টেন্ডুলকার ভেবেছিলেন, অভিষেক ম্যাচই তার শেষ

দুই যুগের ক্যারিয়ারে খেলেছেন দুইশ টেস্ট। টেস্ট ও ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে করেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি। আরও কত সব রেকর্ডে সমৃদ্ধ শচিন টেন্ডুলকারের ক্যারিয়ার। অথচ অভিষেক টেস্টের সময় তিনি নিজেই ভেবেছিলেন, এই শেষ। আর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ আসবে না!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2020, 05:57 AM
Updated : 26 April 2020, 05:57 AM

টেন্ডুলকারের টেস্ট অভিষেক ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে। করাচিতে ভারত-পকিস্তান সিরিজের প্রথম টেস্ট ছিল সেটি। পাকিস্তানের পেস আক্রমণ ওই ম্যাচে ছিল দুর্দান্ত। ওয়াসিম আকরাম ও ইমরান খানের সঙ্গে ছিলেন ওই ম্যাচে অভিষিক্ত ফাস্ট বোলার ওয়াকার ইউনিস। স্পিনে ছিলেন কিংবদন্তি আব্দুল কাদির।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক, প্রতিপক্ষের অমন খুনে বোলিং আক্রমণ। তার ওপর, দলের অবস্থাও ছিল খারাপ। টেস্ট ক্রিকেটে টেন্ডুলকার প্রথমবার যখন উইকেটে গেলেন, ৪১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে ভারত। আগুন ঝরাচ্ছিলেন ওয়াসিম ও ওয়াকার।

তখনও কৈশোরে থাকা শচিন পারেননি কোনো রূপকথা উপহার দিতে। ওয়াসিম ও ওয়াকারের পেস ও বাউন্স বেশ ভুগিয়েছে তাকে। ওয়াকারের বলে বোল্ড হয়েছিলেন ২৪ বলে ১৫ রান করে।

এরপরই তার মনে হয়েছিল, এই বুঝি ক্যারিয়ার শেষ! শুক্রবার জীবনের ইনিংসে ৪৭ বছর পূর্ণ করা ভারতীয় কিংবদন্তি স্কাই স্পোর্টসের ‘নাসের মিটস শচিন’ অনুষ্ঠানে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনের সঙ্গে আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ করলেন অভিষেক টেস্টের।

“আমি কিছু বুঝেই উঠতে পারছিলাম না, এটা স্বীকার করতেই হবে। প্রথম টেস্ট খেলেছিলাম যেন আমি স্কুল ম্যাচ খেলছি। ওয়াসিম ও ওয়াকার খুব জোরে বল করছিল, শর্ট বল করছিল। তাদের পক্ষে সম্ভব, ভয়ঙ্কর এমন সবকিছুই করছিল তারা। আগে কখনও এরকম অভিজ্ঞতা আমার হয়নি। প্রথম ইনিংস তাই সুখকর ছিল না।”

“মাঝে মধ্যেই আমি ওদের পেস ও বাউন্সে পরাস্ত হচ্ছিলাম। ১৫ রানে আউট হয়ে যখন ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটছিলাম, খুব বিব্রত লাগছিল। মনে হচ্ছিল, ‘এটা তুমি কী করলে, কেন তুমি এভাবে খেললে...।’ ড্রেসিংরুমে ঢুকে সোজা বাথরুমে চলে যাই, প্রায় কেঁদেই ফেলেছিলাম।”

টেন্ডুলকারের মনের ভেতর তখন চলছিল ঝড়। কত ভাবনা খেলা করছিল তার মাথায়, জানালেন সেসবও।

“মনে হচ্ছিল, আমি অথৈ সাগরে পড়েছি। নিজের দিকে তাকিয়ে বলছিলাম, ‘মনে হয় এটিই তোমার প্রথম ও শেষ ম্যাচ।’ কেবলই ভাবছিলাম, এই পর্যায়ে খেলার জন্য যথেষ্ট ভালো আমি নই। খুবই হতাশ হয়েছিলাম, খুব ছোট মনে হচ্ছিল নিজেকে।”

অভিষেক ইনিংস নিয়ে তখন সতীর্থ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয় টেন্ডুলকারের। সেসময় শাস্ত্রীর একটি উপদেশই বদলে দিয়েছিল তার ভাবনা।

“রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে আমার যে কথা হয়েছিল, এখনও মনে আছে। রবি বলল, ‘তুমি এমনভাবে খেলেছো যেন এটি একটি স্কুল ম্যাচ। তুমি খেলছো সেরা বোলারদের বিপক্ষে, তাদের সামর্থ্য ও স্কিলকে তোমার সমীহ করতে হবে।”

“তখন আমি রবিকে বললাম, ‘আমি ওদের পেসে পরাস্ত হয়েছি।’ রবি শুনে বলল, ‘অনেকের ক্ষেত্রেই সেটি হয়েছে, চিন্তার কিছু নেই। উইকেটে গিয়ে তোমাকে শুধু আধ ঘণ্টা সময় কাটাতে হবে, তাহলেই তাদের গতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এরপর সবকিছু আপনাআপনি ঠিক হতে থাকবে।”

শাস্ত্রীর উপদেশ ভালোভাবেই কাজে লেগেছিল টেন্ডুলকারের। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ফয়সালাবাদে পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। প্রথম ইনিংসে ১৭২ বলে করেছিলেন ৫৯ রান।

“যখন ফয়সালাবাদে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য আমাকে নেওয়া হলো, তখন একটি ব্যাপারই শুধু আমার মাথায় ছিল, আমি স্কোরবোর্ডের দিকে তাকব না। আমি শুধু ঘড়ির দিকে তাকাব এবং রান করা নিয়ে চিন্তা করব না। আধ ঘণ্টা ব্যাটিং করার পর সত্যিই আমি স্বস্তি অনুভব করছিলাম। ৫৯ রান করেছিলাম, এরপর থেকে সবকিছু বদলাতে শুরু করল।”

ওই সিরিজের শেষ টেস্টে ওয়াকারের বলে নাক ফাটার পরও খেলে গিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন টেন্ডুলকার। এরপর তো সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উপহার দিয়েছেন বিস্ময়ের পর বিস্ময়।