লাবুশেনের টেস্ট অভিষেক ২০১৮ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ টেস্টে তেমন কিছু করতে পারেননি। ফিফটি ছিল কেবল একটি। জায়গা হারিয়েছিলেন একাদশে। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগটা এসে যায় হঠাৎ করেই।
গত অগাস্টে অ্যাশেজের লর্ডস টেস্টে স্টিভেন স্মিথ মাথায় আঘাত পেলে ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে মাঠে নামেন লাবুশেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকে নতুন পথে তার যাত্রা শুরু।
অ্যাশেজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ মিলিয়ে করেন টানা তিন সেঞ্চুরি। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন একটি ডাবল সেঞ্চুরিও। অ্যাশেজ থেকে শুরু করে পরের ১৫ ইনিংসে করেন ১২৪৯ রান।
গত বছরের শুরুতে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন ১১০তম স্থানে। অতিমানবীয় ফর্ম আর বিস্ময়কর উত্থানের প্রতিফলন পড়ে র্যাঙ্কিংয়ে। বছর শেষ করেন চারে থেকে। আর এখন আছেন তিনে। গত সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পেয়েছেন পূর্ণাঙ্গ চুক্তি।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে এই মুহূর্তে থমকে আছে ক্রিকেট। ২৫ বছর বয়সী লাবুশেন ফিরে তাকালেন জীবন বদলে যাওয়া বছরের দিকে।
“কোনো সন্দেহ নেই, আমার জন্য সত্যিই বিশেষ একটি বছর ছিল এটি। যেভাবে ব্যাপারগুলো ঘটেছে, তা সত্যিই দারুণ। সবকিছু ভেবে এখন হয়তো খুশি হওয়া যায়, গর্ব করা যায়। এরপর দেখতে হবে কীভাবে আমি আরও ভালো করতে পারি।”
“আমাকে এটি নিশ্চিত হতে হবে যে, খেলাটার জন্য যা প্রয়োজন, তা আমি বুঝতে পারছি এবং এর জন্য প্রস্তুত আছি, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারছি। এসব করার পর যদি রান পাওয়া যায়, তাহলে তা দারুণ। এরপরও যদি না পারি, তাহলে আমাকে চকবোর্ডে ফিরে যেতে হবে এবং নিজের খেলাটা আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে। শেখার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে।”
তার ব্যাটিং নিয়ে এখন অনেক কাটাছেঁড়া করবে প্রতিপক্ষ। সামনের দিনে সামলাতে হবে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। সে সব নিয়ে ভাবছেন এখন থেকেই।
“যখন আপনি প্রথম মৌসুম খেলে ফেলবেন, সেটা গ্রেড ক্রিকেট অথবা শেফিল্ড ক্রিকেট অথবা টেস্ট ক্রিকেট, যে পর্যায়েই হোক না কেন, মানুষ তখন আপনার সম্পর্কে জানবে, কীভাবে আপনি খেলেন সেটি জানবে। তখন তারা আপনার সম্পর্কে আরও গবেষণা করবে, আপনার খেলাটাকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।”
“আপনাকেও বুঝতে হবে তারা কী করতে চাইছে, আপনার দুর্বল জায়গাগুলো কোথায়, আপনার শক্তির জায়গা কোনটা, সেগুলোকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়... অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং পরের ধাপে পৌঁছাতে হবে।”
টেস্ট ক্রিকেট রাঙানোর পর এ বছরের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে ডাক পান ওয়ানডে দলে। নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ফিফটি। পরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে করেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ছোট্ট ক্যারিয়ারে বুঝতে পেরেছেন, এই সংস্করণে কোথায় বাড়াতে হবে মনোযোগ।
“সবসময় উন্নতি করা যায়। ওয়ানডেতে ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে আমাকে আরও ভালো করতে হবে, বাউন্ডারির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ওয়ানডের সৌন্দর্য এটিই। নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া যাবে না। অবশ্যই চাইলে খুশি হওয়া যায় কিন্তু আরও ভালো করতে হবে। সর্বোচ্চটা বের করতে নিজেকে তাতিয়ে রাখতে হবে।”
এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি লাবুশেনের জন্য অনেক দূরের পথ। এই সংস্করণে তিনি কেবল ১০টি ম্যাচ খেলেছেন ব্রিসবেন হিটের হয়ে। জাতীয় দলের হয়ে সুযোগ যে কম, সেটা ভালো করেই জানেন। তবুও মনের কোণে আছে তিন সংস্করণেই দেশের হয়ে নিয়মিত খেলার আশা।
“আমি কখনোই নিজেকে দুই ফরম্যাটে আবদ্ধ করতে চাই না। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলার ইচ্ছা আছে। সূচি অনুযায়ী এখন খুব বেশি সুযোগ হয়তো নেই। আপাতত ওয়ানডে ও টেস্টে রান করে যেতে চাই। এরপর যদি সুযোগ পাই, অবশ্যই কাজে লাগানোর চেষ্টা থাকবে।”