললেন, “তুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হবি আর ডানহাতি পেসার, সৌরভ গাঙ্গুলির মত।” সৌম্য টিভিতে চোখ রাখলেন। সৌরভের সুবাসে মোহিত হলেন দ্রুত। সহজাত বাঁহাতি না হয়েও শুরু করলেন বাঁহাতি ব্যাটিং। ক্রমে সৌম্য বেড়ে উঠলেন আর প্রসারিত হলো তার ভালো লাগার জগৎ। সেখানে জায়গা করে নিলেন সৌরভের দেশের যুবরাজ সিং থেকে শুরু করে নিজ দেশের সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2020, 09:55 AM
Updated : 10 May 2020, 09:55 AM

বাংলাদেশের ক্রিকেটে যারা এই সময়ের নায়ক, বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে তারাও অনুসরণ করতেন কাউকে। সেই নায়কদের নিয়েই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিয়মিত আয়োজন ‘নায়কদের নায়ক।’ এই পর্বে সৌম্য শোনাচ্ছেন তার চার নায়কের গল্প।

‘মুগ্ধতা টিভির পর্দা থেকে বিকেএসপির মাঠে’

“আমার জীবনের প্রথম ক্রিকেট নায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। ক্রিকেট ভালোভাবে বুঝে ওঠার আগেই সৌরভের ভক্ত হয়েছি। বড় ভাই ছিলেন সৌরভের বড় ভক্ত। একদিন আমাকে বললেন, ‘তুই সৌরভ গাঙ্গুলির মত বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হবি, আর ডানহাতে পেস বোলিং করবি।’ আমি ন্যাচারাল বাঁহাতি নই, ভাইয়ের কথা শুনেই শুরু করলাম। আমি সবই ডানহাতে করি, শুধু ব্যাটিংয়েই বাঁহাতি।”

“পরে ভাইয়ের সঙ্গে বসে টিভিতে সৌরভের খেলা দেখলাম। নিজেরও ভালো লেগে গেল। তখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ক্রেজ ছিল অনেক। সৌরভ ভালো করত, আমার ভালো লাগা আরও বাড়ল। বড় হতে হতে বুঝেছি, অফ সাইডে তার ড্রাইভগুলো অসাধারণ। দেখতে ভালো লাগত খুব। স্পিনারদের স্টেপ আউট করে ছক্কাগুলি তো দুর্দান্ত ছিল।”

“পরে অধিনায়ক হিসেবে ভালো করতে থাকলেন। তার সবকিছুই ভালো লাগত। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে কলকাতা সফরে গিয়ে প্রথমবার সৌরভকে সামনাসামনি দেখলাম। একদম সামনেই ছিল। ইচ্ছে করছিল কথা বলতে। কিন্তু কিছুই বলতে পারিনি। শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।”

“একটু বড় হওয়ার পর আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার ছিল যুবরাজ সিং। এসেই দারুণ খেলা শুরু করেছিল। সবচেয়ে ভালো লাগত তার আগ্রাসী ব্যাটিং। মাঠে নেমেই খেলার গতি বদলে দিত। কাউকে পাত্তা দিত না, একদম ভয়ডরহীন ব্যাটিং। আমারও ইচ্ছে হতো তার মত ভয়ডর ছাড়া খেলতে।”

“যুবরাজের টাইমিং ছিল স্পেশাল, ব্যাটের ছোঁয়া লাগা মাত্র বল যেন গুলির বেগে ছুটে যেত। দলের প্রতি তার নিবেদন ভালো লাগত। দারুণ টিম প্লেয়ার ছিল, সবসময় দলের কথা ভেবে খেলত। স্বার্থপর ব্যাটিং কখনও করেনি। তার বোলিং, দুর্দান্ত ফিল্ডিং, মাঠে তার হাঁটাচলা, স্টাইল, সব ভালো লাগত।”

“যুবরাজের সঙ্গে পরে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। বলেছি যে তাকে অনেক ভালো লাগে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবি সবসময়। তোর প্রতিভা আছে, শট খেলতে পারিস। যে কোনো সময় ম্যাচের মোড় বদলে দিতে পারিস। এই বিশ্বাসটা রাখবি। কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাস হারাবি না।”

“বিকেএসপিতে যখন গেলাম, তখন অপেক্ষা করতাম তামিম ভাইয়ের খেলা দেখার জন্য। লিগের খেলা থাকত বিকেএসপিতে। তামিম ভাইয়ের খেলা থাকলেই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতাম। তখন ‘ডাউন দা উইকেট’ গিয়ে খেলতেন অনেক, বোলারদের অবস্থা খারাপ করে দিতেন মেরে। অফসাইডে তার খেলা খুব ভালো লাগত।”

“বিকেএসপিতে থাকার সময় সাকিব ভাইয়ের প্রতিও ভালোলাগা বাড়তে থাকে। তার অনেক গল্প শুনতাম বিকেএসপিতে। একবার মনে আছে, আমরা ডাইনিংয়ে খাচ্ছিলাম। সাকিব ভাই এসেছিলেন কোনো কাজে। বিশাল ডাইনিং হলের সবাই তার দিকে তাকিয়ে তখন। সবার মধ্যমণি যেন। আমিও তাকিয়ে ছিলাম। পরে খেতে খেতে আমার মনে হচ্ছিল, আমারও ওরকম হতে হবে যেন সবাই তাকিয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে বড় তারকা হওয়ার স্বপ্ন জেগেছিল তাকে দেখেই।”

“এখন আমরা একসঙ্গে খেলি। কখনই তাদের দুজনকে বলা হয়নি যে তারা আমার ছোটবেলার নায়ক। শুধু খেলা নয়, তাদের সঙ্গে হাসি-মজা হয়, কত কিছুই হয়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সমীহ এখনও করি। নিজে অনুভব করি তারা কত বড় তারকা। আমার কাছে তারা এখনও নায়ক।”