তামিমের জন্য মাশরাফির নেতৃত্বের ক্লাস

একজন বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক, নেতৃত্বের গৌরবময় অধ্যায় শেষে মাত্রই ছেড়েছেন দায়িত্ব। আরেকজন তার উত্তরসূরি, দায়িত্ব পেয়েছেন পূর্বসূরির সাফল্যের ধারাকে আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার। এমন দুইজন যখন কথা বলছেন লম্বা সময়, নেতৃত্বের আলোচনা তো থাকবেই। মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের অনলাইন আড্ডায়ও অনেকটা সময় জুড়ে থাকল নেতৃত্ব। তামিমকে মাশরাফি পরামর্শ দিলেন, কোন পথে এগিয়ে চলা উচিত।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2020, 07:58 AM
Updated : 5 May 2020, 10:21 AM

আলাপচারিতায় মাশরাফিকে অধিনায়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তামিম। মাশরাফি বললেন, “এখন তো আমি আর ক্যাপ্টেন নই…।” তার কথা কেড়ে নিয়ে তামিম বলে উঠলেন, ‘আপনি যত যা-ই বলেন, আমার জন্য বাংলাদেশে সবসময় একটাই ক্যাপ্টেন, আপনি।”

ওয়ানডেতে এর আগেও অধিনায়কত্ব করেছেন তামিম। গত বিশ্বকাপের পরপর শ্রীলঙ্কা সফরে মাশরাফি চোটের কারণে না থাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তামিমকে। সেই অভিজ্ঞতা ভালো ছিল না তার নিজের ও দলের জন্য।

অতীতে বেশ কবারই তামিম নেতৃত্ব নিয়ে নিজের অনাগ্রহের কথা বলেছেন নানা সময়। তবে মাশরাফির বিশ্বাস, মন থেকে নেতৃত্ব মেনে নিলে, তার নেতৃত্বেই নতুন উচ্চতায় উঠবে বাংলাদেশ দল।

“তুই সামনে দেখবি, অনেক রান করবি। তোকে আমি সবসময় বলেছি যে কেন ক্যাপ্টেন্সি করবি না! তুই যখন বিপিএলে শুরু করলি (অধিনায়কত্ব), তুই বলতি যে তুই খুব ভালো সহ-অধিনায়ক। কিন্তু আমি বলব, তোর ভেতর নেতৃত্বগুণ আছে, সবকিছুই আছে তোর। কেন ক্যাপ্টেন্সি করবি না?”

“শ্রীলঙ্কায় তুই ভালোভাবে গ্রহণ করিসনি (নেতৃত্ব), এজন্য যা হবার হয়েছে। এখন তোর কথা, তোর কাজ, সবকিছু দেখে আমার মনে হচ্ছে, তোর হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট খুব শিগগির হয়তো পরের ধাপে যাবে।”

তামিম স্মরণ করলেন, তার ক্যারিয়ারের চরম দুঃসময়ে কীভাবে পাশ পেয়েছিলেন মাশরাফিকে। জানালেন, মাশরাফির কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষা তিনি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন।

“২০১৫ বিশ্বকাপের সময়, যখন আমার খুব দুঃসময়, একদিন আমার মন খুব খারাপ ছিল। ভালো পারফর্ম করতে পারছিলাম না। হোটেলে আপনাকে ধরে কান্না করে ফেলেছিলাম। সেসময় আপনি যেভাবে আমাকে সামলেছিলেন, আমি জীবনেও ভুলব না। অনেক কিছু শিখেছি আপনার কাছ থেকে, সবাইকে যেভাবে সামলেছেন।”

“আপনার সঙ্গে আমার অনেক দ্বিমত হয়েছে, অনেক তর্ক হয়েছে। কিন্তু দিনশেষে, আপনার কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি শিখেছি। আপনি আমার কাছে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। যা শিখেছি আপনার কাছ থেকে, চেষ্টা করব সব কাজে লাগাতে। অবশ্যই নিজের কিছু থাকবে। সব মিলিয়েই চেষ্টা করব।”

মাশরাফি তামিমকে বাতলে দিলেন নেতৃত্বে সফল হওয়ার বড় একটি টোটকা। আস্থা রাখতে বললেন নিজের ভাবনায়।

“তুই যখন ক্যাপ্টেন্সি করবি, অনেকেই তোকে অনেক কিছু বলতে পারে। কিন্তু যতক্ষণ তুই তোর গাট ফিলিংকে শুনবি, মন যেটা বলছে, সেটা করবি, সফল না হলেও তোর খারাপ লাগবে না যে অন্তত নিজের কথা শুনে হেরেছিস। কিন্তু অন্য কারও কথা শুনে হেরে গেলে প্রচণ্ড অস্বস্তি হবে যে কেন ওটা করতে গেলাম। আমি যতদিন ক্যাপ্টেন্সি করেছি, এটাই করেছি।”

“মন খুলে ক্যাপ্টেন্সি করবি। মন যেটা চায়, সেটা করবি। মুশফিক-রিয়াদ-সাকিবদের সঙ্গে আলোচনা তো করবিই। তবে গাট ফিলিং শুনবি। আমার বিশ্বাস, তোর যে নেতৃত্বগুণ আছে, তুই অনেক বেশি সফল হবি।”

২০১৫ সালের আরেকটি ঘটনা মনে করলেন তামিম। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে অসাধারণ পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এরপর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ফিফটি। তবে ভারত সিরিজের পরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে রান না পাওয়ায় তামিমের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন প্রভাবশালী কেউ।

“আমি আউট হওয়া মাত্রই একজন আপনাকে বলেছিল এটা নিশ্চিত করতে যে আমি যেন পরের ম্যাচে না খেলি। আপনি তখন বলেছিলেন, এটা হলে আপনি পদত্যাগ করবেন। আমি আশা করি ও প্রার্থনা করি, আমিও যেন ওই অবস্থায় যাই যেন অন্যদের জন্য এমন কথা বলতে পারি।”

বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরে মাশরাফি পরামর্শ দিলেন, ম্যাচ জেতানোর মত ক্রিকেটাদের সবসময় সমর্থন দিতে।

“তোকে ততটুকু ধৈর্য রাখতে হবে। আমার কথা হচ্ছে, তুই তোর দলকে যদি বোঝাতে পারিস, যে দলের জন্য সম্ভব সব করবি, তাহলে দলের সবাই তোর জন্য হলেও সেরাটা দেবে।”

“তুই যদি সৌম্য, লিটন, মুস্তাফিজদের পাশে থাকতে পারিস ওদের প্রয়োজনের সময়, ওরা কিন্তু শতভাগ ম্যাচ উইনার। ওরাও তাহলে বিশ্বাস পাবে। আমার মতে, তোরা আছিস, খুব ভালো হাতেই আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আরও এগিয়ে যাবে দল।”