আমার মত ভুল যেন কেউ না করে: তাসকিন

অভিষেকেই চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্স। রাতারাতি তারকা। অর্থ-খ্যাতি-সাফল্য, সব লুটিয়ে পড়েছিল পায়ে। সেই যশ মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল তাসকিন আহমেদের। নিজেই বলছেন, শৃঙ্খলা হারিয়ে ছিটকে পড়েছিলেন পথ থেকে। এখন আবার চেষ্টা করছেন ক্যারিয়ার গোছানোর। নিজের ভুল থেকে পাওয়া শিক্ষা থেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন উঠতি ক্রিকেটারদের, এমন ভুল যেন আর কেউ না করে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2020, 07:15 AM
Updated : 9 May 2020, 08:46 AM

২০১৪ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তাসকিনের। প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। গতিময় ও আগ্রাসী বোলিং দিয়ে খুব দ্রুতই হয়ে ওঠেন সীমিত ওভারে বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০১৫ বিশ্বকাপে তিনিই ছিলে দলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে।

টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাকশনের কারণে বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই তার নিচের দিকে যাওয়া শুরু। অ্যাকশন শুধরে মাঠে ফিরেছেন। কিন্তু আগের তাসকিনকে ফিরে পাওয়া গেছে কম সময়ই। পিছু লেগে থাকা চোট, মাঠের বাইরের নানা সমস্যা মিলিয়ে হারিয়েছেন ধার ও গতি। গত কয়েক বছরে দলে থাকার চেয়ে দলের বাইরেই সময় কেটেছে বেশি।

সব মিলিয়ে ২৫ বছর বয়সেই খ্যাতির চূড়া থেকে হতাশার তলানি, সব দেখা হয়ে গেছে তাসকিনের। রুবেল হোসেন ও তাসকিনের সঙ্গে ফেইসবুক আড্ডায় শুক্রবার রাতে তামিম ইকবাল তুললেন সেই প্রসঙ্গ। তাসকিন শোনালেন তার জীবনের উত্থান-পতনের গল্প।

“ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বছরটি আমার খুবই ভালো গেছে। যেখানেই খেলেছি, ভালো খেলেছি। নিজের কাছে খুব ভালো লাগত। যেখানেই যেতাম, সবাই ছবি তুলত, ছেঁকে ধরত। এক বছর হতে না হতেই বিশ্বকাপ খেললাম। বিশ্বকাপের আগে অনেকগুলো এন্ডোর্সমেন্ট পেলাম, বিশ্বকাপ থেকে ফিরেও পেলাম। অন্যরকম একটা সময়। মনে হচ্ছিল, মাঠে নামলেই ভালো খেলব। মাথায়ই আসেনি যে খারাপ খেলতে পারি বা ইনজুরি হতে পারে।”

“প্রথম দুই বছর খুব সিরিয়াস ছিলাম। তৃতীয় বছর থেকে যখন মাথায় ঢুকে গেল যে, ‘ভালোই খেলছি, বল করলে উইকেট পাই, দলে জায়গা ফিক্সড’, তখন আস্তে আস্তে নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া কমিয়ে দিলাম। লাইফস্টাইল একটু বিশৃঙ্খল হয়েছে। পারফরম্যান্স খারাপ হতে শুরু করেছে। ইনজুরিও হয়েছে। দল থেকে বাদ পড়েছি।”

তাসকিন জানালেন, জীবনে কঠিন বাস্তবতা উপলব্ধি করে এখন তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন পথে ফেরার।

“ এই জিনিসগুলো কমানোর পর (নিজের যত্ন নেওয়া), আমার ইনজুরি হতে থাকল। দেখা গেল যে একটা সিরিজে বাদ, আরেকটায় আসি, আবার বাদ পড়ি। গত দুই বছরে দুইবার ওয়ানডে স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছি, টেস্টে চারবার, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি। পরিস্থিতির কারণেই পাইনি। আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে অবশ্যই। চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই তাসকিন প্রতিজ্ঞা করেছেন, ভুলের পথে আর পা না বাড়ানোর। পরামর্শ দিলেন পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্যও।

“ আমি যেটি বুঝতে পেরেছি, ভবিষ্যতে যারাই ক্যারিয়ারের শুরুতে তারকা হয়ে যাবে, এবং নিজের জন্যও বলি, আমার খেলোয়াড়ী জীবনে আর কখনও কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে আপোস করব না। জানি না পারফরম্যান্স কেমন হবে বা কালকে কেমন খেলব, কিন্তু যতদিন খেলব, ডিসিপ্লিনড থাকব ও পরিশ্রম করে যাব।”

“উঠতি তারকা যারা আছে, ওরা যেন এই ভুল কখনও না করে। ২-৩ বছর দারুণ পারফরম্যান্স করার পর সিরিয়াসনেস যেন আরও বাড়ে। পারলে নতুন অস্ত্র যোগ করতে হবে, ফিটনেস লেভেল বাড়াতে হবে। আমি বলব যে দ্রুতই শিক্ষা পেয়েছি। আশা করি, সিরিয়াস থাকব।”